সাতক্ষীরার মানবপ্রেমি ইদ্রিস আলীর গল্প

আকরাম হোসেন নাঈম, নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা অঞ্চলের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য লেখাপড়ার ব্যাবস্থা, এতিমদের জন্য লেখাপড়া এবং যাবতীয় খরচ, অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে আসছেন ইদ্রিস আলী এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বার্তা বাজার এর সাথে।

তিনি পেশায় একজন শিক্ষক সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার প্রত্যান্ত গ্রামে জন্ম ইদ্রীস আলীর লেখাপড়া শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ৩৫ তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে শিক্ষকতা শুরু করেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বর্তমানে ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসাবে কর্মরত আছেন।

‘আগে মানবতা পরে অন্য কথা’ এই স্লোগ্রান কে সামনে রেখে মানবিক কাজের মহান লক্ষ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে নিজ উদ্যোগে সাতক্ষীরা অঞ্চলের অসহায় মানুষের জন্য গড়ে তুলেছে ‘হিউম্যানিটি ফার্স্ট’ সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিগত ১০ মাসে বিভিন্ন সামাজিক কাজ করেছে।

আপনাদের শুরুটা কিভাবে?

ইদ্রিস: আমরা বেশ কয়েকজন এই কার্যক্রমের সাথে আছি সবাই বিভিন্ন পেশায় কর্মরত আছেন। প্রথমত আমাদের এলাকায় কয়রা নামক একটা উপজেলা আছে একজন অসুস্থ শিশুর কথা জানতে পারি তার বাবার পক্ষে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছিল না। তখন আমার কাছে আসে তারপর আমি ‘হিউম্যানিটি ফার্স্ট’ নামে একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলি তারপর একটা পেইজ খুলি এবং এলাকার পরিচিত দেরকে এড করি এবং তাদের কাছে অসুস্থ শিশুটির খবর পৌছে দেয়। আমরা ১২ দিনের মধ্যে ১লক্ষ টাকা যোগাড় করি। এর মাধ্যমে আমরা উৎসাহ পাই পরবর্তীতে কার্যক্রম গুলো চালিয়ে যাওয়ার।

পরবর্তীতে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত কামাল হোসেনকে সাহায্য(১৬ হাজার), ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত মহসিনের চিকিৎসা সহায়তা (৩৮ হাজার), জন্মগত হার্টে ছিদ্র উবাইদার অপারেশনে সহায়তা (৮০ হাজার), জন্মগত হার্টছিদ্র হৃদয়ের অপারেশনে সহায়তা (৫৬ হাজার), স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত শরিফা বেগমের সাহায্য (৪৫০০ টাকা), প্যানক্রিয়াস ড্যামেজ হওয়া ইব্রাহিম খলিলের সহায়তা (১ লক্ষ ৯৪ হাজার ৬৯২ টাকা), কিডনি রোগে আক্রান্ত তরিকুলের সহায়তা (১৯ হাজার), হার্টের ভালব নষ্ট সাইদুল বিশ্বাসের অপারেশনে সহায়তা (৬৩ হাজার), ট্রেনে কাটা পড়া হাবিব ভাইয়ের চিকিৎসা সহায়তা (চলমান) ২৫ হাজার, সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার রুইয়ারবিল গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল নির্মাণ (৩৫ হাজার), সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার দীঘলার আইট গ্রামের ভিক্ষুক আনসার আলী চাচার ঘর নির্মাণ ও ভিক্ষাবৃত্তি রোধে মাসিক খরচ চালানো।

জামা কাপড়, ঔষধ ও অন্যান্য কাজে সর্বদা সহায়তা।(ঘর নির্মাণে খরচ ২৮ হাজার টাকা, মাসিক অনুদান ১ হাজার টাকা), সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামের ভিক্ষুক আত্তাপ আলীর মেয়ের বিয়েতে খরচ প্রদান (৩ হাজার টাকা), ঐ একই গ্রামে একটি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন, সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার সুভদ্রাকাটি গ্রামের ৬ কন্যাকে নিয়ে অসহায় বাবা ইসহাক সর্দারকে সহায়তা, শীতবস্ত্র সংগ্রহে মহানুভবতার দেয়াল নির্মাণ, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া আনারুল ও মুতাসিমকে ভর্তির টাকা প্রদান,২ টি অসুস্থ কুকুরের সেবা প্রদান, গরীব অসহায় (বস্তিতে বসবাস) সুমাইয়ার স্কুল ড্রেস কিনে দেওয়া, অসহায় শাহজাহানের পড়ালেখায় ফিরিয়ে আনতে একসেট নতুন বই প্রদান, নির্যাতনের শিকার হয়ে ভাটা ফেরত কয়েকজন শ্রমিককে উদ্ধার ও খাওয়া-দাওয়া সহ বাড়ি ফিররতে যাবতীয় খরচ বহন, আশাশুনির সুভদ্রাকাটি গ্রামের স্বামী পরিত্যক্ত শাহানারা বেগমের ছেলের চিকিৎসার ভার বহন, কয়রা নিবাসী, প্রবাসে মৃত্যুবরণ করা স্বামীর বিধবা স্ত্রী ও তার এতিম সন্তানদের পোশাক ও খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তা, কয়রার মান্দারবাড়িয়া গ্রামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শরিফুল ইসলামকে চাকরি সংক্রান্ত সকল বই প্রদান, সাতক্ষীরা সদরের ধলিহরের মেয়ে তানিয়াকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান, ইউসুফ ঢালীর (লোকা) নবজাতক শিশুকে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে নিউমোনিয়া চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা, দশহালিয়া হীরা আরাফাত এর ছেলেকে শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা সহায়তা, কুড়িকাহুনিয়ার অনাথ শিশুকে জামাল সর্দারের স্ত্রী যাকে লালন করছে, চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হয়েছে।

তাছাড়া এতিমদের জন্য কাজ করে চলেছেন তিনি, সাতক্ষীরা সদরের রাজারবাগান এলাকার জাহিদের পড়ালেখার যাবতীয় খরচ বহন, রাজারবাগানের এতিম ভাই বোন মুন্না-মুক্তার পড়ালেখার খরচ বহন, সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার রুইয়ারবিল গ্রামের এক এতিমকে পড়ালেখায় ফিরিয়ে আনতে বই প্রদান, খুলনার কয়রা উপজেলার আমাদী গ্রামের এক তিম বোনের পড়ালেখার খরচ বহন, ৪ জন এতিমকে পড়ালেখায় যাবতীয় খরচ বহনের লক্ষ্যে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে।

আপনাদের কার্যক্রমের বিস্তার টা কিভাবে?

ইদ্রিস: আমরা যখন কোন অসহায়, অসুস্থ মানুষের খবর পায় তখন আমরা আমাদের থেকে কিছু অর্থ সংগ্রহ এবং এলাকায় বিত্তবান, প্রবাসীদের কাছে জানালে তারা সহায়তা করে। শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত নয় আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে ও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা অনেক ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছি।

কখনো কোন প্রকার বাধার সম্মুখীন হয়েছেন? এবং সেটা কিভাবে মোকাবিলা করেছেন?

ইদ্রিস: মানবিক কাজ করতে গেলে আসলে সেইভাবে বাধা আসে না না তবে কিছু মানুষ প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়। অনেকে সমালোচনা করে। প্রথমত মানুষ তেমন একটা গুরুত্ব দিত না। পরবর্তীতে আমাদের কার্যক্রম গুলো দেখে অনেকেই উৎসাহ দিচ্ছে।

আপনি একজন সরকারি চাকরিজীবী মানবিক কাজগুলো করার আগ্রহ হলো কিভাবে?

ইদ্রিস: আসলে আমি অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেড়ে উঠেছি। একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় হয়েছি প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে। অসহায় মানুষ গুলোর জীবন খুব কাছে থেকে দেখেছি।
আমি নিজেও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।

ছোট সময় থেকেই একটা ইচ্ছা ছিল অসহায় এতিম, মানুষের পাশে থাকার তাদের জন্য কিছু করার। কিন্ত তখন হয়তো সৌভাগ্য হয়ে উঠেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় চলে যায় ঢাকায়। এখন সুযোগ এসেছে তাই বাকিটা জীবন তাদের পাশে থাকতে চাই।

আপনার থেকে সমাজের জন্য কোন মেসেজ?

ইদ্রিস: আমি সবাইকে বলতে চাই আমরা যদি সবাইকে একটু মানবিক দৃষ্টিতে দেখি তাহলে আমাদের দেশটা পালটে যাবে। আমাদের একটু মানবিকতায় বদলে যেতে পারে একজন মানুষের জীবন।
আমাদের সমাজ পাল্টাতে অর্থ কোন প্রতিবন্ধকতা নয়, প্রতিবন্ধকতা হলো আমাদের মানবিকতার অভাব।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর