সিংগাইরে ইটভাটার বিষাক্ত ছোবলে কৃষকের স্বপ্ন পুড়ে ছাই

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে বিভিন্ন ইউনিয়নে নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা । বেশিরভাগ ভাটা আবার তিন ফসলি জমির উপর । তেমনি জামির্ত্তা ইউনিয়নের হাতনি গ্রামে অবস্থিত আব্দুল গফুর কোম্পানির GHB,মোঃ হাসান কোম্পানির THB, আমিন কোম্পানির AMCO, মোহাম্মদ আলী কোম্পানির নামের চারটি ইটভাটা ।

ওই ইটভাটার তাপদাহ ও বিষাক্ত গ্যাসে স্থানীয় হাতনি গ্রামের পাঁচটি বোরো প্রজেক্টের প্রায় ২শত বিঘা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে । তাপে ঝলসে গেছে পাকা, আধা-পাকা প্রায় সব ধান । পাকা ধান ঘরে তোলার পূর্ব মুহূর্তে এ ক্ষতিতে সাধারণ কৃষক হয়েছে সর্বশান্ত । ভাটার তাপে কৃষকের স্বপ্ন পুড়ে হয়েছে ছাই । পাকা ধানের বদলে দেখা দিয়েছে চিটা ধান । কোন কোন ক্ষেতে ধানের ছড়া আসার আগেই আগুনের ধোঁয়ায় দেখা দিয়েছে বিবর্ণ রং ।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, কৃষক ধার-দেনা করে জমি জমি কট রেখে হাল,সার,কামলা দিয়ে বোরো আবাদ করেছে । সেই ধান ঘরে তুলতে না পাড়ায় এখন কৃষকের মাথায় হাত । ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক দ্বারে দ্বারে ঘুরছে কিছু সাহায্য পাওয়ার আশায় । শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত আবেদন পত্র প্রেরণের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের কাছে ভাটা বন্ধের দাবিও তুলেছে সাধারণ কৃষক ।

তাদের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, হাতনি হুটইর মৌজার দক্ষিণ চকে ৪টি ইটভাটা রয়েছে । এসব ইটভাটার ঠিক উত্তর পাশে রয়েছে ৪টি ইরি প্রোজেক্ট । ইটভাটার ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের কারণে সারা বছরের কষ্টের ফসল সম্পূর্ণভাবে ঝলসে গেছে ।

কৃষক ও প্রোজেক্ট এর মালিক শওকত হোসেন জানান, ৩০ বিঘা জমিতে তিনি পানি দেন । এতে তিনি ৪ আনা শেয়ারে সাড়ে ৭ বিঘা জমির ধান পাবেন । ঋনের টাকায় ৮০ হাজার টাকা খরচ করে প্রোজেক্টে পানি দেন বলে তিনি জানান । এবার তার ঘরে ধান নেয়ার আশা গুড়েবালি ।আরেক কৃষক ইউনুস ভূঁইয়াসহ অন্যান্ন কৃষক জানান, ১ বিঘা জমি বছর কটে ৫ হাজার টাকায় রেখে ঋণ করে জমিতে ফসল ফলিয়েছি । ইটভাটার কারণে সবই এখন বিফলে গেছে ।

কিভাবে ঋনের টাকা শোধ করবো ভেবে পাইনা । এভাবে একেক জনের ৫ বিঘা, ৩ বিঘা, ৪ বিঘা করে প্রায় ২ শত বিঘার বোরো ধান ঝলসে গেছে। এব্যাপারে জামির্ত্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম রাজু বলেন, ইটভাটার জলন্ত চুলা যখন হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হয় ।

তখন আগুনের তাপ ও কালো ধোঁয়ার ছাই বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ধানের ক্ষতি হয়েছে । যদি ১৫ দিন পরে বন্ধ করা হতো তাহলে ধানের ক্ষতি হতো না । তিনি আরো বলেন, কৃষকের বড় ধরনের ক্ষতি হলেও আমাদের দলের কোন নেতা সেটা আমলে না নিয়ে ভাটার মালিকের কাছ থেকে চাপ দিয়ে কিভাবে ফায়দা তুলা যায় সেটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো । তবে কৃষকরা যাতে ক্ষতিপূরণ পায় আমি সেটার ব্যবস্থা করবো ।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর