পাবনায় ধানের বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে ক্ষুব্ধ কৃষক

রাকিবুল হাসান, পাবনা প্রতিনিধি: পাবনায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে খুশি হলেও দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের মুখের হাঁসি ম্লান হয়েছে। উৎপাদন বেশী হওয়ায় এবার লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। এরই মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রান্তিক এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা।

বোরো ধানের দাম কমে যাওয়ায় এবং ঋণের জালে আটকে পড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ছে কৃষক। ফলে প্রান্তিক ও বর্গাচাষিরা এনজিও’র এক ঋন থেকে আরেক ঋণের জালে আটকে পড়ছেন। ফলে দাদনদারদের নিকট ধরনা দিয়ে নিতে হচ্ছে চড়া সুদে দাদন। ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য না হওয়ায় আবাদে লোকসান ও চড়া সুদের মাসুল গুনতে হচ্ছে কৃষকের। ফলে ঋণ পরিশোধ নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বর্তমানে পাবনার বিভিন্ন হাটে প্রতি মণবোরো ধান মান ভেদে ৫ শ’থেকে সাড়ে ৫ শ’টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবছর বোরো ধানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। হাটে ধানের চাহিদা নেই, ক্রেতা কম। বাজার দর নিয়ন্ত্রন করছে ফড়িয়া ও দালালেরা। ক্রেতার অভাবে চাষিরা কম দামে ফড়িয়া ও দালালদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

বর্তমান বাজার দরে ধান বিক্রি করে চাষিদের প্রতিমণ ধানে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। চাষিরা জানান সরকারী হিসাবে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৪০ টাকা। সরকার যদি সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ করেন তবে লাভবান হবে কৃষকেরা।

সরেজমিন
রবিবার,সোমবার ও মঙ্গলবার পাবনার নাজিরপুর, গয়েশপুর, সাদুল্লাপুর, দোগাছি,সাঁথিয়া,বেড়া ও ফরিদপুরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় মাঠকে মাঠ জুড়ে সোনালী ধানের শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। কোথাও কৃষক ধান কেটে আটি বাধছেন। আবার মাথায় করে বোঝা বেধে সে ধান নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। আবার কোথাও ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে। মেশিনে ধান খড় আলাদা করে তা রোদে শুকাচ্ছেন কৃষক কৃষাণীরা

পাবনা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায় এ বছর জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ৫৮ হাজার ৬৫হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক জমির ধান কাটা কর্তন করা হয়েছে। কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ অঞ্চলের শ্রমিকরা বাড়তি লাভের আসায় অন্য জেলায় ধান কাটতে যাওয়াতে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে ধান কাটতে মাঠে নেমে পড়েছে। তবে এক বিঘা জমিতে ধান কাটতে যে খরচ হচ্ছে ধান বিক্রি করে তাতে আরও ঘর থেকে লাগছে।

সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ি গ্রামের কৃষক জিন্নাহ ও আজিজ মোল্লা বলেন, বোরো ধানের দাম কম হওয়ায় আমরা মহাজনের ঋণ শোধ করতে পারছিনা। তারা বলেন, প্রায় ৬শ’থেকে ৭০০ টাকা দিয়েও কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ধান মাড়াইওয়ালাকে দিতে হয় মণ প্রতি ২/কেজি করে ধান। ধান বিক্রি করে হিাসবে করে দেখেন খরচই উঠছে না তাদের।

বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুরহাটে গিয়ে কথা হয় হরিরামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নানের সাথে তিনি জানান প্রায় ১০ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। বিঘা প্রতি জমির সেচ খরচ তিন হাজার টাকা, চাষও রোপণে তিন হাজার টাকা, সার-বীজ-নিড়ানি-কীটনাশকসহ প্রায় দুই হাজার ৫০০ টাকা, কাটা মাড়াই চার হাজার টাকা এবং পরিবহন বাবদ ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। তিনি প্রতি বিঘাতে ধান পেয়েছেন ১৮থেকে ১৯মন। যার বর্তমান বাজার মূল্য সাড়ে নয় হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা। হিসাব করে দেখেন প্রতি বিঘা জমিতে তার লোকসান হয়েছে প্রায় দুই হাজার টাকা।

সদর উপজেলার দোগাছি ও দুবলিয়া গ্রামের কৃষক বাদশা ও মন্তাজ প্রাং জানান, ৮/১০ বিঘা করে বোরা ধানের আবাদ করেছি। ফলন ভাল কিন্তু উৎপাদিত ধানের দাম কমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের। এখন সার কীটনাশকের দোকানে হালখাতায় মহাজনের ঋণ শোধ নিয়ে চরম সংকটে আছি। পানির দামে ধান বিক্রি করে মহাজনের ঋণশোধ করতে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

পাবনার বোরা ধান খ্যাত অঞ্চল সিএন্ডবি চতুরহাট, কাশিনাথপুর,বাধেরহাট,কাজিরহাট,সাঁথিয়া, আতাইকুলা, সুুুজানগর, ধুুুলাউড়ি ও বোয়াইলমারীসহ বিভিন্ন হাটে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন কয়েকজন ব্যাপারির সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে হাটগুলোতে প্রকারভেদে প্রতিমণ মোটা জাতের বোরো ধান ৫শ’টাকা থেকে সাড়ে ৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে হাটে ধানের চাহিদা নেই, ক্রেতা কম। ধানের বাজার দর নিয়ন্ত্রন করছে ফড়িয়া ও দালালেরা। ক্রেতার অভাবে চাষিরা কম দামে ফড়িয়া ও দালালদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমান বাজার দরে ধান বিক্রি করে চাষিদের প্রতিমণ ধানে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এদিকে কৃষকের হাতে নগদ টাকা না থাকায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। চাষিরা জানান সরকারী হিসাবে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৪০ টাকা। সরকার যদি সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ করেন তবে লাভবান হবে কৃষকেরা।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের (খামারবাড়ী) উপ-পরিচালক আজাহার আলী জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি মওসুমে বোরো ধানের উৎপাদন ভাল হয়েছে। তবে দাম একটু বেশি হলে কৃষকের জন্য ভালো হত।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর