নূরকে নিয়ে সবদলের টানাটানি

এবার ডাকসু নির্বাচনে হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন নুরুল হক নূর। কোন সংগঠন ছাড়াই ডাকসু নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তিনি বিজয়ী হয়ে চমক দেখিয়েছেন। এরফলে রাজনৈতিক দলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন নুর। একদিকে আওয়ামী লীগ তাকে যেমন আগলে রাখতে চাইছে, অন্যদিকে বিএনপিও দেখাচ্ছে নানা প্রলোভন। বাম দলগুলো কম যাবে কেন! বামদলগুলো মনে করছে, তাকে দলে ভেড়ানো খুব সহজ। তাকে ভেড়াতে পারলে বাম রাজনীতির মরা গাঙ্গে জোয়ার আনতে পারবে।

একাধিক প্রাক্তন ছাত্রনেতা মনে করছেন, অনেকদিন পরে ছাত্ররাজনীতিতে একটা চমক জাগানো মুখ দেখা গেল। কিন্তু নুর কি রাজনীতিতে টেকসই হবেন? নাকি রাজনীতিতে ক্ষণস্থায়ী ধুমকেতুর মতো হঠাৎ জ্বলে উঠে আবার নিবে যাবেন, সেটা ভবিষ্যতই বলে দিবে। তবে আপাতত এটা অনস্বীকার্য যে নুর অত্যান্ত জনপ্রিয় এবং ডাকসু নির্বাচনে কোন রকম রাজনৈতিক সংগঠন বা সমর্থন ছাড়া প্রায় একক জনপ্রিয়তায় তিনি সর্বোচ্চপদে বিজয়ী হয়েছেন। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের বেস্টনি ভেঙ্গে নূরের বিজয়টা একটা বড় বিস্ময়ই বটে। নূর একসময় ছাত্রলীগ করতেন বলে তিনি নিজেই দাবি করেছেন। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর ছাত্রলীগের সঙ্গে তার টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। নূর নিজেই বলেছেন, তিনি এখন ছাত্রলীগ করেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করছেন, নূরের মতো এরকম জনপ্রিয় নেতা যিনি ডাকসু নির্বাচনে সাংগঠনিক কোন ভিত্তি ছাড়াই বিজয়ী হয়েছেন তাকে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের হাতছাড়া করা উচিত নয়। তার মধ্যে নেতৃত্বর অনেক গুন আছে। ছাত্রদের মোহবিষ্ট করার ক্ষমতা তার রয়েছে। কাজেই ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আসা উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে গণভবনে ডেকে আদর করেছেন স্নেহ দিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাও তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছেন।

এই বিষয়ে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের অনেকেই মনে করছেন, নূর আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষপাত হবেন। এরকম রাজনীতির এই বন্ধ্যাত্বের সময় আগামী দিনে যদি নূরের মতো একজন নেতা পাওয়া যায় তাহলে নি:সন্দেহে ছাত্র সংগঠন শক্তিশালী হবে। কিন্তু নূর যে খাঁচায় বন্দি পাখি না, তা গণভবন থেকে বের হয়েই তিনি প্রমাণ করেছেন। গণভবন থেকে বের হয়ে তিনি আবার কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং বাম প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে তিনি ডাকসু নির্বাচনে যে কারচুপি এবং অন্যায্যতা সেটার প্রতিবাদ করেছেন। পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছেন। এখানে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ছাত্রদলের এবার ডাকসু নির্বাচনে যে ব্যাপক ভরাডুবি ঘটেছে, সেখান থেকে উত্তোরনের জন্য তারা নূরের মতো খঁড়কুটো আকরে ধরতে চাইছেন। তারা মনে করছেন, এরকম একজন ছাত্রনেতা যদি পাওয়া যায় বা কোটা সংস্কার আন্দোলনের কাউকে যদি ছাত্রদলে ভেড়ানো যায়, তাহলে হয়তো ছাত্রদলের হালে পানি আসতেও পারে। কারণ ছাত্রদল এই নির্বাচনে একটা গুরুত্বহীন ছাত্রসংগঠনে পরিনত হয়েছে। কাজেই নূরের সঙ্গে অনেক ছাত্রদল নেতা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। তাকে নানা রকম প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে, এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

কথিত আছে যে, নূরের সঙ্গে ইসলামিক ছাত্রশিবিরের গোপন যোগাযোগ আছে। ইসলামী ছাত্রশিবির এবার ডাকসু নির্বাচনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বিজয়ী করার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছিল। যদিও নূর নিজে বলেছেন যে, জামাত শিবিরের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই্। তারপরও কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে যে পৃষ্টপোষকতা এবং তাদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্র শিবির এবং জামাতের যে ভূমিকা আছে তা অস্বীকার করার কোন কারণ নেই। ছাত্র শিবিরও মনে করছে, রাজনীতিতে বেঁচে থাকতে গেলে এমন নূরের মতো আপাত নিরপেক্ষ সাধারণ ছাত্রদের কাছে জনপ্রিয় ছাত্রনেতা প্রয়োজন। সেজন্য নূরকে তারা সহসাই তাদের মুঠো থেকে ছেড়ে দিবেন, এমন ভাবার কোন কারণ নেই।

বাম রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এতদিন ধরে তাদের শক্তি এবং সামর্থ্যের একমাত্র জায়গা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হয়, প্রগতিশীল রাজনীতিকে লালন করা হয়। কিন্তু এবার ডাকসু নির্বাচনে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রদের কাছ থেকে তেমন কোন উল্লেখ করার মতো সমর্থন পায়নি। এই প্রেক্ষাপটে বাম ছাত্রসংগঠনগুলো মনে করছে, তাদের আসলে মূল সমস্যা হলো নেতৃত্বের সংকট। তারাও নূরের মতো একজন নেতা চাইছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে নূরের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। সেই সম্পর্ককে তারা আরও দীর্গ করতে চাইছেন। কিন্তু নূর তাদের সঙ্গে ওঠাবসা করলেও তাদের ডাকে এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে নূরকে কাছে টানার জন্য নানারকম প্রলোভন দিচ্ছেন, নানারকম প্রশংসা করছেন এটা হঠাৎই যেন একজন জাতীয় রাজনৈতিক নেতার মতো মর্যাদা পাচ্ছেন। এই চাপ কি সামলাতে পারবেন নূর? নাকি এই চাপে তিনি ভেঙ্গে পড়বেন এবং তার ছন্দপতন হবে? আমরা দেখেছি যে, তিল তিল করে যদি কেউ বেড়ে না ওঠে, হঠাৎ করে যদি কেউ নেতৃত্বের আসনে অসীন হন বা হঠাৎ করে কেউ যদি আলোচিত এবং আলোড়িত হন তাহলে তার পতনও হঠাৎ করেই হয়। নূর রাজনীতিতে কি টেকসই হবেন ? তিনি কি হতে পারবেন আগামী দিনের রাজনীতির আইকন? নাকি হঠাৎ ধুমকেতুর মতো তারও পতন হবে খুব শিগগিরই? সেটা দেখা যাবে ডাকসু কিভাবে চলে তার উপর।

— বাংলা ইনসাইডার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর