নরসিংদীতে অধিকাংশ এলাকায় টিউবওয়েল উঠছে না পানি

নরসিংদী জেলার বেশিরভাগ এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ নলকূপে উঠছে না পানি। বিকল্প উপায় হিসেবে কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও তোলা যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পানি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দাবদাহে এ অবস্থা আরো প্রকট হওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। এতে চরম দূর্ভোগ পড়েছেন স্থানীয়রা। পরিবেশগত নানা কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে বৃষ্টিপাত না হলে দ্রুত এ সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

স্থানীয়রা বাসিন্দা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, নরসিংদী জেলায় সাধারণত পানির স্তর গড়ে ২২ থেকে ৬৫ ফুট গভীরে। বেশিরভাগ এলাকায় পানির সাধারণ এ স্তরের গভীরে পৌছালেই পানির স্তর পাওয়ার কথা। কিন্তু বিগত ১০ বছর ধরে পরিবেশগত নানা কারণে, জেলার শহরাঞ্চল ও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অস্বাভাবিকভাবে নীচে নেমে গেছে পানির স্বাভাবিক স্তর। প্রতিবছর তীব্র দাবদাহে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এ অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করে থাকে।

প্রতি বছরের মতো এবারও জেলার বেশিরভাগ এলাকার অগভীর (৬১ মিটার পর্যন্ত) নলকূপে পানি উঠা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে নরসিংদী শহর, শিল্পাঞ্চল মাধবদী, পলাশ উপজেলা ও আশেপাশের এলাকায় পানি সংকট পৌঁছেছে চরমে। নিত্যব্যবহারের ও খাবার সুপেয় পানির সংকটে পড়ে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা।
শুধু অগভীর (৬১ মিটার পর্যন্ত) নলকূপে নয়, কোন কোন এলাকায় গভীর (৬১ মিটারের অধিক) নলকূপেও পানি ওঠানো যাচ্ছে না। বাড়তি ব্যয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করে দেড়শ থেকে ২ শত ফুট গভীরেও পানির সন্ধান মিলছে না বলে জানান ভুক্তভোগীরা। বাধ্য হয়ে এসব এলাকার মানুষ, প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করছেন পুকুর কিংবা ডোবা নালার পানি। নিরাপদ পানির সুব্যবস্থা করা না গেলে, অদূর ভবিষ্যতে পানি সংকট রাজধানী ঢাকার মতো আরো তীব্র আকার ধারণ করবে বলে আশংকা এলাকাবাসীর।

নরসিংদী শহরের পূর্ব ভেলানগর এলাকার বাসিন্দা মনিরুল হক বলেন, এপ্রিল মাস থেকে বৈদ্যুতিক মোটরে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। পরে বাধ্য হয়ে প্রায় ২ শত ফুট গভীরে সাবমার্সেবল পাম্প স্থাপন করেছি। ব্যয়বহুল হওয়ায় সবার পক্ষেতো এটা বসানো সম্ভব হচ্ছে না।

নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা এলাকার বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, আমাদের এলাকায় টিউবওয়েলে পানি ওঠানো বন্ধ হয়ে গেছে আরও অনেক আগেই। বিকল্প উপায় হিসেবে গভীর নলকূপে পানি উঠানো-ই সম্ভব হয় না। ব্যয় বহুল হওয়ায় সব মানুষের পক্ষেতো গভীর নলকূপ স্থাপন সম্ভব হয় না। শেখের চর এলাকার জয়নাল আবেদীন বলেন, টিউবওয়েল দূরের কথা এখন বিদ্যুৎচালিত পানির পাম্পেও পানি পাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠছে। প্রতিটি বাসাবাড়ীতে ব্যয়বহুল ১৮০-২২০ ফুট পর্যন্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হচ্ছে। অনেকে অন্যত্র থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন এবং গোসলসহ নিত্যপ্রয়োজনে ব্যবহার করছেন পুকুর ডোবা নালার পানি।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী বশির আহমেদ বলেন, নরসিংদী শিল্প ও কৃষি সমৃদ্ধ একটি জেলা। শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এ উত্তোলনের বিপরীতে বিশেষ করে শিল্পখাতে পানি উত্তোলনের বিপরীতে পূরণ না হওয়ায় পানির স্তর দিনদিন আশংকাজনকহারে নীচে নেমে যাচ্ছে। আগামী ১০ বছরে এ অবস্থা আরও প্রকট হয়ে রাজধানী ঢাকার পানি সমস্যার মত হতে পারে। তবে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে চলমান নদী খনন এবং ভূ-উপরস্থ পানির দুষণ রোধ ও ব্যবহার বৃদ্ধি হলে এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হতে পারে আশা করা যায়। এছাড়া বৃষ্টিপাত হলে এ অবস্থা থেকে কিছুটা পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর