ছোট মাঠ বড় স্বপ্ন

স্পোর্টস রিপোর্টার: সকালে সমারসেটের কাউন্টি গ্রাউন্ডে এসেই স্লিপে ক্যাচিং প্রাকটিস করেন তিন ক্যারিবীয় তারকা ক্রিস গেইল, জেসন হোল্ডার ও ড্যারেন ব্রাভো। একই সময়ে নেটে বোলিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন কটরেল, থমাস, গ্যাব্রিয়েলরা! গতকাল ব্যাটিংয়ের তুলনায় ক্যারিবীয়রা খানিকটা বেশি সময় কাটালেন বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে!

ছোট মাঠ! এখানে ছক্কা মারা খুবই সহজ। তাই হয়তো ব্যাটিং নিয়ে ততটা মাথা ঘামাচ্ছেন না! আন্দ্রে রাসেল তো অনুশীলনই করলেন না। তবে ক্যারিবীয় খুব ভালো করেই জানেন, মাঠ ছোট হলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয় পাওয়া ততটা সহজ নয়! কারণ শেষ পাঁচ ম্যাচে চারবারই যে টাইগারদের কাছে হেরেছে তারা। আর বাংলাদেশ তো জয়ের নেশায় রীতিমতো মত্ত্ব! সেমিফাইনালে খেলার বড় স্বপ্ন পূরণ করতে হলে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। গতকাল মাশরাফি বলেন, ‘এখনো আমাদের হাতে পাঁচটি ম্যাচ আছে। তবে আমরা চিন্তা করছি ম্যাচ বাই ম্যাচ।’

বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ উইন্ডিজের মারকাটারি ব্যাটিং। ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল ছাড়াও আছেন শাই হোপ। সব শেষ চার সেঞ্চুরির মধ্যে তিনটিই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করেছেন হোপ। গেইল-রাসেলের পাশাপাশি হোপকে নিয়েও আলাদা পরিকল্পনা আছে টাইগারদের।
আজ বাংলাদেশ খেলবে সবুজ ঘাসের উইকেটে। এই মাঠ ব্যাটিং স্বর্গ হলেও পেসারদের জন্য সব সময়ই থাকে বাড়তি সুবিধা। আগের দুই ম্যাচে দেখা গেছে নিউজিল্যান্ডের নিশাম এবং পাকিস্তানের পেসার আমির ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন। অসি পেসাররাও দুর্দান্ত বোলিং করছেন। তাই আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ ৪ পেসার নিয়ে খেলবে কিনা? এমন প্রশ্নে মাশরাফি জানিয়েছেন, ‘আমি একা কিছু বলতে পারব না। টিম ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে।’

সমারসেটের উইকেটে সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে মাঠের আকার নিয়ে! এমন মাঠে ক্যারিবীয়দের দানবীয় ব্যাটিং লাইনআপ কি করবে কে জানে? তবে মাশরাফির কথায় বোঝা যায়, ছোট মাঠ হওয়ায় উইন্ডিজের চেয়ে সুবিধা বেশি পাবে বাংলাদেশই, ‘ক্যারিবীয়রা যে কোনো মাঠেই ছক্কা হাঁকাতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, বড় মাঠেও তাদের মিস হিট ছক্কা হয়ে যায়। তবে এমন তো নয় যে, এই মাঠে তাদের ছক্কাগুলো ১২ হয়ে যাবে? এটা বাংলাদেশের জন্যও ভালো হতে পারে। তাই মাঠ নিয়ে কোনো কিছু ভাবছি না। এটা ওদের জন্যও যা, আমাদের জন্যও তাই।’

ছোট মাঠ থেকে আরেকটি সুবিধা আদায় করে নিতে চাইছে বাংলাদেশ, ‘এই মাঠে ওরা বেশি উড়িয়ে মারতে চাইবে। সেক্ষেত্রে আউট করার সুযোগও বেশি তৈরি হবে। আর কোনো সুযোগ নষ্ট করা যাবে না। আমি মনে করি নিয়মিত উইকেট পাওয়ার বিকল্প কিছু নেই।’

ক্রিকেটে সব বড় ভূমিকা থাকে উইকেটের। যে দল যত দ্রুত উইকেট সঠিকভাবে বিশেষণ করতে পারে তাদের জয়ের সম্ভাবনাও ততটা বেড়ে যায়। মাশরাফি বলেন, ‘জয় কিংবা হার নির্ভর করে উইকেট এনাইসিস করার ওপরও। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে আমরা উইকেটটা ঠিকমতো বুঝতে পারিনি। আর সেটাই ছিল হারের বড় কারণ।’ একই ভুল যে মাশরাফিরা বার বার করবেন না তা বোঝাই যায়!

একদিন আগেই দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল বলেছেন উইন্ডিজের বিরুদ্ধে ফেবারিটের তকমা গায়ে মেখেই খেলতে নামবে বাংলাদেশ। কারণ যাদের বিরুদ্ধে সব শেষ নয় ম্যাচে ৭ জয় তাদেরকে এগিয়ে না রাখার প্রশ্নই ওঠে না! একই কথা বললেন, প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক জেসন হোল্ডারও, ‘হ্যাঁ, ওরাই ফেবারিট। তবে বিশ্বকাপ আলাদা স্টেজ। এখানে অনেক কিছুই হতে পারে।’

তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিধ্বস্ত হওয়ার পর মানসিকভাবেই খানিকটা পিছিয়ে উইন্ডিজ দলটি। এদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাবধান করতে গিয়ে আইসিসির এক কলামে দুবারের বিশ্বকাপ জয়ী ক্যাপ্টেন ক্লাইভ লয়েড লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ কিন্তু ভাগ্যের জোরে বিশ্বকাপ খেলছে এমন নয়! তারা এই বিশ্বকাপের পূর্ব মুহূর্তেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার (তিনবার) হারিয়েছে ত্রিদেশীয় সিরিজে। এই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়েছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনেক রান করেছিল। সব মিলে দারুণ অবস্থায় আছে। এমন ম্যাচে তারা ছেড়ে কথা বলবে না। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাবধান থাকতে হবে!’

আর বাংলাদেশ দল জয়ের জন্য কতটা মরিয়া তা ক্যাপ্টেন মাশরাফির ছোট্ট এক বাক্যেই বোঝা যায়, ‘আমাদের শেষ কথাই হচ্ছে জয়!’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর