ঘাটাইলে কাঠাল পাকানোর জন্য ব্যাবহার করা হচ্ছে শিকমারা পদ্ধতি

উত্তম আর্য্য, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে দুই, তৃতীয়াংশ পাহাড়ী এলাকা থাকায় মৌসুমী ফল, আনারস, আম, কলা সহ ব্যাপক পরিমানে কাঁঠাল আবাদ হয়।এসব কাঠাল পাকানোর জন্য শিকমারা পদ্ধতি ব্যাবহার করা হচ্ছে। এসব কচি কাঁঠাল পাকাতে তারা নির্বিচারে বিষাক্ত ক্যালসিয়াম-কার্বাইড, ইথাইড, কপার সালফেট, পটাশের তরল দ্রবন, কার্বনের ধোঁয়া, রাইপেন জাতীয় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি লোহার শিক দিয়ে কাঁঠালে প্রবেশ করাচ্ছেন।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়.উপজেলার প্রায় ২০/২৫টি বাজারে প্রতিদিন সকালে কাঁঠালের হাট বসে। গারোবাজার, সাগরদিঘী, জোড়দিগী, আষাঢ়িয়াচালা, রামদেবপুর, শহরগোপিনপুর, ধলাপাড়া, দেওপাড়া, দেলুটিয়া, ছনখোলা, চাপড়ী বাজার, পেচারআটা, মাকড়াই, কুশারিয়া, পাকুটিয়া বাজার সহ বেশি কিছু হাটে ব্যাপক পরিমানের কাঁঠাল আমদানী হয়। এসব কাঁঠাল স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অ লে প্রতিদিন দেড় শতাধিক ট্রাক কাঁঠাল ভর্তি করে বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এ ছাড়াও ঘাটাইলের পাশ্ববর্তী উপজেলা মধুপুর ও সখিপুরেও ব্যাপক পরিমানে কাঁঠাল উৎপাদিত হয়।

অসাধু উপায়ে কাঁঠাল পাকানোর এ পদ্ধতিকে স্থানীয় ভাষায় ‘শিক’ মারা বলে। প্রায় দেড় ফুট লম্বা লোহার শিক কাঁঠালের বোটা বরাবর ঢুকিয়ে দিয়ে ছিদ্র পথে ইনজেকশনের বড় সিরিঞ্জ এর মাধ্যমে কার্বাইড, ইথ্রায়েল, ইথিকন ও রাইপেন জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ প্রয়োগ করা হচ্ছে। পরে একজায়গায় কাঁঠাল স্তূপ আকারে সাজিয়ে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে চাপা দিয়ে রাখলেই ১৮-২৪ ঘন্টার মধ্যেই একটি কচি কাঁঠাল পেকে মিষ্টি পাকা কাঠালের মতো গন্ধ ছড়ায়। দেখে বুঝার কোন উপায় নেই যে এটি একটি অপরিপক্ক বিষাক্ত কাঁঠাল, যেটাকে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হয়েছে।

এসব বিষাক্ত রাসায়নিক স্থানীয় কিটনাশকের দোকানেই পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে ঘাটাইলের এসব অ লে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকান।কিটনাশক ব্যবসায়ী মোঃ হায়দার আলী জানান আমরা অনুমোদিত বিভিন্ন কোম্পানীর নিকট থেকে এসব ঔষধ ক্রয় করে থাকি। কোম্পানীগুলো বাহারী রঙ্গের বোতলে আমাদের কাছে এগুলো পৌচ্ছে দেয়। কাঁঠাল ও আনারসের মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ বোতল মেডিসিন বিক্রি হয়।অন্য আরেক ব্যবসায়ী মোঃ সালামত খান প্রায় একই কথা বলেন।

এদিকে ধলাপাড়া বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী মোঃ আঃ হান্নান বলেন, রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে কাঁঠাল পাকালে আমরা যেমন একদিকে সরাসরি বিষ খাচ্ছি অপরদিকে এই সাধুপন্থা গ্রহন করার কারণে ঘাটাইলে কাঁঠালের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে কাঁঠালের বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে, কৃষক তার ন্যায্য মূল্য থেকে বি ত হচ্ছে।

ঘাটাইল গারোবাজারের আরেক কাঁঠাল ব্যবসায়ী বলেন, এক ট্রাক কাঁঠাল ঢাকা নিতে গেলে স্থানীয় দালালদের কমিশন দিতে হয় হাজার টাকা। তাই আগাম মৌসুমে বেশি লাভের আশায় আমরা কাঁঠালে রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে থাকি। রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে কাঁঠাল পাকানো নিয়ে তিনি আরো বলেন, ঢাকা শহরে কেউ কাচাঁ কাঠাল কিনতে চায় না। সবাই পাকা কাঁঠাল চায় । বর্তমানে এ ব্যবস্থায় কাঁঠাল পাকানোর ফলে কাঁঠালের বাজার মন্দা এবং ন্যায্যমূল্য থেকে বি ত হচ্ছেন কৃষক।

এ ব্যপারের ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাইফুর রহমান খান বলেন, এসব রাসায়নিক মিশ্রিত কাঁঠাল খেলে আমাশয়, লিভারডিজিস, রাতকানা, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা সহ ক্যানসারের মতো জটিল ও কঠিন রোগ হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব খাদ্য গ্রহণ না করাই ভাল।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর