নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম

কারণ ছাড়াই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। কখনো বাড়ছে চাল-ডাল ও তেলের দাম, কখনো মাছ মাংস, কখনোবা কাঁচা সবজি। যা বাড়ছে তা আর কমছে না। এতে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তে কোনো আঁচ না লাগলেও নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের মানুষের। বাজারে গিয়ে চাহিদা ও সামর্থ্যরে তাল মেলাতে পারছেন না তারা। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এর পেছনে অসাধু কিছু ব্যবসায়ীর কারসাজি থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। এদিকে, বাজারের লাগাম টেনে ধরার জন্য চলছে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ।

সম্প্রতি ক্যাবের এক গবেষণায় জানা যায়, ২০১৮ সালেই কেবল ঢাকায় জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে ৬ শতাংশ। পণ্য ও সেবায় দাম বেড়েছে ৫.১৭ শতাংশ। আর এসব বাড়তি খরচের শিকার হচ্ছেন দেশের ১০ কোটি সাধারণ মানুষ। যাদের আয় দৈনিক ২ ডলারেরও কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন কমে যাওয়ায় ডিম, মাছ, মাংসসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। এছাড়া সম্প্রতি বৃষ্টিতে ফসলহানির কারণে সবজির দাম বেড়েছে বলে জানান তারা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বাজার ব্যবস্থার ওপর সরকারের ‘নিয়ন্ত্রণ নেই’।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার অসহায় শিকার রিকশাচালক হুমায়ুন। থাকেন তেজগাঁও এলাকায়। তিনবেলা পেটপুরে খাওয়াই তার জন্য এখন বড় ব্যাপার তার। তিনি বলেন, আগে যে টাকা গ্রামে পাঠাতে পারতেন এখন তা পারছেন না কারণ এখন নিজের খাওয়ার খরচই বেড়ে গেছে। তিন বেলা পেটপুরে খেতে চাইলে আরো কম টাকা বাড়ি পাঠাতে হবে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন হাবিব ওয়াহিদ। তিনি বলেন, ‘বাজারে এলে আমার মাথা ঘোরে। হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, মুরগি ও ডিমের ক্ষেত্রে দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখছি না। তবে কেউ অতি মুনাফা করার জন্য দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। গরুর মাংসের ক্ষেত্রে অতি মুনাফা লাভ করতেই দাম বাড়ান হয়েছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল আলম বলেন, গরু বেচাকেনার ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির হিড়িক পড়ে গেছে। ইজারার ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত দাম তা মানা হয় না। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে আবেদন করেছিলাম। কয়েক দিন মাংস বিক্রি করা বন্ধও রেখেছিলাম। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। সরবরাহের ঘাটতির কারণে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে।

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুই মাস আগে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৪৮০ টাকা কেজি। আর এখন ৫২০ টাকার নিচে গরুর মাংস পাওয়া যায় না। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১২০ টাকা বিক্রির স্থির থাকলেও গত দুই মাস থেকে দাম বাড়ছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। একই অবস্থা কক ও দেশি মুরগির ক্ষেত্রেও। পাকিস্তানি কক মুরগির দাম ৬০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। আর দেশি মুরগি মানভেদে পিস প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির ডিম হালি ২৮-৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৩৮ টাকায়। এছাড়া হাসের ডিম হালি প্রতি ১০-১২ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা।

এদিকে মুদি পণ্যের বাজারে চাল, ডালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে ভোজ্যতেল, রসুন ও মসলার দাম। বাজারে খোলা ও প্যাকেটজাত তেলের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। এখন খোলা সয়াবিন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯০ টাকায়, বোতলজাত সয়াবিন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকায়। পাশাপাশি বেড়েছে এলাচ ও দারুচিনির দাম। এলাচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০০ টাকা। দারুচিনি কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া দেশি রসুনের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দাম চড়েছে আমদানি করা চীনা রসুনের ওপর। চীনা রসুনের দাম গত দুই মাসে ৫০ টাকা কেজিপ্রতি বেড়ে এখন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে চালের দাম কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা কমেছে।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন আসা প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজি ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সজনে। মানভেদে প্রতি কেজি সজনে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। প্রতি কেজি বরবটি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। বাজারভেদে প্রতি কেজি পটোল, করলা ও উচ্ছে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। এছাড়া ঢেঁড়স, কচুরলতি, লাউ, ঝিঙা, ধুন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর দাম বাড়ার তালিকায় থাকা শসার কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। শিমের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।

সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, শীতের সবজি শেষ হয়ে আসায় ফুলকপি, শিম, লাউয়ের দাম বেড়েছে। আর পটোল, বরবটি, ঢেঁড়স বাজারে নতুন আসায় দাম একটু বেশি। কিছুদিন গেলে এগুলোর দাম কমে যাবে। তবে অন্যান্য সবজির দাম কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই।

অন্যদিকে মাছের দাম সাধারণ মানুষের নাগারের বাইরে। সব থেকে কম দামে বিক্রি হয়েছে তেলাপিয়া। আগের সপ্তাহের মতো তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, পাঙ্গাশ ২০০-২২০, রুই ৩৫০-৬০০, পাবদা ৬০০-৭০০, টেংরা ৭০০-৮০০, শিং চাষের ৫০০-৬০০, বোয়াল ৫০০-৮০০, চিতল ৫০০-৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার সংস্থা ক্যাবের একটি গবেষণা প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গেল এক বছরে সব ধরনের চালের গড় দাম ৮.৯১ শতাংশ, ডালের দাম ১৭ শতাংশ, তেলের দাম ২ শতাংশ, মসলার দাম ২২ শতাংশ ও শাকসবজির দামও প্রায় ১১ শতাংশ বেড়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর