কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা

শ্রমিকের চড়া মজুরি ও শ্রমিক সংকটের কারণে স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে সারাদেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জের প্রান্তিক কৃষক পড়েছেন বিপাকে। আর সেই ফসল নিয়ে বিপাকে পড়া দরিদ্র কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড সিরাজগঞ্জ শাখার নারীসহ প্রায় ৭৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।

শনিবার (১৮ মে) সকালে রায়গঞ্জ উপজেলার হাট পাঙ্গাসী এলাকার দরিদ্র কৃষকদের মাঠের পাকা ধান স্বেচ্ছায় কেটে ঘরে তুলে দেয় তাঁরা। জানা যায়,নারীসহ ব্যাংকের ৭৫ জন অফিসার এই ধান কাটায় অংশ গ্রহণ করেন। চাকুরীজীবি হলেও সবাই কৃষকের সন্তান তাই তাদের ধান কাটার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শ্রমিক সংকটের এই সময়ে অসহায় প্রান্তিক কৃষকদের ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলে দেন তারা ।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১ একর জমির ধান কেটে মাড়াই করে বাতাসে উড়িয়ে পরিস্কার করার কাজে অংশ গ্রহণ করেন নারী কর্মকর্তারাও । কৃষক আলামিন বলেন, ধান পেকে গেছে টাকার অভাবে দুই সপ্তাহ ধরে জমির ধান কাটতে পারছিলাম না। বৃহস্পতিবার ব্যাংকে কাজের ফাকে এই কথা বলাতে ফরিদ স্যার বললো ধান তারাই কেটে দিবে প্রথমে বিশ্বাস করি নাই। স্যারেরা আজ (শনিবার) আমার ৫২শতক জমির ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলে দিয়েছে। আমার প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ বেচে গেলো ধান কেটে ঘরে তুলে দেয়ায় আমি অত্যান্ত আনন্দিত ।

একই কথা জানালেন,প্রান্তিক কৃষক আব্দুস সামাদ। তিনি জানান,আলামিনের ধান কাটতে কাটতে পাশের জমিতে আমার ধান পাকা দেখে তারা কেটে দিতে চাইলে আমি রাজি হয়ে যাই তখন তারা আমার ৩৪ শতক জমির ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলে দেন।

সিরাজগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংক নিউ মার্কেট শাখার ক্যাশ কর্মকর্তা রেশমা ইসলাম বলেন, আমরাও কৃষকের সন্তান কৃষকদের এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেদেরও সৌভাগ্যবান মনে করছি ।

সিরাজগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স সমিতির শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদুল হক জানান,আলামিন আমাদের ব্যাংকের একজন গ্রাহক। কথায় কথায় তার সমস্যার কথা জানালে আমরা সবাই মিলে এই উদ্যোগ নেই। তিনি আরো বলেন,আমাদের এই স্বেচ্ছাশ্রম অব্যহত থাকবে এবং যে কোন প্রান্তিক কৃষক তাদের সহযোগীতা চাইলে ছুটির দিনে ধান কাটায় আমরা অংশ গ্রহণ করবো।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক সিরাজগঞ্জ অঞ্চল প্রধান এস.এম জহিরুল ইসলাম বলেন,আমাদের দেশ কৃষি প্রধান। কৃষকরা সাময়িক শ্রমিক সংকটে পড়েছে হয়তো সেটা কেটে যাবে। কৃষকের সন্তান হিসেবে সহযোগীতার জন্য আমরা শুধু তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমাদের সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।

এ দিকে স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কেটে দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই একাত্মতা ঘোষণা করে ধান কাটার কাজে অংশগ্রহণ করেন। সেচ্ছাসেবী অনেকেই বলছেন,স্বেচ্ছাশ্রমে এই ধান কাটা কর্মসূচিটা হলো একটি দৃষ্টান্ত ও অনুকরণীয়। ব্যাংকারদের মতো যদি বিভিন্ন পেশার মানুষ অসহায় কৃষকের ধান কেটে দেয় তাহলে কৃষকরা উপকৃত হবে। কারণ কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।

এদিকে স্বেচ্ছাশ্রমে ধানকাটা কর্মসূচিকে স্থানীয়রা ভবিষ্যতে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবং দেশের অন্যত্র এর অনুকরণ করে দেশের কৃষক বাঁচাতে সকল যুবসমাজকে আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।####

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর