মেয়ের হত্যার বিচার চাইতে আর ইচ্ছে করে না

তদন্ত আর ডিএন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ৩ বছর পূর্ণ হলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মেধাবী ছাত্রী ও নাট্য কর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘ ৩ বছরেও কোন কুল কিনা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তনুর পরিবারের সদস্যরা।

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, আমার নিরপরাধ মেয়েটার হত্যার কথা মনে হলে এখনো নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। এখন আর কারও কাছে আমার সন্তানের হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে ইচ্ছা করে না। বিচার চাইতে গেলে নিজেদেরই অপরাধী মনে হয়।

তিনি বলেন, এখন আর তনু হত্যা মামলার কোন তদন্ত কমর্কতার খোঁজ নেয় না। শুধু সাংবাদিকদের প্রয়োজন হলে ফোন দিয়ে খোঁজ-খবর নেন।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা শুধু এখন বসে বসে তনু হত্যাকাণ্ডের মাস গুনি। কোথাও কোনো আশার বাণী শুনতে পাই না। মেয়ের শোকে তার বাবা আর আমি খুব অসুস্থ। দেশে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে বিচার চেয়েছি। মেয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি। ৩ বছর পার হয়ে গেছে। এখনও বিচারে কোনো আলোর মুখ দেখিনি।

জানা যায়- ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় তনু। পরে রক্তমাখা লাশ উদ্ধার করে। রদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল।

পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ -২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি। তদন্ত আর ডিএন পরীক্ষা করতে করতে ৩ বছর পাড় করে দেয় সিআইডি পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডিকে এখন মোবাইলে কল দিয়ে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেছেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম।

তিনি বলেন, প্রায় এক বছর ধরে সিআইডির সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। অফিসে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায় না। ফলে তদন্ত সম্পর্কে কিছুই জানতে পারতেছি না। সর্বশেষ যখন সিআইডির সঙ্গে কথা হয়েছিল তখন বলেছিল তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ চলতেছে। বিচারের আশায় তাই চুপ করে বসে আছি।

তিনি আরও বলেন, তনুর বাবা এবং আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছি। মৃত্যুর আগে মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারব কিনা জানি না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মেয়ের হত্যার বিচার চাওয়ার সুযোগ পেলে শান্তি পেতাম। আমার নিরাপরাধ মেয়ের হত্যার বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’

তনুর মা আরও বলেন, ‘সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকারীকে বেরিয়ে আসবে। কারণ সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় টিউশনি করতে যাওয়ার পর জঙ্গলে তনুর মরদেহ পাওয়া যায়।

গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার মুখপাত্র খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, তনু হত্যা মামলা নিয়ে সিআইডি যেন নিস্ক্রি হয়ে পড়েছে। এমনটি আসলেই দুঃখজনক।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদের কার্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি। এরপর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করননি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর