বিদ্যুতের ভেলকি বাজিতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে নওগাঁবাসী। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারনে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নানা ভাবে। তবে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড বলেছে- হঠাৎ করে বাড়তি চাপের কারণে একটু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কোনো লোডশেডিং নেই।
দিনে কমপক্ষে ১৫/২০ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। এতে করে দিনে প্রায় ৬/৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এভাবে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার ফলে কলকারখানায় সুষ্ঠুভাবে কোন কাজ করা যাচ্ছে না। প্রচণ্ড গরমে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি সমস্যায় পড়েছে। এদিকে লোডশেডিংয়ে কারণে অফিস-আদালতেও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে।
গত ৬ মে থেকে রমজানের তারাবির পর থেকে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। বৈশাখের এই তপ্ত রোদ ও প্রচণ্ড গরমে অস্বস্তিতের মধ্যে রয়েছে মানুষ। নওগাঁতে প্রায় ৩৫-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। কাটফাটা রোদে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমেছে অনেকটা। সূর্যের প্রখর তাপ সহ্য করতে না পেরে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকেই।
শহরের উকিল পাড়া (বিহারী কলোনীর) হারুন চৌধুরী তার ফেসবুকে লিখেছেন, “বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কাছে চরম অসহায় আমরা। নিজেকে রোহিঙ্গা অথবা ছিটমহলের বাসিন্দা মনে হচ্ছে। রোদফাটা কষ্টের দিন শেষে রাতে একটু ঘুমানোর চেষ্টাও যেন পাপ এই শহরে। কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছা স্বাধীন বিদ্যুৎ দেয় আর টানে। কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজারো মানুষ প্রতিকার চেয়ে গলা ফাটাচ্ছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ডাবল লাইন আর সোলার সিস্টেমে বসবাস করেন শহরের বড় বাবুরা। তাদের ঘরের ঠান্ডা হওয়া এসিটা গরম হওয়ার আগেই বিদ্যুৎ আবার ঠিকই চলে আসে। তাই উনাদের খুব একটা কষ্ট পেতে হয়না। তবে কারও কাছে বৃথা প্রতিকার চাইবনা। শুধু দোয়া করি এ অবস্থার অবসান হোক…….”
শহরের বাঙ্গাঁবাড়িয়া কলেজপাড়ার আব্দুল মান্নান তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অনেকেই এখন সেহেরি রান্না করতেছে, আবার অনেক রোজাদার ব্যক্তি ঘুমাচ্ছে। মাঝ পথে বিদ্যুৎ চলে গেল। মেজাজটা কেমন লাগে। নওগাঁর বিদ্যুৎ কি খুব মহঙ্গা….???’
উকিলপাড়া মহল্লার রিফাত হোসাইন সবুজ তার ফেসবুক লিখেছেন, ‘আমরা গরম আর অন্ধকার খুব পছন্দ করি। তাই সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ বিভাগ হাডুডু খেলছে নওগাঁবাসীর সঙ্গে।’
শহরের খাস-নওগাঁ মন্ডলপাড়া মহল্লার মৌসুমি সুলতানা শান্ত বলেন, দিনে ২০/২৫ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর বিশেষ করে নামাজের সময় ও রান্নার সময় বিদ্যুৎ থাকছেনা। প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এটার সুষ্ঠু সুরাহা হওয়া দরকার।
সদর উপজেলার বাচারী গ্রামের সোনারপাড়ার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ দিনে ২/৩ বার আসা-যাওয়া করে এবং ৫-৭ মিনিটের মধ্যে চলে আসে। তবে তেমন কোনো লোডশেডিং নেই বললেই চলে। বিশেষ করে নামাযের সময় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির-১ জেনারেল ম্যানেজার এনামুল হক বলেন, গত বুধবার ছিল চাহিদা ৬৫ মেগাওয়াট এবং বৃহস্পতিবার ছিল ৬১ মেগাওয়াট। কোনো লোডশেডিং নেই। চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড নওগাঁর প্রকৌশলী মুনির হোসেন বলেন, রমজানে বিশেষ করে বিকেলে ও সেহেরিতে একই সময় রান্না করা হচ্ছে। এতে করে ট্রান্সফর্মারে লোড পড়ছে। ফলে শহরের উকিলপাড়া, ডিগ্রীর মোড় ও কাঁঠাল তলীতে ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেছে। এছাড়া কয়েক জায়গায় তার পড়ে গেছে। আমাদের চেষ্টার কোনো ক্রটি নেই। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিদ্যুৎ সরবরাহে কোন রকম সমস্যা নেই।