বিদ্যুতের সুইচের মতো অন-অফ হবে দেহের আণবিক সুইচ!

নোবেলজয়ী ডাচ রসায়ন বিজ্ঞানী বার্নার্ড এল ফেরিঙ্গা। গ্রনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক ২০১৬ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাঁ-পিয়ের সভেজ এবং স্যার জে ফ্রেসার স্টোডার্টের সঙ্গে।

তিনি এখন কলকাতায়। সেখানকার এক সেমিনারের প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে ফেরিঙ্গা বললেন, ‘বিদ্যুতের সুইচ যেমন হয়, আমরা বানাচ্ছি তেমনই আণবিক সুইচ। আমাদের দেহে অহর্নিশ কাজ করছে নানা রকম জৈবিক সুইচ। আমি অন্য কাউকে দেখছি, অন্য কেউও যে আমাকে দেখছেন তার মূলে ওই হরেক সুইচের কারসাজি। আমরা বানাতে চাই এমন সুইচ, যা অন-অফ হবে আলোর খেলায়।’

সিলিকন চিপ যেমন কাজ করে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে, তেমনই ওই আণবিক সুইচও কাজ করবে তথ্য জমিয়ে রাখার বেলায়। একটা সিডি-র মধ্যে ওই ভাবে কত তথ্য জমিয়ে রাখা যায়? উদাহরণ দিয়ে ফেরিঙ্গা বললেন, ‘হাজার হাজার গান। এতগুলো গান যে, ছ’-সাত পুরুষ ধরে শুনলেও ঝুলি ফুরোবে না।’

ফেরিঙ্গা এক সময়ে কাজ করতেন রসায়ন শিল্পের গবেষণাগারে। তবু তার মন পড়ে থাকত বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবশেষে সেখানেই যোগদান। বললেন, ‘রাজনীতিকদের কথায় ভুলবেন না। ভুলবেন না শিল্প-মালিকদের কথাতেও। মনে রাখবেন, মৌলিক গবেষণায় গুরুত্ব কম দিলে শিল্পেরই ক্ষতি। রাজনীতিকেরা কেবল আজ নিয়ে চিন্তিত, কালকের কথা প্রায়ই ভুলে যান। আজকের গবেষণা কিন্তু কালকের জীবন। এ জন্য মৌলিক গবেষণায় উৎসাহ হারানো, বিনিয়োগ কমানো যে কোনো দেশের পক্ষেই সর্বনাশ ডেকে আনে।’

তার জীবনে শিক্ষকদের ভূমিকা কেমন? প্রশ্নের উত্তরে ফেরিঙ্গা বললেন, ‘আমি এখনো ভুলতে পারি না কয়েক জনের কথা। যেমন, ছোটবেলায় আমার কেমিস্ট্রি টিচার। মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন আমায়। কোন জিনিস কেন লাল, কোনওটা কেন নীল রঙের, কোনওটা কেন নরম, আবার লোহার মতো শক্ত কেন— সে সব আমাকে বুঝিয়ে দিতেন তিনি। এক মহিলা পড়াতেন অঙ্ক। যে বিষয় ফর্মুলায়-ফর্মুলায় কন্টঙ্কিত, তা উনি জলবৎ তরল করে বোঝাতেন। আমার মধ্যে গণিতের প্রতি ভালবাসা উনিই জাগিয়ে তুলেছিলেন। গত বছর দেখা হয়েছিল আমাদের ক্লাসের সেই কেমিস্ট্রি টিচারের সঙ্গে। উনার বয়স এখন ৮০ ছুঁইছুঁই। আমাকে কী বললেন জানেন? বললেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন সেই দিনের, যে দিন পৃথিবীর প্রতিটি ছাত্র অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য অন্তত এক জন শিক্ষক পাবে।’

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকদের উদ্দেশ্যে ফেরিঙ্গা বললেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করবেন প্রশ্ন করতে। তা সেই প্রশ্ন আপাতদৃষ্টিতে যতই বোকা-বোকা ঠেকুক। মনে রাখবেন, ছাত্রদের প্রশ্ন থেকেই অনেক আবিষ্কারের ক্লু মেলে। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরে আমাকে প্রায়ই স্কুলে-স্কুলে যেতে হয় বক্তৃতা দিতে। এক বার একটি স্কুলে গিয়েছি। সেখানে দশ-এগারো বছরের একটি ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা, আপনারা যে আণবিক মোটর বানিয়েছেন, তা ট্র্যাফিক জ্যামে পড়ে? ল্যাবরেটরিতে আমরা এখন শুধু মোটর নয়, তা যাতায়াতের জন্য এমন পথও বানাচ্ছি, যাতে তা মসৃণ ভাবে চলাচল করতে পারে।’

সূত্র: আনন্দবাজার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর