দারুণ সুখবর পেল ‘রোহিঙ্গারা’!

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আসিয়ানের ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট টিমের তৈরি করা একটি প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই ফাঁস হয়েছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির হাতে আসা প্রিলিমিনারি নিডস অ্যাসেসমেন্ট ফর রিপেট্রিয়েশন ইন রাখাইন স্টেট, মিয়ানমার শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পাঁচ লাখ মানুষকে ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার।

এএফপি জানায়, আসিয়ানের ওই প্রতিবেদনে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারের চলমান পদক্ষেপ নিয়ে প্রশংসা করা হয়েছে। শিগগির প্রতিবেদনটি জনসমক্ষে প্রকাশ করার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। এএফপি তাদের প্রতিবেদনে আরো জানিয়েছে, মিয়ানমার সরকারের কাছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যা পাঁচ লাখ যা বাংলাদেশ ও জাতিসঙ্ঘের হিসাবের অর্ধেক।

আসিয়ানের প্রতিবেদনে এ পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করার কথাই উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, ম্যানুয়ালি কাজ করার পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কাজ করা হলে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই বছরের মতো সময় লাগবে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্বপরিকল্পিত ও সঙ্ঘবদ্ধভাবে সহিংস হামলা জোরালো করে দেশটির সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ নৃশংস অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ। এদের সাথে রয়েছেন ১৯৮২ সাল থেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া আরো প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।

উল্লেখ্য, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন স্থাপনের পাশাপাশি ছড়িয়েছে জাতিগত বিদ্বেষ।

৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীন হতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। এরপর কখনো মলিন হয়ে যাওয়া কোনো নিবন্ধনপত্র, কখনো নীলচে সবুজ রঙের রশিদ, কখনো ভোটার স্বীকৃতির হোয়াইট কার্ড, কখনো আবার ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড কিংবা এনভিসি নামের রঙ-বেরঙের পরিচয়পত্রে ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের জাতিগত পরিচয়

ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীতে। এএফপি জানিয়েছে, আসিয়ানের প্রতিবেদনেও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের মতো করে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। তাদের পরিচয় হিসেবে সেখানে কেবল ‘মুসলমান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। গত ৬ জুন নেপিডোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে নানা জটিলতায় এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার।

তবে আসিয়ানের প্রতিবেদনে মিয়ানমারের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের নেয়া পদক্ষেপ সহজ ও সুশৃঙ্খল। নেপিডোর কণ্ঠে তাল মিলিয়ে এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের পেপারওয়ার্কজনিত দুর্বলতার কারণেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ ও জাতিসঙ্ঘের সাথে চুক্তির পরও রাখাইনে অনেক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। বুলডোজারে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের নজিরও। সেখানে আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম নির্মাণ চলমান থাকারও খবর এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসঙ্ঘ প্রতিনিধিদলের মিয়ানমারে প্রবেশের কথা থাকলেও সে সময় ডি-ফ্যাক্টো সরকার এর অনুমতি দেয়নি। পরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রবেশাধিকার দিলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করে আসছে, প্রত্যাবাসনের ভান করছে মিয়ানমার।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর