বহিরাগত দালাল দিয়ে চলছে ভুমি অফিসের কার্যক্রম নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মানুষ এক সময় কৃষি চাষের উপর নির্ভর ছিলো। বর্তমানে পুর্বাচল উপ-শহরসহ বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প, শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে
এখানে শতাংশ প্রতি জমি দুই লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বেচা-কেনা হয়। ফলে ভুমি অফিসে প্রতিদিন শত শত নামজারি আবেদন জমা পড়ছে। আর এ নামজারি করতে গিয়ে অনেকে অনেক ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। হাজার হাজার টাকা গুনতে হয় জমির মালিকদের।
উপজেলা ভুমি অফিসের কার্যক্রম চলছে বহিরাগতদের দিয়ে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপুর্ন পদ শুন্য থাকার সুযোগে বহিরাগতরাও অফিস গুলোতে দাবরে বেড়াচ্ছে। আর সরকারী ভাবে লোকবল সঙ্কটের কারনে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। বর্তমানে বহিরাগতদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে জমির মালিকরা। আর বহিরাগতদের দিয়ে ভুমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
উপজেলা ভুমি অফিস সুত্র জানায়, ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে ঘঠিত রূপগঞ্জ উপজেলাটি। এখানে মোট ৯টি ইউনিয়ন ভুমি অফিস রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ভুমি অফিসে সহকারী কর্মকর্তা ১ জন, উপ-সহকারী কর্মকর্তা ১জন ও অফিস সহায়ক ২ জন থাকার নিয়ম রয়েছে। দেখা যাচ্ছে ৩৬ পদের মধ্যে ১০টি পদই শুন্য। এছাড়া সার্টিফিকেট সহকারী ১ জন, অতিরিক্ত সার্টিফিকেট সহকারী ১জন ও চেইনম্যান ১জনের পদ শুন্য রয়েছে। শুধু তাই নয়, গুরুত্বপুর্ণ পদ হিসেবে কানুনগোর পদটি এখানে শুন্য রয়েছে। বর্তমানে সার্ভেয়ার জামাল উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত কাননগো হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ভুমি অফিসে নামজারি করতে আসা জমির মালিকরা জানান, তারা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সহকারী কমিশনার (ভুমি) আসাদুজ্জামান এ বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারী পদন্নতি নিয়ে বদলি হয়ে চলে যান। এরপর সহকারী কমিশনার (ভুমি) হিসেবে গত ২৩ এপ্রিল যোগদান করেন তরিকুল ইসলাম। মাঝখানে ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ইউএনও মমতাজ বেগম। এছাড়া কাননগো জুলফিকার আলী গত ২৭ মার্চ বদলি হয়ে সাভার ভুমি অফিসে যোগদান করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাননগোর পদটি শুন্য রয়েছে।
সার্ভেয়ার জামাল উদ্দিন সার্ভেয়ারের দায়িত্বের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত কাননগো হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পদ শুন্যসহ এসব নানা কারনে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয়েছে জামির মালিকদের। ভুক্তভোগী জমির মালিকরা আরো জানান, এর আগে তৎকালীন ইউএনও (বর্তমানে এডিসি ঢাকা) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) (বর্তমানে ইউএনও শিবচর) আসাদুজ্জামান দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে নামজারিসহ ভুমি সংক্রান্ত বিষয়ে অতি সহজেই সমাধান পেয়ে গেছেন জমির মালিকরা। এছাড়া সরকারী বিপুল পরিমাণ জমি উদ্ধার করেছেন। তারা এখান থেকে চলে যাওয়ার পর থেকেই উদ্ধারকৃত জমি গুলো ফের বে-দখল হয়ে যাচ্ছে। হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে জমির মালিকদের। ভুমি অফিসের কার্যক্রম হযবরল অবস্থা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি ইউনিয়ন ভুমি অফিসে ২ থেকে ৪ জন লোকবল থাকলেও সেখানে কাজ করছেন ১০ থেকে ১৫ জন মিলে। এছাড়া উপজেলা ভুমি অফিসের একই অবস্থা। এসব বহিরাগত লোকজনকে অলিখিত ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন কতিপয় ভুমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর এসব বহিরাগতদের দিয়েই জমির মালিকদের বিভিন্ন কায়দা কৌশলে ফাঁদে ফেলানো হয়। আর ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেয়া হয় হাজার হাজার টাকা। টাকা না দিলেই নানা ভাবে হয়রানি করা হয় জমির মালিকদের। বহিরাগতদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। এ জন্য হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে দেয়। আর বহিরাগতদের দিয়ে ভুমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বহিরাগতদের দিয়ে হয়রানির শিকার বন্ধ এবং শুন্য পদ গুলো পুরণ করে ভোগান্তি কমানোর দাবি জানান জমির মালিকরা। এছাড়া জেলা প্রশাসক ও ভুমি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এ ব্যপারে সহকারী কমিশনার (ভুমি) তরিকুল ইসলাম বলেন, আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি। যে সব সমস্যা রয়েছে, সেসব সমস্যা গুলো সমাধান করা হবে। এ জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।