সাতক্ষীরায় জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ

শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: প্রকাশ্য দিবালোকে সাতক্ষীরা পৌরসভার সচীবের নেতৃত্বে পাঁচজন পৌর কাউন্সিলরের সহযোগিতায় জমি জবরদখলের চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের মৃত আবুল হাশেম খানের ছেলে ফখরুল আহম্মেদ খান সাগর।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করে ফকরুল আহম্মেদ খান সাগর বলেন, পলাশপোল চৌধুরি পাড়ায় ১৯২৬ সালের ২৯ অক্টোবর জাবদান বিবির কাছ থেকে ৩৯৫১ নং দলিল মুলে ৬২০৮ দাগ ৩ দশমিক ৬৪ একর ও ৬২০৯ দাগ দশমিক ৩৪ একর পুকুর কেনেন আমার দাদা আক্কাজ আহম্মেদ খান ও তার ভাই আলী আহম্মেদ খান। জালিয়াতির মাধ্যমে এসএ রেকর্ড নিজেকে জমির মালিক ও একক ওয়ারেশ দেখিয়ে দু’ দাগের ৩.৯৮ একরের মধ্যে ৩ দশমিক ৮০ একর জমি বিক্রি করেন আলী আহম্মেদ খান।

আমির আলী ৬২০৯ দাগের ৩৪ শতক পুকুরসহ মোট ৬৫ শতক জমি কেনেন আলী আহম্মেদের কাছ থেকে। জমির রেকর্ড অনুযায়ি ১৭ শতক পুকুরের অংশের মালিক হন আলী আহম্মেদ। যদিও আমির আলীর কেনা সমগ্র পুকুর থেকে আট শতক স্টেডিয়াম তৈরির জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। আট শতক অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপুরন বাবদ সরকারি টাকা নেন আমির আলী। তা হলে আলী আহম্মেদের কাছ থেকে পুকুরের অংশ কেনার পর আমির আলীর ভাগে থাকে সাড়ে আট শতক। অথচ ২০১১ সালে আমির আলীর কাছ থেকে পুকুরের অংশ সাড়ে আট শতকের স্থালে সাতক্ষীরা পৌরসভার সচীব সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সোনিয়া খাতুন, হিসাব রক্ষক জোহর আলীর স্ত্রী আম্বিয়া খাতুনের নামে ও অবসরপ্রাপ্ত সহকারি প্রকৌশলী এমএম নূর মোহাম্মদ সাড়ে ১৬ শতক পুকুরের অংশ কিনে কখনোই দখলে যাননি।

পৌরসভার সচীব সাইফুল ইসলাম, জোহর আলী ও নুর মোহাম্মদ কিছু দিন আগে দলিল মূলে জমি দখলে যেতে চাইলে তারা সাড়ে আট শতকের বেশি জমি পাবেন না বলে তাদেরকে অবহিত করি। বিষয়টি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হলে তিনি বাদি হয় সাতক্ষীরা সদর সহকারি জজ আদালতে বাটোয়ারা মামলা করেন। জমি জবরদখলের চেষ্টা করায় সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১৪৫ ধারার মামলা করলে সদর সহকারি ভূমি কমিশনার বিরোধপূর্ণ জমি উভয়পক্ষের দখলে বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। বিবাদী পক্ষ সাইফুল ইসলামের স্ত্রীসহ তিনজন জবাব দাখিলের জন্য আবেদন করলে পরবর্তী ১৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়। সোনিয়া, আম্বিয়া ও নূর মোহাম্মদের নামে দলিল অনুযায়ি জমি নামপত্তন হওয়ায় তিনি সদর সহকারি ভূমি কমিশনার অফিসে নামপত্তন বাতিলের জন্য ১৫০ ধারায় আবেদন করেন। তামাদির কারণে আবেদন খারিজ হলে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর আদালতে আপিল (১২৩/১৮) করেন। আদালত মামলা চলমান থাকায় দেওয়ানী মামলার কার্যক্রম নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ১২৩/১৮ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, আদালতে মামলা থাকার পরও পৌরসভার কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপা, সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন মিলে এড. কুদরত ই মজিদের মাধ্যমে তারা জমির অংশ নিয়ে বসাবসি করেন। কুদরত ই মজিদ অংশ অনুযায়ি সাইফুল ইসলামসহ তিন জন আমির আলীর কাছ থেকে যে পরিমান জমি কিনেছেন তা যথাযথ হয়নি বলে জানিয়ে দেন। এরপরও সাতক্ষীরা পৌরসভায় একটানা ১৮ বছরের রাম রাজত্ব করা সচীব সাইফুল ইসলাম প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে পৌরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে জমি জবরদখলের উদ্যোগ নেন। এর জের ধরে শুক্রবার সকালে ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার সৈয়দ মাহমদু পাপা, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার ফিরোজ আহম্মেদ, ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার সেলিম হোসেন, ৯ নং ওয়ার্ড শফিক উদ্দ দৌলা সাগর, ফারহা দিবা খান সাথীসহ পৌরসভার কয়েকজন মাষ্টার রোলে কর্মরত কর্মীদের উপস্থিতিতে জমি দখলের জন্য শ্রমিক দিয়ে সিমেন্টের পিলার বসিয়ে পরে কাটা তারের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করেন সাইফুল ইসলাম। বাধা দিতে গেলে কাউন্সিলর সাথী, সৈয়দ মাহমুদ পাপা, আব্দুস সেলিম, পৌরসভার কর্মচারী শামু, শাহীন, জামসেদ তাকে প্রকাশ্য মারপিট করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করান। এসময় তিনি বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করলে সদর থানার উপপরিদর্শক হাজ্জাজ মাহমুদ ঘটনাস্থলে যেয়ে জবরদখলকারিদের সঙ্গে একান্ত কথা বলেন। তার জমি দখল ঠেকাতে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করলেও পুলিশ তাদের পক্ষ নিয়ে দখলকারিদের পক্ষে অবস্থান নেন। এছাড়া জমি কিনেছেন সচিব সাইফুল ইসলাম কিন্তু সেই জমি দখলকরতে যাওয়ার কোন নিয়ম কাউন্সিলার বা পৌর কর্তৃপক্ষের নেই। তারপরও তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আদালত বিচারাধীন সম্পত্তিতে কাটা তারের বেড়া দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জমি জবর দখলের চেষ্টাকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আবুল কাশেম, মারুফ হোসেন, মোঃ আজিজুল হাকিম ও আব্দুর রহমান বাবু।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পৌরসভার সচীব সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি তার কেনা জমিতে ঘেরা দিয়েছেন। সাগরকে মারপিটের অভিযোগ ঠিক নয়। পৌর কাউন্সিলারদের পক্ষে শফিক উদ্দ দৌলা সাগর বলেন, সচীবের আহ্বানে তারা কয়েকজন কাউন্সিলার এসেছিলেন জমি দেখতে। এ সময় কাউকে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে বলে তার জানা নেই।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর