বিলুপ্তির পথে ২০ দলীয় জোট?

দেশের রাজনীতিতে চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বিএনপির দলগতভাবে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শপথ নিয়েছেন পাঁচ নির্বাচিত প্রতিনিধি। এর পর থেকেই ২০ দলীয় জোটে ভাঙনের সুর বেজে উঠে। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ২০ দলীয় জোটের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের পর এবার জোট ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন আরেক শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টি। ফলে বিলুপ্তির পথে হাঁটছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

গত ২৯ এপ্রিল বিএনপির চার নেতা একযোগে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়। তবে এর পরপরই দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল দাবি করেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশে শপথ নিয়েছেন তারা। যদিও তিনি নিজেই শপথ গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। পরবর্তীতে মির্জা ফখরুল গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে আমরা অতীতে বলেছিলাম যে, আমরা যাব না। সেই সিদ্ধান্ত ওই মুহূর্তে সঠিক ছিল না।

এদিকে বিএনপি নেতাদের শপথ গ্রহণের পরই ভাঙনের কবলে পড়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সংসদে যোগ দেয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে দীর্ঘদিনের পুরানো মিত্র বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিকে (বিজেপি) হারায় তারা। বিজেপি ৩টি অভিযোগের ভিত্তিতে ২০ দল ত্যাগ করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ।

তিনি বলেন, তিনটি কারণে এই সিদ্ধান্ত। অতিমাত্রায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে গেছে (বিএনপি), ২০ দলীয় জোটের কর্মকাণ্ড শুধু সহমত, সংহতি ছাড়া তেমন কিছুই নয়; ‘প্রহসন ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন’ এরপর সংসদে যাওয়াটা নৈতিকভাবে ঠিক হয়নি বলে মনে করি এবং সংসদে বিএনপি যে যাবে, এটা আমার দল শুধু নয়, জোটের কেউ জানে না। এসব কারণেই জোট ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত।

এদিকে ২০ দলীয় জোটের সাথে বিজেপির সম্পর্ক ছিন্নের পরদিনই জোট ছাড়ার হুমকি দিয়েছে আরেক শরিক দল লেবার পার্টি। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে দলটির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমরা বিএনপিকে ড. কামালের ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার জন্য এবং কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কর্মসূচি দিতে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিচ্ছি। এর মধ্যে বিএনপি সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে ২৪ তারিখে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু আমার দল নয়, আমি যদি ২০ দলীয় জোটে না থাকি তাহলে আরও অন্তত ৪-৫টি দল এই জোট থেকে বেরিয়ে যাবে।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা দল এবং জোট পরিচালনায় চরমভাবে ব্যর্থ, এটা পরিষ্কার। আমরা ২০ দলীয় জোটকে কার্যকর রাখতে চাই। ২০ দলীয় জোট আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই জোটের কারণে আমি পাঁচবার গ্রেপ্তার হয়েছি। যুবলীগের হামলার শিকার হয়েছি। লাখ লাখ নেতাকর্মী হামলা মামলা গুম খুন অপহরণের শিকার হয়েছে। ২০ দলীয় জোটই আন্দোলন-সংগ্রামের পরীক্ষিত জোট। পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের কারণে জোটকে বাইরে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের একটা এজেন্ডা হচ্ছে এই ঐক্যফ্রন্ট।

বিজেপির জোট ত্যাগ এবং লেবার পার্টির জোট ছাড়ার হুমকি চলাকালীন সময়ে আগুনে ঘি ঢাললেন সাবেক ২০ দলের সাবেক জোট সঙ্গী বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)। এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ৫ মে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতেই বিএনপি ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ দেয়। যে দল একটি অনৈতিক নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যানের পর কোনো কোনো নেতাকে জাতীয় বিশ্বাসঘাতক, বেইমান বলে উল্লেখ করে মাত্র ১২ ঘণ্টায় সেই বেইমান ও মীরজাফরদের পথ অনুসরণ করে, তারা কী করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে? জোট রাজনীতিতে বিএনপি কখনোই বিশ্বস্ত ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এরশাদ বিরোধী ৭ দলের নেতৃত্বে বিএনপি থাকলেও সেদিন বিএনপি তার সহযোগিদের যথাযথ সম্মান করতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে গঠিত ৭ দলের নেতাদের সাথেও বিএনপি বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল।

গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, যারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে খুনি মনে করে ও বিশ্বাস করে; যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দায়ী করেছে এবং করে; যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা থাকাকালীন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যার ফলশ্রুতিতে তিনি আজ জেল খাটছেন; সেই ড. কামাল গংদের পেয়ে বিএনপি তার পুরোনো মিত্রদের অবহেলা করা শুরু করেছে। তার প্রতিবাদে ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ন্যাপ জোট ত্যাগ করেছিল। সোমবার বিজেপি সেই একই যুক্তিতে জোট ত্যাগ করে প্রমাণ করল বিএনপি বিশ্বস্ত বন্ধু নয়। তারা নিজেরদের সুযোগ ও সুবিধার জন্য তাদের পরীক্ষিত বন্ধুদেরও ফেলে দিতে কুণ্ঠিত হয় না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ঐক্যফ্রন্টের সাথে বেশি সখ্যতার কারণে উভয় সংকটে পড়েছে বিএনপি। একদিকে ঐক্যফ্রন্টের সর্বোচ্চ নেতা ড. কামাল বিএনপিকে অবমূল্যায়ন করছেন অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সখ্যতার কারণে ২০ দল ছাড়ছেন জোট সঙ্গীরা। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় বিএনপি সব থেকে খারাপ সময় পার করছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর