এপ্রিল এতো নিষ্ঠুর কেন?

মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এক বর্বর সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যে গণহত্যার সূচনা করেছিল, পরবর্তী নয় মাস ধরে তা অব্যাহত ছিল। ঠিক তেমনি বাংলাদেশের করোনা ভাইরাসের সূচনালগ্নে ২০২০ সালের ৮ মার্চ মাসে যাত্রা শুরু করে আরও কত কাল পর্যন্ত মানুষের জীবন কেড়ে নিবে তার উত্তর দেওয়া খুব সহজ কাজ নয়।

দেশে সংকটময় পরিস্থিতি তৈরী হয় মার্চে। সেটা ঘনীভূত হয়ে কেন্দ্র হয় এপ্রিলে। তার পর শক্তির মাত্রা অনুযায়ী হিসাবে চলতে থাকে। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে সেটাই প্রমাণিত হয়।

প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী সেকেন্ড এর পর মিনিট, মিনিটের পর ঘন্টা, ঘন্টার পর দিন, দিনের পর সপ্তাহ, সপ্তাহের পর মাস আর মাসের পর হয় বছর। এ ভাবেই সময় চলে যায় বাধাহীন ভাবে। এর মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা ব্যক্তির জীবনে বা জাতির জন্য বিশেষ কিছুর জন্য স্মৃতি হয়ে থাকে।

আমি ঠিক সেই সময়ের কথা বলছি যে সময়ে এত মৃত্যু, এত অশ্রু ও হাহকার এবং চারিদিকে শুধু বিপদ। পৃথিবীতে শুধু লাশের গন্ধ। প্রকৃতি তার আপন গতিতে ভাইরাসকে চালিয়ে যাচ্ছে তান্ডবলীলা।

এপ্রিল শেষে মে মাসের আগমনীতে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোতে কমতেছে বলে খবরের কাজে দেখা মেলে। আগামীতে ধীরে ধীরে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে থাকুক সেই কামনাই থাকবে।

বিশ্ববরেণ্য ইংরেজ কবি টি এস এলিয়েট ১৯২২ সালে তাঁর বিখ্যাত ‘দ্যা ওয়েস্ট ল্যান্ড’ কবিতায় লিখেছেন “এপ্রিল ইজ দ্যা ক্রুয়েলেস্ট মান্থ”।

নিরানব্বই বছর আগে পৃথিবীতে কি এমন ঘটেছিল যেটি এস এলিয়টকে লিখতে হয়েছিল? এপ্রিল নিষ্ঠুরতম মাস? তখনো কি জরা- ব্যাধি ও মহামারির নিষ্ঠুরতা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল জগৎ? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।

এপ্রিল মানে বসন্তের আগমনীর গান শুনায় কিন্তু এ যে মৃত্যুর মিছিলের মানুষের কান্নার গান। এই সময়ে গাছেরা পাতা হারায়। পথিকেরা বিশ্রাম নেওয়ার একটি পথ গাছের ছায়া হারায়। সৃর্য উত্তাপ্ত দাঁত দিয়ে কামড় বসায় প্রতিটি সময়। বসন্তের আগমনে ঠান্ঠাজনিত রোগব্যাধি।

করোনাকালীন সময় গুলো পৃথিবীর কঠিন সংকটের বাস্তবতা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে হয় তো গল্পের ইতিহাস মনে হবে।

কোভিড- ১৯ এর দাপট কবে শেষ হবে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বিজ্ঞানীদের পক্ষেও। প্রতি দিন খরব পাচ্ছি আক্রান্ত আর মৃত্যুর। হৃদয়ে জমা হতে থাকে দুঃসংবাদ।

আমি হারিয়েছি, “সৈয়দ আবুল মকসুদ” নামের আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব প্রিয় লেখক কলামিস্টকে। নিরুপায় হয়ে শোক ও সমবেদনার শ্রদ্ধাঞ্জলি লিখে। মনের ভিতরে হাজাও আশায় থেকে রইল, তিনি থাকলে হয় তো আরও সুন্দর সুন্দর শব্দ শিখতে পারতাম। ওনার লেখার মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো বুঝতে পারতাম।

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা হাতে আসলেই ৮ পৃষ্ঠায় দ্রুত চলে যাই মনে হয় আজ বুঝি সৈয়দ আবুল মকসুদ স্যারের কলামের লেখা প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু না তিনি যে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তিনি আর লিখবে না কোনো কিছুই।

গবেষণায় বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা পড়েই আছে এক টাকাও খরচ হয় নি! প্রথমে ভাবলে মনে হবে বাহ! কতটা দেশপ্রেমিক যে দেশের টাকা খরচ করতে এত কিপ্টামি করে স্বাস্থমন্ত্রণালয়।

করোনা ভাইরাস, চিকনগুনিয়া, ইবোলা ভাইরাস, জিকা ভাইরাস ও অন্যন্য ভাইরাস। নির্দিষ্ট কোনো রোগ নিয়ে জরিপের পাশাপাশি স্বাস্থ্য প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করার কথা।

এ জন্য শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কিন্তু গবেষণা না করে আমরা লেজ ধরেছি এ দেশে ব্যবসায়ী সংসদ সদস্যদের কম্পানির দিকে। মানুষের জীবন যখন বিপন্ন তখন মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করা কতটা মানবিক?

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী ২৩ মে থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। পূর্বের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ক্লাসে ফেরানোর আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার যে উদ্যোগটি নেয়া হয়েছিল সেটিতে অনেকটা ভাটা পড়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার যে স্বল্প সময় বাকি রয়েছে; এ ব্যবধানে তাদের সবাইকে টিকা দেয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে এখন অনিশ্চয়তা। স্বাধীনতার ৫০ বছরে কি এমন শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরী করতে পেরেছি যে দেশের মহামারিতে আমরা গবেষণা ব্যস্ত থাকতে পারি না? কেন করোনার টিকার ডোজ নিতে ভারত, রাশিয়া এবং চিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। ৫০ বছরে কি এমন কি শিক্ষা অর্জন করলাম এই মহামারিতে নিজেদের জীবন বাঁচাতে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানহীন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অন্ধকার থেকে আলোর পথ নিয়ে আনতে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে করোনার টিকা দিয়ে শ্রণি কক্ষে প্রবেশ করাতে হবে। আগামীতে জুন – জুলাই মাসে যে বাজেট শিক্ষার্থীবান্ধব বাজেট করার একান্ত প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষে ক্লাসের ব্যবস্থা করেই পরিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে না হলে শিক্ষার্থীর জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার হুমকি।

আমার করোনার দু বছরে৷ দুটি নিষ্ঠুরতম মাস এপ্রিল কে শেষ করছি। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে করোনার সংক্রমণ কমিয়ে আনতে মাস্ক পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বাঁচতে হলে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।জনস্বার্থে সহযোগিতার মনোভাব দৃঢ় করতে হবে।

লেখক:
রাশেদ ইসলাম, শিক্ষার্থী
জয়পুরহাট সরকারি কলেজ, জয়পুরহাট
সাংবাদিক ও কলামিস্ট

বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর