মোয়াজ্জেমকে নিয়ে মুখ খুললেন নুসরাতের মা

ডেস্ক রিপোর্ট: ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতারের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, ‘(ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতারে আমরা সন্তুষ্ট। আমি চাই, তিনি যতটুকু অপরাধ করেছেন তার সে পরিমাণ শাস্তি হোক।

নুসরাতের ভিডিও ধারণ ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারসহ নানা অপ্রচারের সঙ্গে আরও কেউ যদি জড়িত থাকে তাদেরও আইনের আওতায় এনে দ্রুত মামলার বিচার করা হোক।’তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনিও স্বজন হারানোর ব্যথা বোঝেন। নুসরাতকে হারিয়ে আমি যে অসহনীয় কষ্ট ও দুঃখের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, আজকে নুসরাত হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পাশাপাশি ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও সেই কষ্ট ভোলার চেষ্টা করতে পারবো।’

নুসরাত হত্যা মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘আমার বোন তার প্রতি করা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সেই দিন থানায় গিয়েছিল মাকে সঙ্গে নিয়ে। সেই দিন একজন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়ে সোনাগাজী থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গিয়ে আরেকবার পুলিশের হাতে নির্যাতিত হয় যা দেশবাসী দেখেছে। ব্যারিস্টার সুমন (মামলার আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন) এই মামলা করে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ওসি মোয়াজ্জেমকে তিনি এই মামলায় আসামি করায় আজকে তিনি গ্রেফতার হলেন। আমরা ন্যায়বিচার পাচ্ছি। কিন্তু ওইদিন ওইখানে আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। সেই বক্তব্য নেওয়ার সময় তাদের কার, কী ভূমিকা ছিল আশা করি তা এই মামলার তদন্তে উঠে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করছে। আজকে নুসরাতের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা খুশি হয়েছি তবে শান্তি পাবো তখন, যখন আদালতে ন্যায়বিচার পাবো।’ এর আগে রবিবার (১৬ জুন) রাজধানীর শাহবাগ থেকে পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর গ্রেফতার হন ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন। প্রসঙ্গত, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন তিনি। দুর্বৃত্তদের আগুনে নুসরাত অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর ‘নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে’ ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ ও মামলার নথি পর্যালোচনা করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এরপরও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এতদিন তিনি আত্মসমর্পণও করেননি।

পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, গত ৮ মে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন। গত ক’দিন থেকে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের ঠেলাঠেলি চলছিল। ঈদের আগে সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হন ওসি মোয়াজ্জেম। এর আগে, গত ৬ এপ্রিল এইচএসসি সমমানের আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা নুসরাত জাহান রাফিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর