মানবিকের ছাত্র এমবিবিএস ডাক্তার, বললেন “বাংলাদেশে সবই সম্ভব”

নিউজ ডেস্কঃ মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেব পরিচয় দিয়ে চিকিৎসাসহ অস্ত্রোপাচার করার অভিযোগ উঠেছে। মাসুদুল হক নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এর আগেও ভুল চিকিৎসা ও অপারেশনের জন্য কারাভোগ করেছিলেন বলেও জানা যায়। রোববার দুপুরে মাসুদুল হকের এমন কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে মাগুরা ক্লিনিক মালিক সমিতি।

সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আহমেদ অভিযোগ করেন, মাসুদুল হক নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মাগুরায় অস্ত্রোপচারসহ নানা অপচিকিৎসা চালিয়ে আসছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি চিকিৎসক নয়। তিনি নিজেকে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী হিসেবে পরিচয় দেবার পাশাপাশি পিজিটি, সিডিডি সার্জন এ ধরণের যোগ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন।

তারা আরো জানান, তিনি আসলে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ১৫ বছর রাশিয়ায় থেকে একটি ডিপ্লোমা সনদ জোগাড় করেছেন। দেশে ফিরে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয়ে অস্ত্রোপচারসহ নানা প্রকার চিকিৎসা শুরু করেন। তার ভুল অস্ত্রোপচারে অসংখ্য রোগী মারা গেছে। অনেকে জটিল অসুস্থায় ভুগছেন।

এর আগে ২০০৫ সালে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে এক রোগীর খাদ্য নালিতে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তার একটি নাড়ি কেটে গেলে ক্ষত স্থান পলিথিন পেপার দিয়ে বেধে দেয়া হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।

ডাক্তার পুন: অস্ত্রোপচার করে ঐ পলিথিন উদ্ধার করেন। ওই সময় মাসুদুল হককে পলিথিন ডাক্তার হিসেবে উল্লেখ করে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হয়। যার সূত্র ধরে স্থানীয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তাকে জেলে পাঠানো হয়।

এরপর জামিনে মুক্তি পেয়ে ২০০৬ সালে ড্যাবের সদস্য পদ নেয় ও বিএমডিএস ঢাকায় চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধিত হন। যার নম্বর-এ-৪৩২১৪ এবং তারিখ ১২.০৯.০৬। নিবন্ধন নেয়ার পর তিনি মাগুরায় এসে মাগুরা ডায়াবেটিক হাসপাতালের চিকিৎসক হিসাবে যোগদান করে । এখনো সেখানেই কর্মরত আছেন।

এছাড়াও মাগুরা সদর হাসপাতালের পূর্বদিকে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করে তৈরি করেছেন নিজস্ব ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট। সেখানে এমন কোনো অস্ত্রপচার নেই যা তিনি করছেন না। তার ভুল অস্ত্রপচারে বহু মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

ক্লিনিক মালিক সমিতি আরো অভিযোগ করেন, ২০১২ সাল থেকে শুরু করে বিগত ৭ বছরে তারা মাসুদুল হকের ভূয়া চিকিৎসক পরিচয় তুলে ধরে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, ঢাকার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর একাধিক চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। উল্টো ডাক্তার মাসুদুল হকের অপচিকিৎসার প্রসার ক্রমশ বাড়েছে।

সমিতি সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন জানান, ১৩ জুন একটি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মাসুদুল হকের সব অবৈধ পরিচয়ের তথ্য প্রমাণ উঠে এসেছে। সেখানে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রিধারী নন এ কথা নিজেই স্বীকার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে সেই টেলিভিশনের প্রতিবেদক মাসুদুল হককে তার ব্যবস্থাপত্রে এমবিবিএস লেখার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সবই সম্ভব।’ তার এই বক্তব্য দেশদ্রোহিতার শামিল উল্লেখ করে ক্লিনিক মালিক সমিতি এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।

এদিকে একটি সূত্র থেকে জানা যায়, মাসুদুল হকের প্রকৃত নাম শহিদুল হক। মাসুদুল হক তার এক আত্মীয় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর মারা যান। শহিদুল মৃত আত্মীয় সার্টিফিকেট নিয়ে মাসুদুল হক সেজে রাশিয়া গিয়ে ডিপ্লোমা করে অসেন। পরে ৯০-এর দশকের শুরুতে অনৈতিক পথে ড্যাবের মাধ্যমে ডক্টরস কাউন্সিলের সদন নিয়ে ওই নামেই এমবিবিএস ডাক্তারে কার্যক্রম শুরু চালাতে থাকেন।

অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. আলী আকবর বলেন, ‘এ ব্যাপারে মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফরিদ হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক তদন্ত টিম গঠন করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিভিল সার্জনকে বলা হয়েছে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাসুদুল হক বলেন, ‘আমি বিএমডিএস থেকে নিবন্ধন নিয়ে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছি। আমি সংবাদ সম্মেলন করে সব তথ্য উপস্থাপন করব।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর