কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ প্রত্যাশা, সংকটে ১৩ বছর পার

মেহেদী হাসান, কুবি প্রতিনিধি: আজ কুমিল্লা বিশ্বিবদ্যালয় দিবস। ২০০৬ সালের ২৮ মে কুমিল্লার বিখ্যাত লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে কোটবাড়ী শালবন বিহার এবং ময়নামতি জাদুঘর সংলগ্ন পাহাড়ি ও সমতল ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের ২৬তম বিশ্বিবদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে কুমিল্লা বিশ্বিবদ্যালয়। মধ্য-পূর্বাঞ্চলের এ বিশ্বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৯টি বিভাগে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। তবে প্রতিষ্ঠার তেরো বছর পরও নানা-সংকট অপূর্ণতায় আবদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিভিন্ন বিভাগে তীব্র সেশনজট, আবাসিক ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা, চিকিৎসা সেবার দূর্বলতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, অপরিসর গ্রন্থাগার, শ্রেনীকক্ষ সংকট, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবসহ নানা সংকট রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। এতে ব্যাহত হচ্ছে এর শিক্ষা কার্যক্রম। তবে গত বছরের ২৩ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি’র (একনেক) সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়নে ১৬৫৫ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার একটি মেগা প্রকল্প অনুমোদন পায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ, ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আবাসিক সমস্যা নিরসনসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতে বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ গেলো বছরের নভেম্বরে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো প্রকল্পের টাকা আসেনি।

নেই দৃষ্টি নন্দন মূল ফটক: তেরো বছর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের সামনে নেই কোন সুদর্শন ফটক। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকবার আন্দোলন করলেও তা অধরাই থেকে যায়। এছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে বেলতলী বিশ^রোডে যে একটি ফটক রয়েছে সেটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল দশা। ফটকটিতে থাকা বিশ্বিদ্যালয়ের নামফলকের কয়টি অক্ষর দীর্ঘদিন ধরেই নেই। তবে বিশ্বিবদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শীঘ্রই বিশ্বিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলেই বিশ্বিবদ্যালয়ে একটি দৃষ্টি নন্দন একটি মূল ফটক নির্মাণ করা হবে।

সেশনজট নিরসনে ব্যর্থতা: প্রতিষ্ঠার তেরো বছরেও সেশন জটের অভিশাপ থেকে বের হতে পারেনি বিশ^বিদ্যালয়টি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি তাদের তৃতীয় বর্ষের সেমিস্টারে চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ করেছেন যেখানে একই শিক্ষাবর্ষের অন্য অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই চতুর্থ সেমিস্টারে চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ করেছেন। একই রকম জট রয়েছে বিভাগটির অন্য ব্যাচগুলোতেও। প্রত্নতত্ত্ব ছাড়াও আইসিটি, সিএসই, রসায়ন, ফার্মেসী, নৃবিজ্ঞান, লোক প্রশাসন, পদার্থ, অর্থনীতি, ইংরেজী বিভাগের দুই একটি ব্যাচ ব্যাতিত প্রায় সব ব্যাচই সেশনজটের কবলে রয়েছে। এই সেশন জটের কারণে অধিকাংশ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ¯ স্নাতক, ¯স্নাতকত্তোর শেষ করতে নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশি সময় লাগছে। চলতি বছরই মোট ১৬৭ দিনই বন্ধ থাকবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়(কুবি)। এছাড়া শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব, আন্দোলন এবং অপ্রীতিকর অবস্থার কারণে বিভিন্ন বিভাগে সেশনজট চরম আকার ধারণ করছে। তেরো বছর পরেও সেশনজট নিরসনে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অপর্যাপ্ত আবাসিক ব্যবস্থা: প্রতিষ্ঠার তেরোতম বছর শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। কিন্তু তার বিপরীতে আবাসিক হল রয়েছে ছেলেদের জন্য তিনটি এবং মেয়েদের জন্য একটি। জানা যায়, এ চার হলের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা আট থেকে নয় শত শিক্ষার্থীর। শিক্ষার্থীর হারের সাথে পাল্লা দিয়ে আবাসিক হলের সংখ্যা না বাড়ায় বর্তমানে প্রায় ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থীই আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে এ আবাসন সংকট খুবই ভয়াবহ। মেয়েদের জন্য নতুন করে শেখ হাসিনা হল
নির্মাণ এবং ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সম্প্রসারণ কাজ চললেও তা চলছে ধীর গতিতে।

অপূণাঙ্গ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার: প্রতিষ্ঠার ১৩ বছরও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠেনি কোনো পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থাগার। বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম তলার দুটো কক্ষ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় বইয়ের স্বল্পতা এবং স্বতন্ত্র ভবন না থাকায়ধ প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চমতলার মাত্র দুটি কক্ষ নিয়ে নামমাত্র সুযোগ-সুবিধা দিয়ে চলছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কার্যক্রম। গ্রন্থাগারটির দুইটি কক্ষ মিলিয়ে ৮০ জন শিক্ষার্থীর আসনের ব্যবস্থা রয়েছে। যা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের তুলনায় খুবই নগন্য। সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত আট পর্যন্ত খোলা রাখা ও স্বতন্ত্র ভবন নির্মানের দাবি বহু দিনের হলেও এ বিষয়ে প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নেই বলে জানান শিক্ষার্থীরা। গ্রন্থাগারটির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি লাইব্রেরিয়াল মহিউদ্দিন মোহাম্মদ তারিক ভূঞা বলেন, ‘লাইব্রেরী অফিস চলাকালীন সময়ের বাহিরে খোলা রাখার জন্য একটি আবেদন করা হয়েছে।’

অপূণাঙ্গ মেডিকেল সেন্টার: প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলার অপরিসর একটি কক্ষে কোনরকমে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। মেডিকেল সেন্টারটিতে জনবলের অভাব রয়েছে। পাঁচ জন চিকিৎসকের মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে দুই জন। এখন পর্যন্ত কোন আবাসিক ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়নি। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কিংবা রাতে কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে পড়তে হয় বিপাকে। এছাড়াও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে এম্বুলেন্স রয়েছে যেটি মাইক্রোবাস থেকে রূপান্তরিত করা, মেডিকেল সেন্টারটিতে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত আরো দুইটি এম্ব্যুলেন্স প্রয়োজন। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্ধের অভাবে মেডিকেল সেন্টারটি হতে যে ঔষধ সরবারহ করা হয় তা খুবই নগন্য।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সংকটগুলো রয়েছে নিরসনে আমাদের মানসিকতা প্রয়োজন। মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। মেগা প্রকল্পের টাকা এখনও আসেনি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই শিক্ষার্থীদের জন্যই। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সবাই যদি সামাজিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে আন্তরিক হয় তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।’ বিশ্ববিদ্যাল দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় জুলাই এর ১ম সপ্তাহে আমরা বৃহৎ পরিসরে করে সাবেক ভিসিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি অনুষ্ঠান করবো। আপাতত র‌্যালি এবং আলোচনা সভা হচ্ছে।’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর