দুর্বার সাকিবে বাংলাদেশের রেকর্ড গড়া জয়

টনটনে সাকিব আল হাসানের অনবদ্য অলরাউন্ড পারফর্মেন্সে উইন্ডিজের বিপক্ষে সাত উইকেটের রেকর্ড গড়া জয় পেয়েছে টাইগাররা। এবার ৩২১ রান অতিক্রম করে জিতল সাকিব-তামিমরা, এর আগে গত বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ৩১৮ রান তাড়া করে জিতেছিল টাইগাররা।

বল হাতে দুই উইকেট পাওয়ার পর ব্যাট হাতেও ৯৯ বলে অপরাজিত ১২৪ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেছেন সাকিব। তাঁর এমন রাজকীয় পারফর্মেন্সে বিশ্বকাপে টিকে থাকার লড়াইয়ে এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বরাবরের মতই বেশ সাবধানে খেলেছেন তামিম ইকবাল। অপরদিকে দলের রান টেনে নেওয়ার দায়িত্ব সামলেছেন সৌম্য সরকার। সৌম্যের দৃঢ়তায় উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশ তুলেছে ৫২ রান।

২৩ বলে ২৯ রান করে সৌম্য ফেরার পর হাত খুলে খেলা শুরু করেছেন তামিম। সঙ্গী সাকিবও খেলছেন নিজের মতো। এ দুজনের হাত ধরে ১৩.৫ ওভারে দলীয় শতক পেয়েছে বাংলাদেশ।

ব্যক্তিগত ৪৮ রানে ফিরেছেন ভালো খেলতে থাকা তামিম। শেলডন কটরেলের দুর্দান্ত প্রচেষ্টায় রান আউট হয়ে ফিরেছেন তিনি। ৫৩ বলের ইনিংসে ছিল ছয়টি চারের মার। সাকিব-তামিম জুটি যোগ করেছে ৬৯ রান।

তামিম ফেরার পরের ওভারেই ওশানে থমাসের বলে হোপকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মুশফিক (১)। তবে থেমে থাকেননি সাকিব। রানরেটে নজর দিয়ে তুলে নিয়েছেন নিজের ফিফটি।

ফিফটি করার পরে আরও আগ্রাসী ভঙ্গিমায় খেলছেন সাকিব। প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। তাঁকে উপযুক্ত সঙ্গ দিয়েছেন লিটন।

দুর্দান্ত খেলতে খেলতে বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় এবং নিজের ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি করেছেন সাকিব। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটি এসেছে মাত্র ৮৩ বলে।

চলতি বিশ্বকাপে এনিয়ে টানা চার ম্যাচে পঞ্চাশের বেশি করলেন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকা (৭৫), নিউজিল্যান্ড (৬৪) এবং ইংল্যান্ডের (১২১) পর উইন্ডিজের বিপক্ষেও পঞ্চাশের বেশি রান করেছেন তিনি।

সাকিবের সেঞ্চুরির পর হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন লিটন। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দুর্বার গতিতে জয়ের দিকে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ দিনে লিটন করেছেন ৬৯ বলে ৯৪* রান।

ইনিংসে ছিল আটটি চার ও চারটি ছক্কার মার। তাঁর এমন ইনিংসে মাত্র ৪১.৩ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫০ ওভারে ৩২১ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়েছে উইন্ডিজ। শাই হোপ ও এভিন লুইসের ফিফটি এবং শেষদিকে শিমরন হেটমায়ার ও জেসন হোল্ডারের ক্যামিওতে এমন রান সংগ্রহ করেছে তাঁরা।

টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলছিলেন ক্রিস গেইল। বাতাসের সুবিধা নিয়ে মাশরাফি-সাইফুদ্দিনদের সুইং বারংবার পরাস্ত করছিল তাঁকে।

ইনিংসের চতুর্থ ওভারে সাইফুদ্দিনের ভিতরে আসা বলে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন গেইল। ১৩ বলে ০ রান করে ফেরেন এই ক্যারিবিয়ান।

গেইল ফিরে গেলে শাই হোপের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন এভিন লুইস। বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তখন খানিকটা চাপে ছিল জেসন হোল্ডারের দল।

কিন্তু ১০ ওভার পার হওয়ার পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের দিকে নিয়ে নেয় ক্যারিবিয়ানরা। দারুন ব্যাটিং করে দলকে একশ রানের পুঁজি এনে দেয়ার পাশাপাশি ফিফটি তুলে নেন লুইস। সেই সঙ্গে নিজেদের মধ্যে শতরানের জুটি গড়েন তাঁরা।

ফিফটি হাঁকানোর পর আরও হাত খুলে খেলতে শুরু করেছিলেন লুইস। সাকিব আল হাসানকে তাঁর তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকালেও ওভারের তৃতীয় বলে ফের বড় শট খেলতে গিয়ে লং অফ অঞ্চলে সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন এই ওপেনার।

৬৭ বলে ৭০ রান করে বিদায় নেন তিনি। লুইস ফিরে গেলে ফিফটি তুলে নেন হোপ। তাঁকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দিয়ে ফিরেছেন নিকোলাস পুরান। ব্যক্তিগত ২৯ রানে সাকিবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে ফিরেন পুরান।

এরপর দ্রুতগতিতে রান তুলেছেন শিমরন হেটমায়ার। দলের রান বাড়াতে অসাধারণ একটি ক্যামিও খেলেছেন তিনি। মাত্র ২৫ বলে ফিফটি পেয়েছেন হেটমায়ার।

তখন মনে হচ্ছিল সাড়ে তিনশ অতিক্রম করে ফেলবে ক্যারিবিয়ানরা। কিন্তু তা হতে দেননি মুস্তাফিজুর রহমান। ফিফটি পাওয়ার পরেই মুস্তাফিজের বলে তামিম ইকবালকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন হেটমায়ার। তাঁর ৫০ রানের ইনিংসে ছিল চারটি চার ও তিনটি ছক্কার মার।

একই ওভারের শেষ বলে আন্দ্রে রাসেলকেও বিদায় করেন মুস্তাফিজ। মুশফিকের তালুবন্দী হয়ে শুন্য রানে ফিরেন রাসেল। ততক্ষণে সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন হোপ।

ধীর গতির ইনিংস খেলে যাচ্ছিলেন তিনি। অপরদিকে উইকেটে এসেই চার ছয় হাকাতে থাকেন অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। সাইফুদ্দিনের বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে লং অফে ধরা পড়ার আগে তিনি করেন ১৫ বলে ৩৩ রান।

ব্যক্তিগত ৯৬ রানে ধীরে আগাতে থাকা হোপকে থামিয়েছেন মুস্তাফিজ। ১২১ বলের এই ইনিংসে ছিল চারটি চার ও একটি ছয়। লিটনের ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন মুস্তাফিজ।

এরপর ড্যারেন ব্রাভোর ১৫ বলে ১৯ রানের সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভারে আট উইকেটে ৩২১ রান করে ক্যারিবিয়ানরা। ইনিংসের শেষ বলে সাইফুদ্দিনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ব্রাভো।

টাইগার বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজ ও সাইফুদ্দিন তিনটি, সাকিব দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ

ওয়েস্ট ইন্ডিজঃ ৩২১/৮ (৫০ ওভার)
(হোপ ৯৬, লুইস ৭০; মুস্তাফিজ ৩/৫৯)
বাংলাদেশঃ ৩২২/৩ (৪১.৩ ওভার)
(সাকিব ১২৪*, লিটন ৯৪*; রাসেল ১/৪২)

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর