পুলিশ স্বামী-দেবরের বিরুদ্ধে মামলা, উল্টো তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল

শেরপুরের শ্রীবরদীতে যৌতুক নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ স্বামী-দেবরসহ পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে স্বামী-সংসারের আশায় একমাত্র সন্তানকে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও হেরে গেছেন লায়লা আরজুমান শান্তি নামে এক গৃহবধূ (৩২)। তদন্তে ‘সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ উল্লেখে প্রতিবেদনের বিষয়ে মামলার ফলাফল বাদী-ভিকটিম ওই গৃহবধূকে না জানিয়ে উল্টো তার বিরুদ্ধেই ‘মিথ্যা’ অভিযোগের কারণে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন সেই গৃহবধূ। তারপরও শেষ লড়াই করে যেতে চান ট্রাইব্যুনালে। এখন ট্রাইব্যুনালই তার একমাত্র ভরসা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের আদালত অঙ্গনে অনেকটা বিপর্যস্ত অবস্থায় কথা হয় ওই গৃহবধূর সাথে। ওইসময় তিনি আবেগতাড়িত হয়ে জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল মোতালেব প্রায় তাকে আপোষের কথা বলতেন। আমি তাতে সম্মত হলেও আসামীরা আমাকে সংসারে না নিয়ে টাকা-পয়সা দিয়ে আপোষ করতে চাওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি।

দু’দিন আগেও তদন্ত কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত তদন্ত তার অনুকূলেই রয়েছে। তবে সহযোগী আসামীদের বিষয়ে তার ভূমিকা প্রথম থেকেই ইতিবাচক ছিল না। তাই বলে ঘটনার বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাবার পরও আমাকে মামলার ফলাফল না জানিয়ে উল্টো আমার বিরুদ্ধেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে- এমনটা ভাবিনি কখনও।

তিনি প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আসামীরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, পুলিশ ও সরকারি চাকরিজীবী বলেই পার পেয়ে যাবেন ? তবে পুলিশের ওই প্রতিবেদনের বিরদ্ধে নারাজী আবেদন করে তিনি ট্রাইব্যুনালেই আসামীদের বিরুদ্ধে লড়ে যাবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার জানান, বাদীপক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকার পরও মামলাটির অপমৃত্যু ঘটানোর সমূহ চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে নানা ব্যাখ্যার নামে স্ববিরোধিতা ও তদন্তে অদক্ষতার বিষয়টিও ফুটে উঠেছে।

তার মতে, বর্তমান সময়ে পুলিশ আসামীর বিরুদ্ধে পুলিশী তদন্ত যতোটা সতর্কতা ও নিরপেক্ষতার সাথে হওয়া উচিত, এক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটে থাকার কারণেই হয়তো এমনটা হয়েছে। তবে পুলিশ প্রতিবেদনটি আগামী ৪ এপ্রিল নিম্ন আদালত থেকে এখন ট্রাইব্যুনালে বদলি হবে এবং সেখানে নারাজীর প্রেক্ষিতে প্রধান আসামীসহ সহযোগীদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গ্রহণের যথেষ্ট উপাদান ও সুযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারি ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবিতে শ্রীবরদী উপজেলার ঝগড়ারচর তিনানীপাড়া গ্রামের বাড়িতে শ্বশুর আব্দুল মোতালেবের প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় নেত্রকোণার কলমাকান্দা থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল স্বামী রফিকুল ইসলাম (৩৫), জামালপুরের ইসলামপুর থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল দেবর হামিদুল ইসলাম (৩০) ও শেরপুরের সরকারি চাকুরে অপর দেবর আমিনুল ইসলাম (৩৩) সহ পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ)/৩০ ধারায় ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলা ভেটি সর্দারপাড়া পৈত্রিক নিবাসের এক সন্তানের জননী গৃহবধূ লায়লা আরজুমান শান্তি।

এরপর ২০ জানুয়ারি শ্রীবরদী থানায় তা নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড হলে ২৩ জানুয়ারি দেবর হামিদুল ও আমিনুল নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে হাজতবাসে যায়। এরপর থেকেই মামলাটির বিষয়ে বেড়ে যায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ে আসামী পক্ষের নানা তদবির। অন্যদিকে আসামীদের তদবির ঠেকানোসহ মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে ওই গৃহবধূ কখনও একমাত্র সন্তান রওনক আহমেদ শ্রাবণ (১১), আবার কখনও অসুস্থ মাতা আক্তারুন বেওয়াকে সাথে নিয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনসহ দায়িত্বশীল বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান।

ঘটনার বিষয়ে স্বামীসহ অন্যান্যদের শাস্তিই তার চাওয়া ছিল না, বরং তার বড় চাওয়া ছিল একমাত্র সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সংসারে ফিরে যাওয়া। কিন্তু এরপরও হচ্ছিল না প্রতিকার। গ্রেফতার হচ্ছিল না প্রধান আসামী পাষ- স্বামী রফিকুল ইসলাম।

আর হাজত খাটার পরও বিভাগীয় শাস্তি হচ্ছিল না সরকারি চাকুরে ২ দেবরের। ওই অবস্থায় ২০ মার্চ বুধবার নিম্ন আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (মিথ্যা) দাখিল করেছে থানা পুলিশ।

তবে প্রতিবেদনটি ৮ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর