“ডিজিটাল বাংলাদেশে অ্যাপস বাঁচাবে সময়, থাকবেনা ভোগান্তি”

ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটি শুনতে একটা সময় অবাস্তব মনে হলেও আজ সেটা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি সেক্টরকে করা হচ্ছে ডিজিটালাইজড। প্রযুক্তির এই অগ্রগামীতায় নিত্য পরিবর্তিত হচ্ছে জটিল সব নিয়ম বা সিস্টেমের, করা হচ্ছে আধুনিক, সহজতর এবং সহজলভ্য। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ফলে আমাদের নিত্যদিন হচ্ছে সাবলীল।

ঢাকা শহরে কয়েকদিন আগেও আমাদের একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতের জন্য কার/ সিএনজি/ মোটর বাইক খোঁজাখুঁজি করে দরকষাকষি করে তারপর নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে হতো। এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমরা সেটি অ্যাপস ব্যবহার করে অনায়াসে ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়েছি। এছাড়াও এখন এ্যাম্বুলেন্স ডাকা, ট্রাক বা পিকআপ ভ্যান ভাড়া করা, সবই আমরা খুব সহজেই করতে পারছি অ্যাপস ব্যবহার করে। যার ফলে আমাদের ভোগান্তি কমে এসেছে অনেকাংশে। আরও কিছু সেবা যদি আমরা প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত করতে পারি তবে আমাদের জীবনযাত্রায় আসবে পরিবর্তন, বাঁচবে সময়, থাকবেনা ভোগান্তি।

মূলত একটি কিওয়ার্ড সার্চ অ্যাপস নিয়ে কথা বলতে চাই। এখানে একজন সার্ভিস হোল্ডার আরেকজন সার্ভিস প্রভাইডার থাকবেন। ধরি, আপনার কিছু ওষুধ প্রয়োজন। ডাক্তার আপনাকে একটি প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিয়েছে। এখন আপনাকে এই প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধের দোকানে যেতে হবে। এক দোকানে আপনি সব মেডিসিন নাও পেতে পারেন। আপনাকে প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরতে হবে এবং অপচয় হবে অনেক সময়। কারণ একই দোকানে সব ওষুধ সবসময় থাকে না। এতে করে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে।

অ্যাপসটি যদি এমন হয়, আপনি ঘরে বসে অ্যাপসের মাধ্যমে সার্চ দিলেন আপনার আশেপাশে কয়টি ওষুধের দোকান রয়েছে। ধরুন তিনটি ওষুধের দোকান আপনি দেখতে পাচ্ছেন মোবাইলের স্ক্রিনে। খুব সহজেই আপনি সেখান থেকে যেকোনো একটিতে ক্লিক করলেই সেই দোকানের বিস্তারিত তথ্য চলে এলো আর আপনি ফোন করে জেনে নিতে পারবেন কোন দোকানে কি কি ওষুধ রয়েছে, দাম কত ইত্যাদি তথ্য। এক দোকানে না থাকলে আপনি অন্য দোকানে খুঁজতে পারবেন ঘরে বসেই। আর যদি ওষুধ বিক্রেতার হোম ডেলিভারি সার্ভিস থাকে তাহলে তো আপনাকে আর ঘর থেকে বের হতে হলো না। প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরতে হলোনা।

অথবা আপনার যে ওষুধটি প্রয়োজন, আপনি সেই ওষুধটির নাম লিখে অ্যাপসের মাধ্যমে সার্চ দিলেন। আপনার মোবাইল স্ক্রিনে চলে এলো দোকানের নামসহ লোকেশন, ওষুধটি কোন দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। আপনি সেখানে ক্লিক করলেই দোকানের ফোন নাম্বারসহ ঠিকানা পেয়ে যাচ্ছেন।

এক্ষেত্রে ওষুধ বিক্রেতার ও আপনার, দুজনেরই অ্যাপসে আইডি থাকা লাগবে এবং দুইজনেরই অ্যাপস অন করে রাখা লাগবে। দুইজন দুইজনের লোকেশন দেখতে পারবেন। ওষুধ বিক্রেতার দোকানে কি কি ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর নাম সে তার আইডির কিওয়ার্ডে দিয়ে রাখবেন। আপনি সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন।

এরপর ধরুন, আপনি চুল কাটাবেন। তাহলে আপনাকে সেলুনে যেতে হবে। শুধু সেখানে গেলেই হবে না, যারা চুল কাটেন বা সেভ করেন তাদের হাত খালি থাকা দরকার। অন্যথায় আপনাকে অপেক্ষা করতে হতে পারে ঘণ্টার অধিক সময়। নাপিতদের অনেক সময় হাতে একসাথে অনেক কাজ থাকে, আবার কখনও বা খালি হাতে বসে থাকতে হয়।

অ্যাপসটি যদি এমন হয়, আপনি বাসায় বসে অ্যাপসের মাধ্যমে সার্চ দিলেন আপনার আশেপাশে কয়টি সেলুন আছে। যেসব সেলুনে সিট ফাকা আছে তারা অ্যাপস অন করে রেখেছে। আপনি ঘরে বসে লোকেশনসহ দেখতে পারবেন আপনার আশেপাশে কয়টি সেলুন ফাকা আছে। কোন সেলুনে আপনি প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারবেন। তিনটি বা চারটিই হোক আপনার মোবাইলের স্ক্রিনে দেখানো যেকোনো একটি ক্লিক করলেই চলে আসবে সেই সেলুন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আপনি সেখান থেকে ফোন করে বুকিং দিতে পারবেন বা আপনার সেলুনে পৌছাতে কত সময় লাগতে পারে বা তার হাতে যদি কাজ থাকে তাহলে কত সময় পারে সে ফ্রি হচ্ছে ইত্যাদি তথ্য।

এরপর মনে করুন, আপনার একটি দোকান আছে। তাহলে আপনাকে একটি সার্ভিস প্রোভাইডার আইডি খুলতে হবে এবং আপনি কি কি সার্ভিস দিয়ে থাকেন বা আপনার দোকানে কি কি পাওয়া যায় সেগুলো আপনি কিওয়ার্ডে দিয়ে রাখলেন এবং দোকান খোলার পরে অ্যাপসটি অন করে রাখলেন।

এখন আপনার দোকানের পাশে করিমের একটি দ্রব্য প্রয়োজন। করিম জানে না সেটা আপনার দোকানে এভেইলবেল। এক্ষেত্রে করিম তার আইডিতে ঢুকে সার্চ অপশনে গিয়ে ওই দ্রব্যের নাম লিখে সার্চ দিবে। আপনার ইনপুট করা কিওয়ার্ডের সাথে করিমের মোবাইলে সার্চ দেওয়া কিওয়ার্ড মিলে গেলেই করিমের মোবাইলে আপনার দোকানের লোকেশন দেখা যাবে এবং আপনি একটা নোটিফিকেশন বা কল পাবেন। করিম জানতে পারবে তার কাঙ্ক্ষিত দ্রব্যটি আপনার দোকানে রয়েছে। এরপর করিম আপনার সাথে যোগাযোগ করবে, অথবা আপনিই করলেন। তাহলে করিমের আর দোকানে দোকানে গিয়ে দ্রব্যটি খুঁজতে হচ্ছে না। সে তার একেবারেই নিকটে থাকা দোকান থেকে দ্রব্যটি ক্রয় করতে পারছে। আপনার কেনাবেচা বৃদ্ধি পেল আর করিমের সময় নষ্ট হলো না।

অ্যাপসের মুল উদ্দেশ্য টাইম সেভ করা। অযথা সময় নষ্টের হাত থেকে রেহাই পাওয়া। আপনার যে জিনিসের প্রয়োজন আপনি সার্চ দিন, আশেপাশে থাকা আপনার সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিস মিলবে খুব সহজে। এক্ষেত্রে সবার একই আইডিতে দুইটি পার্ট থাকবে: সার্ভিস হোল্ডার, সার্ভিস প্রভাইডার।

মনে করুন আপনি একজন ছাত্র। আপনি সার্ভিস হোল্ডার আইডির পাশাপাশি, সার্ভিস প্রভাইডারে টিউশনি/টিচার/হোম টিউটর দিয়ে রাখলেন। আপনার পাশের বাসার একজনের টিচার লাগবে। সে যদি আপনার ইনপুট দেওয়া কিওয়ার্ডের (টিউশনি/টিচার/হোম টিউটর) একটিতেও সার্চ দেন তাহলে আপনার আইডি দেখতে পাবে। যদি আপনার অ্যাপস অন করা থাকে তাহলে লোকেশন সহ আইডি দেখতে পাবে। আপনি বাসার পাশেই একটা টিউশনি পেয়ে গেলেন। আপনাকে দুর দুরন্তে আর টিউশনি খুঁজতে হচ্ছে না।

অপরদিকে, গুলশানের বেলাল ওয়ালটনের নতুন একটি মোবাইল প্রিমো জিএম থ্রি প্লাস কিনবে বলে গুলশানের বিভিন্ন দোকানে খুঁজে খুঁজে না পেয়ে অবশেষে অ্যাপসের মাধ্যমে সার্চ দিলেন ওয়ালটন প্রিমো জিএম থ্রি প্লাস লিখে। সাথে সাথেই সার্চ রেজাল্টে দেখতে পেলেন মহাখালীর রাসেল টেলিকমের লোকেশন দেখা যাচ্ছে। এরপর তিনি রাসেল টেলিকমের প্রোফাইল থেকে ফোন করে নিশ্চিত হলেন মোবাইলটি সেখানে এভেইলেবেল রয়েছে। দামের ব্যাপারটাও ফোনে সেরে নিলেন।

এইরকম কিওয়ার্ড সার্চ ও ম্যাপভিত্তিক একটি মোবাইল অ্যাপস তৈরি করতে খরচ হবে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা। অ্যাপসটি বাজারে আনতে পারলে একদিকে যেমন উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষ, ঠিক তেমনি লাভবান হবেন অ্যাপসটি বাজারে আনা প্রতিষ্ঠান। অ্যাপসে কি কি ফিচার থাকবে, কোন উপায়ে পরিচালিত হবে, পেমেন্ট সিস্টেম, অ্যাপস থেকে ইনকামের পদ্ধতিসহ বিস্তারিত পরিকল্পনা থাকা সত্বেও পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে আলোর মুখ দেখছে না জনহিতকর এই অ্যাপসটি। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে হয়তবা অ্যাপসটি বাস্তবে রূপ নেবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর