কুশুরায় অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পে ভেকু (খননযন্ত্র) ব্যবহারের অভিযোগ

ধামরাইয়ের কুশুরা ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দের টাকা বিধি অনুযায়ী শ্রমিক দিয়ে না করিয়ে ভেকু (খননযন্ত্র) ব্যবহার করে কাজ করার অভিযোগ এলাকাবাসীর। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নিকট তথ্য অধিকার আইনে তথ্য পেয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে একথার সত্যতা পাওয়া গেছে। কয়েকজন এলাকাবাসী এই প্রতিবেদকের নিকট ভিডিও বক্তব্যে তাদের অভিযোগ ব্যক্ত করেছেন।

ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ ইং অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর ১ম পর্যায়ে মোট তিনটি প্রকল্পে রাস্তা নির্মাণে সরকারী বরাদ্দ আসে। এগুলো হলো- সিংশ্রী ব্রীজ হইতে বেংরোয়া কবরস্থান পর্যন্ত রাস্তা নির্মান, বরাদ্দ ৩,০৪,০০০/-, নিমাতলী খালপাড় থেকে দেওখোলা ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, বরাদ্দ ৫,২০,০০০/- এবং গোলাইল সোনার উদ্দিনের বাড়ী হইতে গোলাইল ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, বরাদ্দ ৫,২০,০০০/- টাকা।

প্রতিটি প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন কুশুরা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ এনায়েত হোসেন। তিনি উক্ত তিনটি প্রকল্প তার পরিষদের তিন ইউপি সদস্যদের মাঝে বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব তুলে দেন বলে জানান কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। ঐ তিন ইউপি সদস্যরা হলেন যথাক্রমে ৫নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ ফারুক হোসেন, ৭/৮/৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য মোসাঃ শারমিন ফেরদৌস এবং ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ আবু বকর।

৫নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ ফারুক হোসেন অকপটে জানান তার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্পে রাস্তা নির্মাণে মাটি কাটার কাজে শ্রমিকদের পরিবর্তে ভেকু (খনন যন্ত্র) দিয়ে কাজ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাব এবং তাদের উচ্চ পারিশ্রমের কারণে নির্দিষ্ট সময়সীমায় কাজ শেষ করতে গিয়ে সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ শ্রমিক দিয়ে করানো সম্ভব হয়নি।

সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মোসাঃ শারমিন ফেরদৌসের দায়িত্বে থাকা ‘নিমাতলী খালপাড় হইতে দেওখোলা ব্রীজ’ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় গেলে অনুসন্ধানে বের হয় বিভিন্ন অনিয়ম। ৫ লক্ষ বিশ হাজার টাকার সরকারী বরাদ্দ ‘অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান’ এর জন্য এলেও এখানে প্রকল্পের সিংহ ভাগ কাজই খনন যন্ত্র (ভেকু) ব্যবহার করে করা হয় বলে জানায় এলাকাবাসী। ভিডিও বক্তব্যে তারা জানান, এই রাস্তার কাজ ভেকু দিয়ে করায় এলাকার হত-দরিদ্ররা কাজ করার সুযোগটুকু হারায়।

এছাড়াও অভিযোগ এসেছে, প্রকল্পের জায়গায় আগেও চলাচলের মতো রাস্তা ছিলো, তার ওপরে শুধু কিছু মাটি ফেলে কাজ দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সরেজমিন প্রকল্পটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘুরে বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থের পুরাটা এই রাস্তায় খরচ হয়েছে এমন সত্যতা পাওয়া যায় নাই। এব্যাপারে রাস্তা সংলগ্ন কয়েকজন গ্রামবাসীর সাথে কথা বললে তারা জানান, এখানে সর্বোচ্চ লাখ দুই টাকা খরচ করা হয়েছে। অথচ সরকারি বরাদ্দ এসেছে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এই অভিযোগের ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মহিলা ইউপি সদস্য মোসাঃ শারমীন ফেরদৌস একপর্যায়ে এই প্রতিবেদকের নিকট স্বীকার করেন প্রকল্পে সম্পূর্ণ টাকা খরচ না হবার কথা। এসময় তিনি তিনজনের ভিতরে অবশিষ্ট সরকারি অর্থের বাটোয়ারা হয়েছে বলে জানান। তবে সেই তিনজনের নাম উল্লেখ করেন নাই। শেষে তিনি বলেন, সবকিছু আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব জানেন, আমি কিছু জানি না।

২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ৩য় ও শেষ প্রকল্পটিতে আসা ৫ লক্ষ বিশ হাজার টাকার বরাদ্দের কাজটি শেষ করেন ইউপি সদস্য মোঃ আবু বকর। তার প্রকল্পটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণে রাস্তার দু’পাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গভীর করে মাটি তুলে নেয়া হয়েছে।

এসব খাদগুলির গভীরতা এবং সেগুলিতে স্পষ্ট দৃশ্যমান ক্ষত দেখে বুঝা যায় সাধারণ শ্রমিকেরা কোদাল বা এজাতীয় কিছু দিয়ে মাটি কাটেনি। এখানে ভেকু (খনন যন্ত্র) ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া রাস্তার দৈর্ঘ্য দেখে বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থের পুরাটা যে খরচ করা হয় নাই অতি সহজেই এটা অনুমান করা গেছে।

এবিষয়ে ইউপি সদস্য মোঃ আবু বকরকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বরাদ্দকৃত সম্পূর্ণ অর্থ খরচ হয়েছে বলে জানান। তবে একপর্যায়ে তিনিও জানান যে তারা নামে মাত্র প্রকল্পের কাজ করেছেন; কিন্তু মূল নিয়ন্ত্রণ ছিলো চেয়ারম্যান এর হাতে। তিনি যেভাবে বলেছেন কাজ সেভাবেই করা হয়েছে।

এব্যাপারে ধামরাইয়ের কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ এনায়েত হোসেনের কাছে সরকারি বিধির অনিয়ম ও অর্থ অপচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারি বিধি অনুযায়ীই কাজ হয়েছে। ভিডিও বক্তব্যে গ্রামবাসীর অভিযোগের বিষয়টি তুললে তিনি প্রথমে ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে গেলেও শেষে বলেন, ‘আপনারা লিখে যা পারেন করেন।’ পরবর্তীতে তার মুঠোফোনে লাগাতার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বিষয়টি মুঠোফোনে ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামকে জানানো হলে তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর