টার্কি মূরগী পালনে স্বাবলম্বী সাতক্ষীরার বেকার যুবক-যুবতীরা

শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় পাখি প্রজাতি টার্কি মূরগী পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন খামারিরা। পোল্ট্রি মুরগীর চেয়ে টার্কি মুরগীর রোগ ব্যাধি কম, মাংস খেতে সুস্বাধু ও চাষ লাভ জনক হওয়ায় এই মূরগী পালনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ জেলায়। তাই সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে বাসা-বাড়ীর আঙ্গিনায় ও বাড়ীর ছাদে ছোট ছোট ঘর তৈরি করে গড়ে উঠছে টার্কি মূরগীর ফার্ম।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, কলারোয়া ও তালা উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বাসা-বাড়ীর আঙ্গিনায় ও বাড়ীর ছাদে ছোট আকারের ঘর তৈরি করে গড়ে উঠছে এই টার্কি মূরগীর ফার্ম। অনুকুল আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারনে সাতক্ষীরায় দিন দিন টার্কি পালন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় টার্কির ফার্ম করে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হয়েছেন খামারিরা। এর ফলে জেলার অনেক বেকার যুবক-যুবতীরা এখন ঝুঁকছেন এ ব্যবসায়।

সাতক্ষীরা শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার গৃহিনী সাজিদা খাতুন। জীবনের অনেক কঠিন সময় পার করেছেন তিনি। পরিবারের অভাব অনটনের কারনে পোল্ট্রিফার্ম ও ধান ক্রয়সহ নানা ধরনের খুদ্র ব্যাবসা করেও তার জীবনে আসেনি কোন স্বচ্ছতা। এরপর তিনি গত তিন বছর আগে পাশের গ্রাম থেকে একজোড়া টার্কি মুরগি কিনে তার চাষ শুরু করেন। এই টার্কির বয়স ছয়-সাত মাস যেতে না যেতেই তা ডিম দেয়া শুরু হয়। এর পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই এক জোড়া টার্কি মুরগি থেকে এখন তিনি কয়ক শত টার্কি মুরগীর মালিক। এখন তিনি বাণিজ্যিকভাব টার্কির খামার তৈরী করছেন।

সাজিদা খাতুন বলেন, টার্কি মুরগি রোগবালাই প্রতিরাধ ক্ষমতা খুব বেশি। ছয় মাসের একটি পুরুষ টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ওজন থাকে তিন থেকে চার কেজি। প্রতি কেজি টার্কি মুরগি বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়। তিনি আরো জানান, ইনকিউবটরর মাধ্যমে ২৮ দিনই এর ডিম ফুটানো যায় এছাড়া বর্তমান দেশী মুরগির মাধ্যমে টার্কির ডিম ফোটানার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি এক মাসের এক জোড়া বাচ্চা বিক্রি করেন আড়াই হাজার টাকায়। প্রতিটি ডিম বিক্রি করেন ২০০ টাকায়। তিনি আরো বলেন, ঢাকা, খুলনা,যশোর, বরিশাল, পিরোজপুর,সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থাক তাঁর কাছে টার্কি মুরগি ক্রয় করতে আসেন ক্রেতারা।

তার ভাষ্য, টার্কির মাংসের সুখ্যাতি বিশ্বজুড়ে। এর উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কম। তাই টার্কি পালন বেশ লাভজনক। টার্কির প্রধান খাবার ঘাস। তবে পাতাকপি, কচুরিপোনা এবং দানাদার খাবারও খেয়ে থাকে এরা। তিনি বলেন যদি কোন ব্যাংক থেকে লোন পায় তবে ব্যাবসা টি আরও বড় করার ইচ্ছা আছে তার। তবে একটি প্রতারক চক্র ভারত থেকে নিম্নমানের টার্কির বাচ্চা দেশে নিয়ে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের বাচ্চা মারা যাচ্ছে।

মাংসের উৎস হিসাবে হাঁস, মুরগী,কোয়েল পাখির বিকল্প হিসাবে টার্কি মূরগীর অবস্হান খুবই গুরুত্বপূর্ন। কোলস্ট্রল ও চর্বি কমে এবং খেতে সুস্বাদু হওয়ায় তাই বিভিন্ন উৎসবে টার্কির মাংসর চাহিদা বাড়ছে। খামারিদের দাবী স্বল্প সুদে সরকার তাদের পালানের ব্যবস্থা করলে তাদের এই ব্যবসা আরো প্রসার ঘটবে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ জানান, টার্কি আমাদের প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের একটি নতুন প্রজাতি। অনেক দিন ধরে সাতক্ষীরাতে টার্কি মুরগী পালন শুরু হয়েছে। এটি একটি লাভ জনক ব্যাবসা। কম খরচে অত্যাধিক লাভ জনক একটি ব্যবসা হিসাবে প্রানি সম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষে থেকে টার্কি মূরগী চাষ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আর এ কারনে খামারীরা এখন এ ব্যাবসায় বেশী ঝুঁকছে। তিনি আরো জানান, প্রানী সম্পদ বিভাগ থেকে সকল টার্কি খামারীদের কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সহযোগীতা করা হয়।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর