শেরপুরে দেশি মুরগি পালনে দূর হচ্ছে বেকারত্ব

রাশেদুল হক, শেরপুর (বগুড়া) : পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ), বগুড়ার উদ্যোগে শেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় “কমিউনিটি ভিত্তিক বাণিজ্যিকভাবে দেশি মুরগি পালনের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন” শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণা শুরু করার ফলে দূর হচ্ছে বেকার ও অসহায়ত্ব।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ), বগুড়ার নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৭ সালের জুন মাসে শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নে রণবীরবালা ও রামনগর গ্রামে “কমিউনিটি ভিত্তিক বাণিজ্যিকভাবে দেশি মুরগি পালনের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন” শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণা শুরু করে এবং ওই এলাকার কিছু অসহায় দরিদ্র ও বেকার নারীদের নিয়ে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া’র পরিচালক (কৃষি বিজ্ঞান) জনাব আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং একই বিভাগের সহকারী পরিচালক জনাব মাশরুফা তানজীন ও ডাঃ মোহাম্মাদ রিয়াজুল ইসলাম বিভিন্ন সময় সেমিনার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।

পরবর্তীতে একই বিভাগের সহকারী পরিচালক ডাঃ সুলতানা ফাইজুন নাহার যুক্ত হন। প্রশিক্ষণ শেষে প্রাথমিক পর্যায়ে রণবীরবালা গ্রামের ১০ জন উদ্যোগী নারী (আমেনা, আরবী, আদরী, শান্তনা, জবা, জাহানারা, ইঞ্জিলা, সকিনা, শামছুন্নাহার ও বিউটি) মুরগি পালনের কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে সেই সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে ২০০ জনে। উপরোক্ত গ্রাম দু’টি সহ আশপাশের কাফুরা, মিস্কিপাড়া (কাফুরা পূর্বপাড়া), শুবলী, গোপালপুর, চকপাথালিয়া, মহিপুর, কলতাপাড়া, বগুড়াপাড়া ও জামালপুর গ্রামের প্রায় ৩০০ জন নারী খুবই উৎসাহপূর্ণভাবে বাণিজ্যিক আকারে দেশি মুরগি পালন করছে। আরডিএ, বগুড়া কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রায়োগিক গবেষণায় “কমিউনিটি ভিত্তিক বাণিজ্যিকভাবে দেশি মুরগি পালন” এর মাধ্যমে উক্ত গ্রামগুলোর উদ্যোগী নারীরা এখন অনেকটাই সাবলম্বী।


এ ব্যাপারে রনবীরবালা গ্রামের জবা, জাহানারা, আদুরী ও আরবী বলেন, আরডিএ’র স্যারেরা আমাদের গ্রামে এসে সমিতি গঠন করে “কমিউনিটি ভিত্তিক বাণিজ্যিকভাবে দেশি মুরগি পালন” এর জন্য উদ্বুদ্ধ করেন এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে আমরা স্বল্প পুজি দিয়ে দেশী মুরগি পালন করে লাভবান হচ্ছি। আমাদের অনেকের সামান্য পরিমাণ জায়গা থাকলেও টাকার অভাবে সেই জায়গা কাজে লাগাতে পারছিনা। আরডিএ বা সরকার আমাদের যদি সুদমুক্ত ঋন দিয়ে সহযোগিতা করে তাহলে আমরা আরো বেশী মুরগি পালন করে দেশে অর্থনীতি ও আমিষের চাহিদা মেটাতে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারবো।


এ সম্পর্কে আরডিএ, বগুড়া’র সহকারী পরিচালক ও গবেষক জনাব মাশরুফা তানজীন জানান যে, উন্নত ব্যবস্থাপনা, কৃত্রিম ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা, রেডিমেট সুষম দানাদার খাদ্য প্রদান, নিয়মিত টিকা ও কৃমিনাশক প্রদানের মাধ্যমে মুরগির মৃত্যুহার কমিয়ে ৩-৫% আনা সম্ভব হয়েছে এবং ৮৫-৯০ দিনে মুরগীর ওজন প্রায় ৬৫০-৭৫০ গ্রামে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। অতীতে যেখানে একই সময়ে ওজন হত মাত্র ২০০-২৫০ গ্রাম, ফলে এত অল্প সময়ে বাজারকরণ সম্ভব হতো না। গবেষণার আরও দেখা যায়, সুষম খাদ্য প্রদানের ফলে ডিমের উৎপাদন পূবের তুলনায় দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধরণের কার্যক্রম সারাদেশে গ্রামীণ নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আরডিএ, বগুড়া’র সহকারী পরিচালক ও গবেষক ডাঃ মোহাম্মাদ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালনে নানারকম সমস্যা রয়েছে বিশেষতঃ বাচ্চা মৃত্যু হার বেশি, দৈহিক ওজন বৃদ্ধি খুবই ধীরে হয় এবং বাজারজাতকরণে অনিশ্চয়তা ও বেশি সময় প্রয়োজন। এছাড়া যেহেতু প্রত্যেকে স্বল্প পরিসরে শুধুমাত্র মুরগি দিয়ে বাচ্চা ফুটাতো (১২-১৫ টি ডিম দিয়ে) ফলে বাণিজ্যিকভাবে দেশি মুরগি পালন তাদের পক্ষ্যে সম্ভব ছিল না। উল্লেখিত সমস্যা সমূহ সমাধানপূর্বক কমিউনিটি ভিত্তিক লাভজনকভাবে ও বাণিজ্যিক আকারে দেশি মুরগি পালন এবং বাজারজাতকরণের মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারগুলো যেমন সাবলম্বী হচ্ছে তেমনিভাবে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


গবেষণা টিম লিডার ও আরডিএ, বগুড়া’র পরিচালক (কৃষি বিজ্ঞান) জনাব আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন যে, কমিউনিটি ভিত্তিক উৎপাদিত দেশি মুরগি ও ডিম বিক্রয় করে একদিকে যেমন গ্রামের সাধারণ ও স্বল্প শিক্ষিত নারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিনে প্রত্যেকের বাড়িতে খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাড়তি পুষ্টি যা দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে ভুমিকা রাখবে। এছাড়াও “আমার গ্রাম আমার শহর” বিনির্মাণে এই মডেলটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আরডিএ, বগুড়া কর্তৃক বাস্তবায়িত এই মডেলের সফলতা দেখে শেরপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তর ২০১৮ সালের মার্চ মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মডেলটি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর