ধানের বাম্পার ফলনেও চিন্তিত ঘিওরের কৃষকরা

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। নতুন ধানের স্বপ্নে আনন্দের পরিবর্তে বিষাদে ছেয়ে আছে কৃষকের মুখ। কারন এ উপজেলায় চরম শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।

শ্রমিক সংকটের কারনে সময় মত ধান কাটতে পারছে না অনেক কৃষক। কৃষকদের একমন ধানের দামেও মিলছে না ১ জন শ্রমিক। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের।উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে,উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫৯০ হেঃ। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ৬৬১০হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা গতবারের তুলনা ২০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। এবার ফলনও হয়েছে বাম্পার। হেক্টর প্রতি গড়ে ৬ থেকে ৮ মেট্রিক টন করে ফলন পাওয়া যাচ্ছে।

এ বছর ঘিওরে আবাদকৃত বিভিন্ন জাতের ধানের মধ্যে রয়েছে, উফশি, স্থানীয় এবং হাইব্রিড প্রজাতির ধান। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে ব্রিধান-২৮ ও ব্রিধান-২৯,৫০,৫৯,৬২,৬৩,৬৪। এ ছাড়া আবাদ করা হয়েছে উন্নতমানের জাত ব্রিধান-৫৮। জানা যায়, বাজারে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। কিন্তু শ্রমিক জন প্রতি মজুরী দিতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। সঙ্গে দুই বেলা খাবার। এতে গৃহস্থের শুধু ধান কাটাতেই প্রতিমনে ধানের খরচ পড়ছে ৮০০ টাকার মতো। অন্যান্য খরচতো (জমি চাষ, সেচ, চারা, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক) আছেই। চলতি বোরো মৌসুমে ঝড়, শিলাবৃষ্টি, পোকামাকড়, রোগবালাই নিয়ে কৃষকরা ছিল মহাবিপাকে।

এদিকে ধানের ফলন ভাল হলেও বর্গাচাষীদের তো মাথায় হাত। তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না।সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঘিওর উপজেলার কেল্লাই এলাকার চকে গিয়ে দেখা যায়, মোন্নাফ মিয়া নামে স্থানীয় এক কৃষক পাঁচ/ছয়জন শ্রমিক নিয়ে ধান কাটছেন। তিনি একজন বর্গাচাষি। নিজের কোনো আবাদি জমি নেই। অন্যের কাছ থেকে তিনি ২৪০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান আবাদ করেছেন।

তিনি জানান, ভাই ধান বুনা বাদ দিমু। ধান কাটার শ্রমীক পাওয়া বড়ই কষ্টের। ধান কাটার শ্রমীকের উচ্চমূল্য। মাথা পিছু শ্রমীকদের দেয়া লাগছে ৬ শত টাকা। তারপর খাবার তো বাকিই আছে।সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি থাকায় অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ধান কাটার কাজ করছে। প্রতিটি এলাকায় কম বেশি বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে।

বানিয়াজুরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের কৃষক কবির খান জানান, আমি এবার ৮বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। বাজারে ধানের চাহিদা ও বাজার মূল্য কম থাকায় আমাকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমাদের প্রতিমন ধান পেতে খরচ হচ্ছে ৮শ থেকে ৮শ ৫০টাকা। কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে। এরকম লোকসান হলে ভাবছি আর ধানের আবাদ করবোনা।

এ ব্যাপারে ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, বোরো আবাদের জন্য সবকিছুই অনুকূলে ছিল। বিদ্যুৎ, পানি, সার, বীজ-কোনো কিছুরই সমস্যা ছিল না। পোকা-মাকড়ও আক্রমণ করতে পারেনি। এসব কারণেই ধানের ফলন ভাল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বোরো ধানের দাম কম থাকায় আমরা কৃষকদের ধান ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষন করার পরামর্শ দিচ্ছি।

যাতে করে সংরক্ষিত ধান পরে বিক্রি করে দামটা ভালো পায়। আর শ্রমীকের সংকট আছে তার বিপরীতে কম্বাইন্ড হারবেস্টার মেশিন কৃষকদের সহজ ভাবে ধান কাটা মাড়াই সহ বস্তা প্যাকেট জাত করনে সহজ পদ্ধতিতে ধান উত্তোলনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর