স্বপ্নপূরণে বিভোর মাছ বিক্রেতা শাকিল

খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে শাকিল। নিজের বই পড়া শেষ করে বাবার সাথে মাছ ধরা ও বিক্রি করা যেন নৃত্যদিনের সঙ্গী। এরপর স্কুল না থাকলে তো কথায় নেই। আর এ জীবন যুদ্ধে জয় করেই ভবিষ্যৎ স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের কৈজুরি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. শাকিল আহমেদ। সে এ বছর ঠুটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার বাবা আব্দুল মান্নান মোল্লা একজন মাছ বিক্রেতা অপরদিকে মা হামিদা বেগম গৃহিনী ও ধান রাখা ডোল তৈরীর কারিগর।

নিজেদের কোন বাড়ি ও আবাদী জমি নেই। ৫ বারের যমুনা নদীর ভাঙ্গণে নদীগর্ভে সব বিলীন হয়ে তারা এখন নিঃস্ব । অন্যের ৪ শতক জমি বাৎসরিক ১ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে দো-চালা একটি ঘর তুলে কোনমতে মা-বাবাকে নিয়ে বসবাস করছে। তার এই অভাবনীয় সাফল্যে এলাকাবাসি হতবাগ হয়ে গেছে। সে আরো উচ্চ শিক্ষ গ্রহণ করে ভবিষ্যতে আর্মির বড় অফিসার হতে চায়। কিন্তু অর্থাভাবে তার সে স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা যোগাতে না পেরে তার লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে শাকিলের বাবা আব্দুল মান্নান মোল্লা জানান,অভাবের তাড়নায় প্রতিদিন রাতে এ ছেলেকে সাথে নিয়ে অন্যের নৌকায় যমুনা নদীতে মাছ ধরার জাল টানি। এতে বাবা-ছেলে মজুরি হিসেবে যে মাছ ভাগে পাই তার সাথে আরো কিছু মাছ কিনে সকালে কৈজুরি বাজারে বিক্রি করে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা আয় হয়। এ টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। তিনি আরো বলেন,তার ৪ ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে অন্যের সেলুনে কাজ করে যে পয়সা পায় তা দিয়ে স্ত্রী নিয়ে সে আলাদা খায়। দুই মেয়ে অন্যের বাড়িতে থেকে কাজ করে নিজেদের পেট চালায়। সব ছোট ছেলে শাকিল আহমেদ বাড়িতে থেকে কখনও আমার সাথে মাছ ধরা ও বিক্রির কাজ করে। কখনও আবার ওর মায়ের সাথে ধান রাখা ডোল তৈরী করে।

এ ভাবে কাজ করেই সে এ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। শাকিলের মা হামিদা বেগম বলেন,ছেলেকে কখনই দু‘বেলা পেট ভরে খেতে দিতে পারি নাই। প্রায়ই না খেয়ে স্কুলে গেছে। পরীক্ষার সময়ও অনেক দিন না খেয়ে পরীক্ষা দিতে গেছে। শাকিল জানায় খুব ছোট বেলায় বাড়িঘর যমুনা নদীতে ভেঙ্গে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন এক আত্নীয়র বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রান্না ঘরে রাতে বালিশ ছাড়া বাবার মার সাথে ঘুমিয়েছি। খেলতে গিয়ে তার ছেলে পা কাঁচে কেটে যাওয়ার অপরাধে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিলে আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পরি। অভাবের তাড়নায় বাবা আমাদের স্কুলে ভর্তি করে দিতে পারেনি। বড় ভাই অন্যের সেলুনে কাজ করে পেট চালায়। আমি খুব ছোট হওয়ায় স্কুলের বারান্দায় খেলতাম আর স্যারের পড়ানো খেয়াল করতাম। একদিন স্কুলের স্যার যখ পড়াচ্ছিল আ-তে আমটি আমি খাব পেরে।

তখন আমি বারান্দায় বসে জোরে জোরে বলছিলাম আ-তে আমি হব আর্মি অফিসার। তখন সবাই শুনে হাসে। স্যার সবাইকে থামিয়ে আমাকে জিজ্ঞাস করে আমি স্কুলে যাই না কেনো। আমি বলি আমরা খুব গরিব পড়ার জন্য টাকা পয়সা নেই,তাই আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেয় না। স্যার বলে কাল তুমি তোমার মাকে সাথে নিয়ে এসো। আমি তোমাকে ভর্তি করে নেব। তারপর মাকে সাথে নিয়ে গিয়ে স্কুলে ভর্তি হই। প্রথম থেকেই আমি খুব মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করি। ফলে ১ম শ্রেণী থেকে বাবা মায়ের সাথে কাজ করেও আমি ১০ শ্রেণী পর্যন্ত ভাল রেজাল্ট করি। পিএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে বৃত্তি পেয়েছি। জেএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছি।

সে আরো উচ্চতর লেখাপড়া করে বড় আর্মি অফিসার হতে চায়। কিন্তু অর্থাভাবে এখন তার উচ্চ মাধ্যমিকেই ভর্তি ও লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে। তাই সে এ ব্যাপারে হৃদয়বান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার মত আর্থিক সহযোগীতা কামনা করেছেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর