পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন

কলাপাড়া ও পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে বাঙালী ও চায়না শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে হতাহত ভাংচুর, হামলার ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। প্লান্টের সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিসিপিসিএলএর প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আগামি সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। বর্তমানে গোটা এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে ফের বিদ্যুত প্লান্ট এলাকা কর্মমুখর হয়ে উঠবে বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। ফের গতি আসবে কাজে বলেও তাদের মন্তব্য। প্লান্ট এলাকায় র‌্যাব, আর্মড পুলিশ এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। এক কথায় বলা যায় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতের হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষ একটি চিহ্নিত মধ্যস্বত্তভোগী চক্রকে দায়ী করেছেন। এচক্র বিনা কাগজপত্রে শ্রমিক সরবরাহ, প্লান্ট অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ উপকরণ সরবরাহের সাব ঠিকাদারী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এছাড়া প্লান্টের ভাঙ্গারি খ্যাত ব্যবহার অনুপযোগী লোহা-লক্কর প্লান্ট থেকে বাইরে নিয়ে বিক্রি করত। এমনসব বিভিন্ন পর্যায়ের চক্র শ্রমিক অসন্তোষ থেকে সকল অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। সাধারণ শ্রমিকরা বিকেলে দুর্ঘটনায় নিহত বাঙালী শ্রমিক সাবিন্দ্রের লাশ গুজবের খবরে প্রথম দফায় উত্তেজিত হতে পারে। যখন সাবিন্দ্রের লাশ হস্তান্তর করা হলো এরপরে মধ্য রাত অবধি হামলা-ভাংচুর করার কথা নয়। এমনকি রাতে সাধারণ শ্রমিকদের ওপর চিহ্নিত চক্রটিও হামলে পড়ে। তারা শ্রমিকদের পকেট হাতিয়ে মারধর করে মোবাইল সেট পর্যন্ত নিয়ে গেছে। প্লান্ট অভ্যন্তরে এ চক্র লুটপাট চালায়। সাধারণ মানুষ যারা জমি দিয়েছেন তাদের অনেকের মন্তব্য এ বছরের শেষের দিকে যে বিদ্যুত প্লান্ট উদ্বোধন করার সকল কাজ সম্পন্ন, সেখানে এমন পরিস্থিতি সহজভাবে মানার নয়। পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত ঘটনানোর ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে ক্ষতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে। অপরদিকে কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয় চীনা শ্রমিকরা লাথি মেরে বাঙালি শ্রমিককে ফেলে দিয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লারের ওপর থেকে বাঙালি শ্রমিক সাবিন্দ্র দাস নিচে পড়ে নিহতের ঘটনায় লাশ গুজবের খবরে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিদ্যুত কেন্দ্রের বয়লার এলাকার প্রকল্পের একটি অফিসসহ ক্যান্টিন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ওয়েল্ডার এবং পাশ্ববর্তী স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর চালান। এ সময় ক্রেন-বুলডোজারসহ কয়েকটি ভারি যন্ত্রপাতিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে রাতে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয় চীনা শ্রমিক ঝাং ইয়াং ফাং । তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র এলাকার সকল উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে বুধবার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি সেখানে বিদ্যুত কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেছেন। কর্মকর্তারাও তাঁকে সব বিষয় অবহিত করেন।

অপরদিকে তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের নিরাপত্তা সুপার ভাইজার গুরুতর জখম মোস্তাফিজুর রহমানকে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকালে ভর্তি করা হয়েছে। জখম হওয়া চীনা শ্রমিক লিন কু মু, ঝ্যাং হুয়া, ঝ্যাং সিং থান, ঝাং হু এবং জু ঝাংকে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রডের আঘাতে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়েছে। কারও হাত-পা লোহার আঘাতে ভেঙ্গে গেছে। বৃহস্পতিবার এ ছয় জনের শরীরে অস্ত্রপচার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর (বিসিপিসিএল) প্রকল্প পরিচালক শাহ আবদুল মাওলা জানান, কম্পিউটার বেইজড সার্ভার, ডিভাইসসহ অনেক মালামাল দুর্বৃত্তরা নিয়ে গেছে। পুরো এলাকা জুড়ে সব মালামাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। বহু জায়গায় বহু জিনিস ছিল। এ সবেরও ক্ষতি হয়েছে। কী ধরণের মালামাল খোয়া গেছে, তার হিসাব-নিকাশ চলছে। কেন এ ঘটনা ঘটল তাও খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, বিদ্যুত কেন্দ্রে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর