সেশনজটে আটকে থাকা বেরোবি শিক্ষার্থীর আবেগঘন স্ট্যাটাস

প্রতিষ্ঠার ১১ তম বছরে এসেও সেশনজটের কবল থেকে মুক্তি পায়নি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে, সম্প্রতী বেশ কিছু বিভাগ সেশনজট কমিয়ে আনলেও কয়েকটি বিভাগে সেশনজট দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে, শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকেই এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ বিভাগের যেসব বিভাগে সেশনজট রয়েছে তাদের মধ্যে উইমেন এন্ড জেন্ডার স্ট্যাডিজ বিভাগ অন্যতম। ওই বিভাগের প্রত্যেকটি ব্যাচই জটে পড়েছে। তবে, সব থেকে বেশি জটে পড়েছে ২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা। তাদের ভর্তি হওয়ার সাড়ে ৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও তাদের স্নাতক শেষ হয়নি। এমনকি কবে শেষ হবে তারও নির্ধারিত সময় জানা নেই শিক্ষার্থীদের।

অথচ ওই ব্যাচে ভর্তি হওয়া অর্থনীতি, মার্কেটিং, ফিনান্স, ম্যানেজমেন্ট, একইউন্টিং, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স শেষ হয়েছে। আর অন্য বিভাগগুলোর মাস্টার্স শেষের দিকে। শিক্ষক স্বল্পতা, শিক্ষকদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সমন্বয়হীনতা, শিক্ষকদের আদর্শিক দ্বন্দ্ব, দায়িত্বহীনতা, জবাবদিহিতা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ওই বিভাগে সেশনজট দীর্ঘ হচ্ছে বলে জানিয়েছে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, বিভাগটিতে ৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন নারী। বিভাগের নারী শিক্ষকরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করতে পারেন না। ফলে সেশনজট দীর্ঘ হচ্ছে।

এদিকে, সেশনজটকে কেন্দ্র করে নিয়মিতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অসায়ত্বের কথা তুলে ধরছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গতকাল তেমনি একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন উইমেন এন্ড জেন্ডার স্ট্যাডিজ বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হয়ে সেশনজটে আটকে থাকা শিক্ষার্থী আব্দুল মোমিন। আব্দুল মোমিন সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সন্তান। বর্তমানে পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষপ ব্যক্তি তার পিতা অসুস্থতার সাথে লড়াই করছেন। তার মা’ও ভুগছেন জটিল সব রোগে। এমতাবস্থায় পরিবারের জন্য কিছুই করতে না পারার যন্ত্রণা তাড়া করছে মেধাবি মোমিনকে। মোমিনের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।

“মাঝে মাঝে খুব সুইসাইড করতে ইচ্ছে করে, কিন্তু ভয় আর কাফের হয়ে মরে যাওয়ার ভয়ে আর কিছু করা হয় না। এমন একটা সময়ে উপনিত, এখন আমার পরিবার কে সাপোর্ট করা খুবই প্রয়োজন। বাবা-মা দুইজনই অসুস্থ(বিশেষ করে বাবা, ঠিকমত হাটতে পারেন না)। একমাত্র উপার্জনকারি বাবার চাকুরির বাকি আর কয়েক মাস। বাড়িতে ফোন দিয়ে মেস ভাড়া আর মিলের টাকা চাইতেও লজ্জা লাগে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩-২০১৪ সেশনে ভর্তি হয়েছি কিন্তু এখনো অনার্স শেষ করতে ৫-৬ মাস লেগে যাবে যেখানে আমার সব বন্ধুরা মাস্টার্স শেষ করে এখন কেও চাকুরি করছে বা কেও চাকুরি খুজছে।

এই ৫-৬ মাসের মধ্যে বাবার চাকুরি শেষ হয়ে যাবে। বন্ধুমহলে কম প্রাধান্য পাওয়া, কালো আর খাটো হওয়াতে বাবা, মুরুব্বিদের টিটকারী, টিচারদের অবহেলা দেখেই বাদ দিয়েছি। বাড়ীর অর্থনৈতিক মন্দা, বাবার অসুস্থতা, দীর্ঘ সেশনজট,চাকুরির দুর্লভতা সব মিলিয়ে খুব বড় একটা হতাশার মধ্য দিয়ে দিনানিপাত করছি, যা অনেক সময় আত্নহুতির জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়। আমার এই পোস্ট দেখে অনেকের গা জ্বলবে, অনেকেই তেলবাজি করবে, অনেকেই অনুগ্রহ দেখাবে যা আমার একটু ও পছন্দ নয়। পারলে কিছু করে দেখান যাতে করে আমার মত কেউ আত্নহুতির চিন্তাভাবনা মাথায় না নেয়। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাপ মনে হয় বে,রো,বিতে ভর্তি হওয়া।”

এদিকে, আব্দুল মোমিনের ওই পোস্টে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন তার সহপাঠীসহ পরিচিতজন। তুষার আহমেদ নামের একজন লিখিছেন “আমাদের শিক্ষকরা সরকারী চাকরী করেন কিনা, মাস শেষে বেতন তুলতে তাদের লজ্ঝা হয় কিনা জানতে ইচ্ছা হয়। এরাই যখন নৈতিকতার বুলি আওড়ায় তখন আমাদের লজ্জা পায়।”দিব্য চেতনা নামের একটি আইডি থেকে মন্তব্যে বলা হয় “আমরা সবাই একই পথের পথিক, শুধু নির্বাক হয়ে তাকায় আছি তাদের দিকে”। জুয়েল আহমেদ লিখেছেন, “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যেনো আজন্ম পাপ। অনেক পাপের ক্ষমা আছে কিন্তু এই পাপের ক্ষমা নেই”!নুর ইসলাম সংগ্রাম লিখেছেন, “ প্রথমত এ ধরণের পরিস্থিতিতে পরাটা স্বাভাবিক! তবে তা হতে উত্তোরণেই বুদ্ধিমানের কাজ!

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর