একজন উদ্ভাবনী উদ্যোক্তা এবং প্রকাশকের ইতিকথা

বলা হয় একজন মানুষ তার চোখের আকারে নয়, বরং তার স্বদৃষ্ট স্বপ্নের আকারে বড় হয়। বড় হওয়ার ইচ্ছে, আবেগ, অনুপ্রেরণা সেই সাথে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ধারাবাহিকতা, একজন রিক্ত হস্ত মানুষকেও পৌঁছে দিতে পারে সফলতার চুড়ান্ত সীমানায়। যে সীমানায় বসে উপভোগ করা যায় পেছনে ফেলে আসা দুঃসহনীয় দিনের স্মৃতি কিংবা রোমন্থন করা যায় ক্লান্তিহীন জীবন সংগ্রামের সেই মুহর্তগুলোকে।

গোমতী নদীর তীর ঘেঁষে বেড়ে উঠা একজন সাধারণ যুবক। প্রকৌশলী পিতা এবং শিক্ষিকা মাতার ঘরে বেড়ে উঠার গতি যে ঘরের পাশে নদীর প্রবাহিত স্রোতধারাকেও হার মানাবে তা হয়তো বলা বাহুল্য। খুব ছোটবেলায় মাধ্যমিক এর কোনো এক শ্রেণিতে, ছাত্র শিক্ষক কথামালার আড্ডায় তাকে মঞ্চে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কি হতে চাও বড় হয়ে? নির্ভাবনায়, বিনা বিলম্বে এক লহমায় শিশুটি বলে উঠলো ‘আমি শক্তিমান হতে চাই’। কথাটি শুনেই পুরো ক্লাস হো হো করে হেসে উঠলো। বালখিল্যের শিশুমন তখনও জানতো কেবল শক্তিমান হলেই টিভির পর্দায় দেখানো কাহিনীর মতো বাস্তবেও মানুষের জন্য ত্রাণকর্তা হয়ে উঠা যায়।

হ্যা! বলছিলাম নাছির উদ্দিন পাটোয়ারীর কথা। যিনি একধারে একজন সম্পাদক, একজন উদ্যোগী ব্যাবসায়ী সেই সাথে কয়েক শত তরুণ উদ্যেক্তার অনুপ্রেরনা। যার তারুণ্য, শক্তি যোগায় দিশাহীন হয়ে পড়া সেই সব যুবকদের যারা কখনই হয়তো উদ্দ্যোমী হতেন না, অগ্রগামী হতেন না উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে। তারাও আজ স্বপ্ন দেখে, সাহস করে ঝুঁকি নেয়ার। আসুন জেনে নিই দেশের বেশ কয়েকটা উদ্যোগী সংগঠন উদাহরণ টেনে নিয়ে যার আঙ্গুল টেনে উদাহরণ দেয়। যার গৃহীত উদ্যোগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুকরনীয় ভেবে পথ চলতে নির্দেশনা দেয়, তার ব্যাপারে কিছু কথা।

কুমিল্লা জেলার মোচাগড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করে চলে আসেন রাজধানী শহর ঢাকায়। এখান থেকেই শুরু করেন জীবনের পরবর্তী পদক্ষেপের সূচনা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এগিয়ে নিতে পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা অতঃপর স্নাতক সম্পন্ন করার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন তথ্য ও প্রযুক্তির সম্ভাবনাময় দুয়ারে। শুরুতে ছোট দাগের ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে শুরু করা ক্যারিয়ার, উত্থান ও পতনের ধাক্কা সামলে মেলে বসে নানাবিধ প্রয়োগীয় প্রযুক্তি ও বিষয় ভিত্তিক বস্তুকে কেন্দ্র করে।

বার্তা বাজার তার গৃহীত প্রথম পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হলেও আদতে এর পূর্বেই তার পদচারনা ছিলো পর্যটন কেন্দ্রিক অনলাইন সার্ভিস ‘ট্রাভেল হলিডে বিডি’ নামক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। বহুল ভাবে পরিচিতি না পেলেও কর্পোরেট জগতে তা নিঃসন্দেহে আস্থা ও ভরসা কুড়িয়েছিলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে।

বর্তমান শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শুরুর দিকে, যখন তথ্য ও প্রযুক্তি অবাধ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় একজন সহযোগী ফ্রিল্যান্সারের সহায়তায় যাত্রা শুরু করে, দেশের সর্ব প্রথম রেজিষ্ট্রেশনপ্রাপ্ত অনলাইন পোর্টাল ‘বার্তা বাজার’। যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো মানবিক দৃষ্টিতে একটি গণমাধ্যমকে নিপীড়িত জনগনের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছে দেয়া। দেশের জনগনের অধিকার আদায়ের জন্য একটি গণমাধ্যম হিসেবে কন্ঠ উঁচু করে নিজের দেশের ন্যয্য প্রাপ্যতা, জনপ্রতিনিধি কিংবা রাষ্ট্রের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে জনগনের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া। সময়ের প্রতিচ্ছবি মূল প্রতিপাদ্যে যে বার্তা বাজারের পথচলা প্রায় একদশক। সে বার্তা বাজারের সফলতার ঝুলি দেখে ইর্ষান্বিত হবেন না এমন গণমাধ্যম কর্মী খুব নগন্য। ঘাত প্রতিঘাতের করাল গ্রাসে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত একটি গণমাধ্যম কিভাবে এতোটা দৃঢ়চেতা মনোবলে নিজের হাল আকড়ে ধরে আছে তা স্বচক্ষে না দেখলে হয়তো বিশ্বাস করা কঠিন।

তথ্য ও প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের যুগে, সাইবার সিকিউরিটি নলেজ এবং আইসিটি ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক আঙ্গিকে। দেশ ও দেশের বাহিরের একাধিক প্রতিষ্ঠানকে অনলাইন সেবা প্রদান করতে তিনি গঠন করেন একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। যা আই.সি.টি বাজার নামে পরিচিত। দেশের আইসিটি ডেভলেপমেন্টকে কেন্দ্র করে আইসিটি বাজারের অর্জিত সুনাম এবং বৈদেশিক রেমিটেন্স, আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিতে আগত নতুনদের জন্য উদাহরন তৈরী করেছে নিঃসন্দেহে।

স্থাপন করেন, একটি চামড়াজাত দ্রব্য উৎপাদন, বিক্রয় ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ‘লেদার প্রো’। যা একাধারে ভূমিকা রাখছে ই-কমার্স এবং এফ-কমার্সে জড়িত সকল চামড়া জাত দ্রব্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাদার ভেন্ডর হিসেবে। দেশের প্রায় অর্ধ শতাধিক প্রতিষ্ঠান যারা ই-কমার্সের মাধ্যমে চামড়াজাতদ্রব্য ও তার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের বাজার তৈরী করেছেন এবং স্বল্প মূল্যে পৌঁছে দিচ্ছেন গ্রাহকের হাতের মুঠোয় তাদের সকলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে একাধারে ত্রিমাতৃক ভূমিকায় নিজেকে এবং নিজের প্রতিষ্ঠানকে অবতীর্ন করেছেন

পর্যটন শিল্পকে আরো বৃহৎ পরিসরে এবং সহজ পরিসেবায়, প্রতিটি মানুষের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রতিষ্ঠিত করেন ট্রিপ৭১ নামক একটি ট্রাভেল বেইজ ওটিট প্লাটফর্ম। যার মাধ্যমে খুব স্বল্প আয়ের একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা এজেন্সির দারস্থ না হয়ে, সাধারণ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিজের স্মার্ট ফোনকে কেন্দ্র করে নিজেই হয়ে উঠতে পারেন নিজের ট্রাভেল প্ল্যানার।

সত্যিই এদের মতো কিছু উদ্দ্যেক্তার জন্যই এ দেশকে সম্ভাবনার দেশ বলা হয়। এবং এদের অনুপ্রেরণায় উজ্জিবিত হয়ে নিয়োজিত হতে ইচ্ছে হয় দেশের সেবায় মানুষের সেবায়। একটা সময় কথা ও কাজের সাথে মিলিয়ে যাপিত জীবন ধারণকারী মানুষদের অভাব বোধ হলেও এখন মনে হয় এই সংখ্যাটা দিনে দিনে কমছে। সেই সাথে কমে আসছে হতাশাব্যঞ্জক মনোভাবী মানুষের সংখ্যা। এমন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক যে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে একজন সুনাগরিক বসবাস করে।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর