নুসরাতের ভাইয়ের আবেগঘন স্ট্যাটাস, হৃদয় ছুঁয়ে গেছে সবার

গত বছর ঈদের আনন্দ এক সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন পরিবারের সবাই।যাকে ঘিরে এত আনন্দ এবার সে আর নেই। বলছি, ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির কথা। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে তাকে।

নুসরাত জাহান রাফিকে হারিয়ে ভালো নেই তার পরিবারের সদস্যরা। একমাত্র আদরের মেয়েকে ছাড়া ঈদ করতে গিয়ে শোকে বিহ্বল মা-বাবা, বোনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ ভাই।

ঈদের দিন বুধবার নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান তার ফেসবুকে বোনকে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে তার পরিবারের কষ্টের ছবি ওঠে এসেছে।

পাঠকের সুবিধার্থে রাশেদুল হাসান রায়হানের স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো:

‘আমি খুশি আমি গর্বিত আপনার মত একজন শহীদার ভাই হতে পেরে।

আবার এসেছে ঈদ, পাড়া প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে দেখছি আনন্দের বন্যা। আর আমাদের ছোট্টঘরে শুধু কান্নার শব্দ। অথচ গত বছরের এই সময় আমাদের এই সংসারে কতইনা আনন্দ ছিল। আজ আপুমণিকে হারিয়ে সকল আনন্দ অশ্রুজলে বিবর্ণ হয়ে গেছে। ঘাতকের আগুণে পুড়ে ছারখার হয়ে গেলো আমাদের সোনালী সংসার।

বার বার মনে পড়তেছ বিগত বছর গুলোতে আপুর সাথে কাটানো ঈদের দিনের সে সব ভূলতে না পারা স্মৃতি গুলো! যা আজ নিবে গিয়ে এক মুঠো চায়ায় রুপান্তরিত হয়েছে……।

প্রতি বছরের মত এ বছর ও ঈদের নামায কেন্দ্রিয় মসজিদে আদায় করেছি। দেখেছি সবার চোখে মুখে আনন্দের বন্যা কিন্তু আজ আপু মনিকে হারিয়ে আমার কাছে নেই কোনো ঈদের আনন্দ!

সীমাহীন অঝোর ধারায় দুচোখে অশ্রু ছাড়া যেন আর কিছুই বের হচ্ছেনা..। একবুক চাঁপা কষ্ট, বেদনায় আমার ছোট্ট হৃদয়টি দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্তে মনে পড়ে যাচ্ছে আপুর কথা।

বার বার নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে আপুর বলে যাওয়া শেষ কথাটি ও রাখতে পারছি না.. আপু বলে ছিলো রায়হান আব্বু আম্মুর দিকে খেয়াল রাখিশ, কিন্তু কোনো ভাবে পারছি না আম্মুকে স্থির করতে এক মাত্র মেয়েকে হারিয়ে দিন রাত কাঁদতে কাঁদতে দু-চোখের অশ্রু জল ও শুকিয়ে গেছে..! বার বার শুধু মা মা করে চিৎকার করতেছে কি ভাবে মাকে শান্ত্বনা দিব নিজেকে নিজেই স্থির রাখতে পারছিনা..।

যারা আমার শান্তিপুর্ন ফ্যামিলিতে অশান্তি সৃষ্টি করে চিরদিনের জন্য আমার বুক থেকে আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন আমার কলিজার টুকরা একটি মাত্র বোনকে কেড়ে নিয়েছে আল্লাহ যেন তাদের ইহকাল ও পরকালে কঠোর শাস্তি প্রদান করেন এই কামনা করি ।

দেশাবাসীর কাছে দোয়া চাই আমার কলিজার টুকরা শহীদা বোনের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ আমার বোন কে জান্নাতের সর্বচ্চ স্থান জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক (আমিন)’।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি।

এ ঘটনা তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ১০ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মামলার এজহারভূক্ত ৮ আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।

দায়িত্বে অবহেলার দায়ে দুই এসআই আবু ইউছুপ, ইকবাল আহম্মদ এবং সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়। পরে ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এছাড়া পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে পুলিশ সদর দফতরে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর