করোনা মোকাবেলায় উদ্যোক্তা উন্নয়নে বি’ইয়ার সময়োপযোগী অনলাইন কার্যক্রম

বাংলাদেশে তরুণ উদ্যোক্তা উন্নয়নের কথা বললে যে প্রতিষ্ঠানের নাম ভালবাবে আসে সে হলো বি’ইয়া-বাংলাদেশ ইয়ূথ এন্টারপ্রাইজ অ্যাডভাইস এন্ড হেল্পসেন্টার। কোভিড-১৯ বাংলাদেশে হানা দেওয়ার পর থেকেই তরুণ উদ্যোক্তাদেরকে ঘরে থেকেই ব্যবসা বাস্তবায়নে অনলাইন প্লাটফর্ম কিভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে সেই লক্ষ্যে অনলাইনভিত্তিক প্রশিক্ষণ, ওয়েবিনার সেশন, অনলাইন মেন্টরিং এবং ব্যবসার সমস্যা সংক্রান্ত সমাধানের সেবা প্রদান করছে বি’ইয়া।

২০২০ সালের মে মাস থেকে Google.org ও ওয়াইবিআই’র সহযোগিতায় রেপিড রেসপন্স এন্ড রিকোভারী প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের প্রায় ৫০০ তরুণ উদ্যোক্তাকে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করে তাদের উদ্যোগকে অনলাইনে পরিচালনার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ফলে, গত মে মাস থেকে গ্রামীণ ও শহর এলাকার কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারীর প্রায় ২০০ জন উদ্যোক্তা অনলাইনে ই-কমার্স এন্ড ডিজিটাল মার্কেটিং প্রশিক্ষণসহ অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন ওয়েবিনার সেশনে অংশগ্রহণ করেছে। এইসব ওয়েবিনরে সেশনে অনলাইন মার্কেটিং, অডিও-ভিডিও কনটেন্ট তৈরি, অনলাইন কাস্টমার কেয়ার সেবা, অনলাইন প্রমোশন ও যোগাযোগ, সরকারী প্রণোদনা প্রাপ্তি উপায়,ভেল্যু চেইন ব্যবস্থাপনা, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ব্যবসা পরিচালনায় বিবেচ্য বিষয়, মানরসিক স্বাস্থ্য ও অনলাইন ব্যবসা, অনলাইন ব্যবসা পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন সেশন পরিচালিত হচ্ছে।

এর ফলে তরুণ উদ্যোক্তারা ধীরে ধীরে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করে অনলাইনে নিজেদের ব্যবসা স্থানান্তর করার কৌশল ও আত্নবিশ্বাস পাচ্ছে যা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে আত্নবিশ্বাস ও দক্ষতার উন্নয়ন হচ্ছে।

কোভিড-১৯ মোকোবেলায় অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা বিষয়ে বি’ইয়া’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মেহেদী হাসান কিংশুক বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে এখন থেকে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনার করতে হলে অনলাইনের কোন বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যেই আমরা সুষ্ঠ পরিকল্পনার মাধ্যমে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা এই পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে উদ্যোক্তার জন্য সময়োপযোগি বিষয়গুলো অতি সহজ করে অনলাইনে পরিচালনা করছি।

এরই ধারাবাহিকতায়, বি’ইয়া এই প্রকল্পের আওতায় নিয়মিতভাবে অফিস চলাকালীন সময়ে অনলাইনে উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সমাধান বা নির্দেশনা প্রদানে এসএমই তথ্য সেবা পরিচালনা করছে। সেই সাথে রবি থেকে বৃহস্পতিবার দিন এবং রাতে বি’ইয়া পরিচালনা করছে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, ওয়েবিনার এবং অনলাইন মেন্টরিং কার্যক্রম। এই মেন্টরিং কার্যক্রমের মাধমে একজন তরুণ উদ্যোক্তা একজন অভিজ্ঞ পেশাজীবির সান্নিধ্যে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা পেয়ে থাকেন। অভিজ্ঞ মেন্টররা এই প্রথম অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে প্রকল্পের তরুণ উদ্যোক্তাদের মেন্টরিং সেবা দিয়ে যাচ্ছেন যা একজন তরুণ উদ্যোক্তার জন্য ভীষণ সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।

গুগল এর সহায়তায় এই প্রকল্পের ৫ দিন ব্যাপী অনলাইন প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করে জাহিদা অক্তার বান্নাহ বলেন, আমি কখনো অনলাইনে প্রশিক্ষন নিতে পারবো সে কথা ভাবতেও পারিনি। আমি বি’ইয়া’র উদ্যোগে ৫ দিনের অনলাইন ই-কমার্স এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষন গ্রহণ করে জেনেছি কিভাবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিকে মোকাবলো করে অনলাইনে ব্যবসাকে স্থানান্তর করতে হয়। এই প্রশিক্ষণের পর আমি অনলাইনে নিজের ব্যবসার পেইজ খুলেছি, এখন ব্যবসা পরিচালনা করছি অনলাইনে। আমার মধ্যে কোভিড পরিস্থিতির সময় যে ভয় ছিলো তা এই প্রশিক্ষণ গ্রহন করার পর কেটে গেছে।

কিশোরগঞ্জ থেকে ২টি অনলাইন ওয়েবিনরে সেশনে অংশ নিয়ে রিমা আক্তার বলেন, আমি কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে কোন অনলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিং ও ভেল্যুচেইন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করে নিজেকে ধন্য মনে করেছি। আমার মত তরুণ উদ্যোক্তার জন্য বি’ইয়া অনলাইনে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার বুদ্ধি, কৌশল ও আত্নবিশ্বাস যুগিয়েছে যা আমাকে জেলাশহর থেকে অনলাইনে ব্যবসা করার প্রেরণা দিয়েছে।

অনলাইন মেন্টরিং সেবা প্রসঙ্গে সম্ভাবনাময়ী তরুণ উদ্যোক্তা অর্পিতা বলেন, আমি ব্যবসা বুঝতাম কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতার জন্য আমি ব্যবসায় লোকসান করতাম। কিন্ত যখন থেকে মেন্টরের সাথে যুক্ত হলাম তখন থেকে আমি আমার ব্যবসাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছি। আমার মেন্টর আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহস যুগিয়েছে।

অনলাইন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের পর আরেক এক সম্ভাবনাময়ী তরুণ উদ্যোক্তা ড চিং চিং বলেন, আমি কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে খাপ খেইয়ে নিতে বি’ইয়া’র সহযোগিতা পেয়েছি। আমি ওয়াইবিআই’র বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তাদের সাথে ১৫ দিন ব্যাপী অনলাইন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে জানতে পেরেছি আমরা বিশ্বের অন্যান্য উদ্যোক্তার চেয়ে কম নই। আত্নবিশ্বাস, বুদ্ধিমত্তা আর সঠিক লক্ষ্য থাকলে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব। আমি সেই আত্নবিশ্বাস পেয়েছি বি’ইয়ার বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।

তরুণ উদ্যোক্তাদের মেন্টর নীলা তাবাচ্ছুম বলেন, আমি বি’ইয়া’র তরুণ উদ্যোক্তাদের মেন্টর। আমি এই মেন্টরিং কাজটি খুব উপভোগ করি। আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝি তরুণদেরকে এগিয়ে নিতে একজন ব্যবসায়িক গুরু বা মেন্টর কত প্রয়োজন। আমি যা শিখেছি তা ঠেকে শিখেছি, আমাকে কেউ পথ দেখায়নি। তাই আমি মনে করি আমার দায়িত্ব হলো তরুণ উদ্যোক্তাদেরকে প্রয়োজনীয় বুদ্ধি, পরামর্শ, তথ্য ও নেটওয়াকিং এর মাধ্যমে সহযোগিতা করা, এগিয়ে যেতে সাহায্য করা। এতে বেকারত্ব কমবে, তরুণরা এগিয়ে যাবে এবং আমি মানসিকভাবে শান্তিতে থাকবো। আর ভালো লাগে তরুণ উদ্যোক্তা অনলাইনে আমার সাথে মিলিত হয়ে বিভিন্ন সমস্যা আলোচনা করে সমাধান করতে পারছে।

চাকরি প্রার্থী হবে চাকরিদাতা-এই শ্লোগান নিয়ে বি’ইয়া’র পথ চলা শুরু হয় ২০০৭ সালে এবং ২০০৯ সাল থেকে বি’ইয়া ইয়ূথ বিজনেস ইন্টারন্যাশনাল-এর নেটওয়ার্ক সদস্য হিসেবে তরুণ উদ্যোক্তা উন্নয়নে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে গুগল.ওআরজির সহযোগিতায় গ্রামীণ ও শহরের তরুণ উদ্যোক্তাদেরকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সামাল দিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা এদেশের উদ্যোক্তা উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

বার্তাবাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর