পুলিশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিক্ষুব্ধ শ্রমিক সমীপে

স্বভাবতই একটি সহিংসতা রাষ্ট্রযন্ত্রের বরাবরে সর্বোপরি কিছু প্রশ্নের উদ্ভব ঘটায়। এখানে সহিংসতা রাষ্ট্রীয় পোষকতায় কোনো সংস্থার মাধ্যমেই হোক কিংবা জনতার পক্ষ থেকে উঠে আসা ডান কিংবা বামপন্থি দলগুলোর দ্বারা ভুক্তভোগীর তালিকা অনুসন্ধান করলে, আহ্বান জানানো কোনো পক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি লক্ষ্য করা যায়নি কখনো। বরং সাধারণ জনতা সবসময় ব্যবহৃত হয়েছে কোন ব্যাক্তি কিংবা সংস্থার উদ্দেশ্য পুরণের হাতিয়ার হিসেবে।

প্রথমেই আলোচনা করে নিচ্ছি, পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের বিধি এবং তার নিয়ম তান্ত্রিক বৈধতা নিয়ে। যে ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে, সাবেক পুলিশ মহাপরিচালক একটি জাতীয় দৈনিকে দেয়া নিজ বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “গুলি করার আগে অবৈধ জনসমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ অনুরোধ জানাবে, তারপর কাজ না হলে জলকামান ব্যবহার করবে। এতে কাজ না হলে লাঠিপেটা করবে। মারমুখী জনতাকে যখন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না, তখন নিজের জীবন ও অস্ত্র রক্ষার জন্য গুলি চালাবে। একটি গুলি চালানোর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে দ্বিতীয় গুলি চালাবে। ”

এক্ষেত্রে যে আইনগুলোকে মূখ্য হিসেবে তুলে আনা হয়েছে তা হচ্ছে-
পুলিশ প্রবিধান ১৫৩, পি আর বি ১৯৪৩ এবং ১৮৬১ সালের ৫ নং আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করতে পারবে।

প্রবিধান ১৫৩ (ক) (i) অনুযায়ী পুলিশ ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষার অধিকার প্রয়োগ করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। (দণ্ডবিধি আইনের ৯৬-১০৬ ধারা)

প্রবিধান ১৫৩ (ক) (ii) অনুযায়ী পুলিশ বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। (ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭-১২৮ ধারা)

প্রবিধান ১৫৩ (ক) (iii) অনুযায়ী কোনো কোনো পরিস্থিতিতে পুলিশ গ্রেফতার কার্যকর করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। (ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬ ধারা)

প্রবিধান ১৫৩ (খ) অনুযায়ী ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের জন্য পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। এ অধিকার দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৯৬-১০৬ ধারায় সুরক্ষিত আছে।

এবার আসি তার ব্যাবহারিক প্রয়োগ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে। প্রথমেই বলতে চাই বিগত ২৬ শে মার্চ প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর আগমন এবং তাকে ঘিরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা যে ইতিমধ্যে পুরনো সব প্রয়োগ এবং তার ইতিহাসকে ছপিয়ে গিয়ে নতুন উচ্চতায় অবতীর্ণ হয়েছে তা বলা বাহুল্য। দুই ঘন্টায় প্রায় ১১’শ রাউন্ড গোলাবারুদ খরচের রেকর্ড সত্যিই নজির বিহীন। তার দু’দিন বাদেই চট্টগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা জোরদার মদদ দিয়েছে অস্ত্র ব্যবহারের বিধি এবং আইনগুলোকে আংশিক পাশ কাটিয়ে যাওয়ার পক্ষে।

এবার তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি বিষয়কে তুলে আনা হোক। যাতে করে কিছুটা হলেও আলোচ্য বিষয়ের উপর ভূমিকা টানা যায়। গত ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ঘটনা এখনো সকলের মধ্যে জীবন্ত। পাঁচ জন শ্রমিক নিহতসহ প্রায় অর্ধশত আহত। এদের মধ্যে শ্রমিক এবং পুলিশ উভয়ের আচরণ দুষ্টতাকে বিশ্লেষকরা প্রেক্ষিত ঘটনার জন্য দায়ী করলেও, ২০১৬ এবং ২০১৭ এর ঘটনাও বাঁশখালীর জনতা ভুলে যায়নি।

প্রায় সকল গণমাধ্যমকে দেখে গিয়েছে শ্রমিক তাদের শ্রম মূল্য এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত সুযোগ সুবিধাকে প্রধান করে কোনঠাসা প্রকৃতির বক্তব্য প্রদান করতে। আদতে মূল ঘটনার ধারে কাছেও কোনো গণমাধ্যমকে পৌঁছানোর ব্যাপারে আগ্রহী হতে দেখা যায় নি।

অথচ একই ঘটনার পুনোরাবৃত্তির দরুন, আরো বেশী পেশাদারিত্ব ও মননশীলতার পরিচয় দেয়ার সুযোগ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে ছিলো। এড়িয়ে যাওয়া বিষয়গুলো সামনে আনার প্রশ্ন তুললেই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিপুরণ কিংবা সাময়িক সমাধানমূলক কার্যক্রম পরিচালিত করে পুরো বিষয়কেই আলাদা খাতে প্রবাহিত করে দেয়া হয়। যা আদতে সংঘর্ষকে প্রশমিত না করে বরং ফুঁসে উঠতে সহায়তা করে।

এখানে প্রশ্ন তোলা যায় একাধিক অবিবেচ্য বিষয়গুলোকে সম্মূখে রেখে। আপাতদৃষ্টে এসব নিয়ে প্রথমে অগ্রণী আলোচনায় কে এগিয়ে সেটাই মূখ্য প্রদর্শনীয় হয়ে থাকলো।

লেখক- সম্পাদক ও প্রকাশক, বার্তা বাজার।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর