অঞ্জু ঘোষ তুমি কার?

বাংলাদেশে একসময়ের অতি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘বেদের মেয়ে জোৎস্না’র নায়িকা অঞ্জু ঘোষ ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তার নাগরিকত্ব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, তিনি আসলে বাংলাদেশের নাগরিক এবং কারসাজি করে তাকে ভারতের নাগরিক বানানো হয়েছে। একজন বিদেশি কীভাবে ভারতের একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, সেই প্রশ্ন তুলছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল।

তবে বিজেপি’র দাবি, অঞ্জু ঘোষের বাবা বাংলাদেশের মানুষ ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার জন্ম কর্ম সবই কলকাতায়। যদিও এই দাবির সপক্ষে যুতসই কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি দলটি। কেননা এই নায়িকা দীর্ষসময় ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এক সময়ে তার জনপ্রিয়তায় ভাঁটা আসার পর তিনি কলকাতায় পাড়ি জমান। যদিও কলকাতায় তিনি খুব বেশি চলচ্ছিত্রে অভিনয় করেননি এবং তার অভিনীত কোনো ছবি সেখানে সাড়া জাগিয়েছে এমনটি শোনা যায়নি।

কলকাতা পৌরসভার দেয়া জন্ম রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতেই বুধবার দলে যোগ দেন বাংলাদেশের এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা অঞ্জু ঘোষ।

বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে অঞ্জুর পক্ষে একাধিক নথি পেশ করেছে বিজেপি। কিন্তু সেই নথিতে প্রচুর অসঙ্গতি আছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

ওইদিন বিজেপি অঞ্জুর জন্ম সনদ, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড এবং পাসপোর্টের কপি দেখিয়ে এই অভিনেত্রী যে ভারতীয় তা দাবি করে বিজেপি।

অঞ্জুর দাবি, ১৯৬৬ সালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার জন্ম। তার এই দাবির পক্ষে বিজেপি ২০০৩ সালে কলকাতা পুরসভা থেকে প্রকাশিত তার জন্ম সনদ পেশ করেছে।

প্রশ্ন উঠছে, ১৯৬৬ সালে যার জন্ম, তার জন্ম সনদ ২০০৩ সালে দেওয়া হল কেন? এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের একাধিক খবরের কাগজের সাক্ষাৎকারে দেখা যাচ্ছে অঞ্জু বাংলাদেশকেই তার ‘মাতৃভূমি’ বলে দাবি করছেন। এমনকি, একটি সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকের ভুল শুধরে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমার জন্ম কিন্তু চট্টগ্রামে নয়, ফরিদপুরে। তবে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে।’ তা হলে সত্য কোনটা জন্ম সনদ, নাকি তার দেওয়া সাক্ষাৎকারের বয়ান।

এ ছাড়াও কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, অনলাইনে অঞ্জুর জন্ম সনদের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সঙ্গে কর্পোরেশনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর মিলছে না। একই নামে দু’টি রেজিস্ট্রেশনও পাওয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ।

অঞ্জুর যে পাসপোর্ট দেখানো হয়েছে, সেটির মেয়াদ শুরুর তারিখ ২০১৮ সালে। যে অভিনেত্রী দীর্ঘদিন বাংলাদেশ এবং ভারতে অভিনয় করেছেন, তার পাসপোর্ট ২০১৮ সালের হয় কী করে? বিজেপির দাবি, এটি তার শেষ জারি হওয়া পাসপোর্ট। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে তার প্রথম পাসপোর্টের তথ্য কোথায়? যদি তিনি নাগরিকত্ব বদলে থাকেন, তা হলে কলকাতার জন্ম সনদ আসে কোথা থেকে?

বিজেপি তার যে ভোটার কার্ড দাখিল করেছে, সেটি ইস্যুর তারিখ ২০০২ সাল। অঞ্জু যদি ভারতেরই নাগরিক হবেন, তা হলে ভোটার কার্ড পেতে এত সময় লাগল কেন?

তার যে প্যান কার্ড দেওয়া হয়েছে, সেখানে আবার জন্ম সাল ১৯৬৭। প্রশ্ন উঠছে, এক এক জায়গায় তার এক এক রকম জন্মের তারিখ কেন?

বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরে বরাত দিয়ে কলকাতার একটি বাংলা সংবাদ মাধ্যম বলছে, অঞ্জু ঘোষ ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছেন বলে কোনো তথ্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে নেই। ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনের সূত্রও জানিয়েছে, বাংলাদেশি নায়িকার ভারতীয় নাগরিকত্বের বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর