শৈলকুপার ভূমি অফিসে উত্তোলন করা হয় না জাতীয় পতাকা

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসটি নানা অনিয়মের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের তদারকি ও জবাবদীহিতা না থাকায় অনিয়মই আর দুর্ণীতি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিজের ইচ্ছেমত অফিস আসেন অফিসটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইচ্ছে হলে
অফিসে আসেন না হলে আসেন না। অফিস চলাকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না দিনের পর দিন। অফিস প্রাঙ্গন খাস ও জঞ্জালে পরিপূর্ন। মুল ফটকটি কোনদিনই খোলা হয় না। ভোগান্তীর স্বীকার হচ্ছে দুরদুরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে রোববার গিয়ে দেখ যায়, শৈলকুপা উপজেলার রয়েড়া বাজারে উমেদপুর ভূমি অফিসটি অবস্থিত। রোববার বেলা ১২ টা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মূল ফটকের পকেট গেট দিয়ে ঢুকতেই ভেতরে সুনসান নিরবতা। অফিস প্রাঙ্গনে বড় বড় ঘাস ও গাছে পরিপূর্ন। এক পাশে হাতল বিহীন একটি টিউবওয়লে। তার পাশেই আধাপাকা একটি টিনশেড অফিস। অফিসের গায়ে বাকা হয়ে দাড়িয়ে আছে পতাকা বিহীন একটি বাশ, তাতে নেই কোন রশি। দীর্ঘদিন এটি ব্যবহার হয় না। অফিস কক্ষে একজন নারী বসে কাগজপত্র নাড়াচাড়া করছেন অন্য সমস্ত চেয়ারগুলো ফাঁকা।

অফিসের কর্মকর্তা কোথায় আছেন, জানতে চাইলে নিজেকে অফিস সহকারী পরিচয় দিয়ে জোসনা খাতুন বলেন, দু’জন স্যারই ডিসি অফিসের মিটিং এ গেছেন।
মুঠোফোনে তহশিলদার নিশিত মজুমদারকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ডিসি অফিসে মিটিং সেরে কোর্টে এসেছি। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে উকিলের সাথে কথা বলছি। আজ আর অফিসে ফিরবো না।

এরপর আরেক তহশিলদার সুবাশ চন্দ্র সাহাকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ডিসি অফিসের মিটিং এ আছি পরে কথা বলেন। মিটিং তো শেষ অফিসে আসবেন না? বললে তিনি বলেন, লম্বা চওড়া মিটিং চলছে আজ আর অফিস হবে না, অন্য দিন আসেন।
অফিস চলাকালীন সময়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি কেন জানতে চাইলে জোসনা খাতুন জানান, আমি এ অফিসে দু’মাস কর্মরত আছি। আসার পর থেকেই পতাকা উত্তোলন করা দেখিনি। অফিসে পতাকা আছে কিনা তাও তিনি জানেন না।

অফিসটিতে খাজনা দিতে আসা বাহিররয়েড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ভাইট বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজের উপাধাক্ষ্য শেখ মো: আহসান হাবিব বলেন, আমি সকালে এসেছি। অনেক সময় বসে থেকে তহশিলদার সুবাশ চন্দ্র সাহাকে ফোন দিলে তিনি বলেন, আজ আর অফিসে আসবেন না তারা। আগামীকাল আসতে বললেন।
অভিযোগ উঠেছে, ওই অফিসের ২ জন কর্মকর্তায় সময় মত অফিসে আসেন না। নিজেদের ইচ্ছামত অফিস করেন। যে কারণে ভোগান্তীতে পড়ছে জমির খাজনাসহ অন্যান্য কাজে আসা সাধারণ মানুষ।

সেবা নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ভূমি অফিসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ন অফিসের কর্মকর্তারা তাদের খেয়াল খুশি মতো অফিস করেন। এটা সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করছে। খোদ সরকারি অফিস হলেও জাতীয় পতাকা টাঙ্গানো হয় না। এতে রীতিমত দন্ডনীয় অপরাধ। এই অফিসের কর্মকর্তাদের এই অনিয়ম আর দুর্ণীতির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক সাইফুর রহমান খানের কাছে অফিসটির দু’জন তহশিলদার কেউই অফিসে নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকাল ১০ টায় ডিসি অফিসে তহশিলদারদের নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত মিটিং ছিলো, যা অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তবে দু’জনকেই ডাকা হয়েছে কিনা তা মিটিং এর চিঠি দেখে বলতে পারবো। তবে মিটিং শেষে তাদেরকে অফিস করার কথা। যদি না করে সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর