অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে এখন মাল্টার মর্গে

জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া এক জীবন কাহিনীর চিত্র। জীবন দিয়ে প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার মুলফৎগঞ্জ ইউনিয়নের কেদারপুর গ্রামের মান্নান খানের ছেলে ইমরান খান ওরফে সুজন। ইউরোপ মানে বিলাসিতা আর টাকার ছাড়াছাড়ি। এমনই এক নিদারুণ কষ্টের করুণ কাহিনী ফুটে উঠেছে।

বহু টাকার বিনিময় কিছু অসাধু দালাল চক্র সোনার হরিনের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি যুবকদের নিয়ে আসে ইউরোপের উদ্দেশে। নাম না জানা যুবকদের প্রথমে লিবিয়া প্রবেশ করায়। পরবর্তী সময়ে তাদেরকে গোপন অবস্থানে থাকতে হয়। কিছু সময় পাহাড়ের গুহায় অথবা মরুভূমির কোন এক বালুর ঘরেও ও থাকতে হয়। সবকিছুর ইতি ঘটিয়ে ১৬ই আগস্ট ২০১৮ইং তারিখে ৮৪ জন অবৈধ দেশি ও বিদেশি সঙ্গী নিয়ে ইমরান খান ও পাড়ি জমায় ভূমধ্যসাগরের বুকে। সেই উত্তাল ও ভয়ংকর সাগরের বুকে ৮৪ জন লোক ছোট একটি প্লাস্টিকের নৌকায় ৩/৪ দিন ভাসতে থাকে।

এমনই একটি ছোট নৌকায় একজনের উপর ৪/৫ জন বসতে বাধ্য হয়। এছাড়াও ছিল না প্রয়োজনীয় খাবার ও পানি। যেন মিলছে না কোন শেষ ঠিকানা, মিলছে না কোন বাঁচার ঠাই, তাই এ জীবন যুদ্ধ যেন এখানেই শেষ। ইমরানের খানের স্বাভাবিক অবস্থা পানির পিপাসায় এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।

২১শে আগস্ট তার বন্ধুদের কোলে ঠিকানাহীন সেই সাগরের বুকে জীবন যুদ্ধে হেরে যায়, একটি অসমাপ্ত ফুটন্ত জীবন। পরিশেষে, দিনের শেষে ভাসতে ভাসতে অজানা সাগরের ঠিকানায় মাল্টার কোস্ট গার্ডের কাছে ঠাঁই মেলে। অবশেষে সবাইকে ইউরোপিয়ান আইনের মাধ্যমে জীবিতদের আশ্রম কেন্দ্রে রাখা হয় এবং সেই মৃত্যু ইমরানকে মাল্টার সরকারি মর্গে রাখা হয়। কিছুদিন পরে বিষয়টি মাল্টায় বসবাসরত কিছু বাংলাদেশি নাগরিকের নজরে আসে, মসিয়ার রহমানের নেতৃত্বে ইটালিতে তার আপন বোন ও বাংলাদেশে তার ভাই শোভন খাঁন এর সাথে অনেকবার যোগাযোগ করা হয়।

কিন্তু তারা কোনোভাবেই মৃত ইমরান খানের লাশটি গ্রহণ করতে চায়নি কারণ টাকা খরচ হবে বলে। বিষয়টি সময়ের ব্যবধানে থেমে থাকে। কিছুদিন আগে মাল্টায় নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংগঠন হওয়ার পর সংগঠনের সভাপতি মশিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক আপেল আমিন কাওসার সহ আরো নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে পুনরায় ইমরান খানের বিষয়টি আলোচনায় আনেন।

গত ২ ও ৩ মে ২০১৯ তারিখে মাল্টার স্থানীয় সরকারি প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা হয়।

আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক মাল্টার প্রশাসনকে সাথে নিয়ে ইমরানের লাশটি শনাক্ত করে। তবে লাশটি দেশে পাঠাতে ৬/৭ লাখ টাকা খরচ হবে। তারপরও সকল প্রক্রিয়া শেষ করে এই মাসেই তারা ইমরান খানের লাশটি বাংলাদেশে পাঠাবেন। এ ব্যাপারে তারা মাল্টায় অবস্থানরত সকল বাংলাদেশিদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।ভূমধ্যসাগর-বাংলাদেশি-অবৈধ অভিবাসী-শরণার্থী

মাল্টা আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, আমরা এখানে অনেক বেশি ভোগান্তিতে ভুগছি। কারণ, আমাদের কোনো বাংলাদেশি প্রতিনিধি নাই, নাই কোনো দূতাবাসের সহযোগিতা। আমরা আশা করি, আমাদের ভোগান্তি অতি দ্রুত শেষ করার চেষ্টা থাকবে সরকারের। আমাদের এখানে অতি দ্রুত দূতাবাস এর সেবার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন পাসপোর্ট ও পাসপোর্ট নবায়ন করতে আমাদের অনেক দূরে যেতে হয়। আমরা কোনো দূতাবাসের সেবা পাচ্ছি না। আমাদের অনুরোধ, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করতেছি যে, আমাদের দূতাবাসের সেবা প্রদান করা হোক।

আজকে আমাদের যদি মাল্টায় দূতাবাস থাকতো তাহলে হয়তোবা ইমরান খানের লাশটার এতো কষ্ট হতো না। এটা অনেক সহজ হতো আমাদের কাজটা করতে। এইরকম অনেক ঘটনাই আছে আমরা দূতাবাস এর অবহেলায় অনেক কষ্ট করছি।

তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও আমরা কেন দূতাবাসের সেবা পাই না? আমাদের কেন গ্রিসের এথেন্স যেতে হবে সেবা নিতে? একটা পাসপোর্ট নবায়ন করতে আমাদের ১ হাজার ইউরো’র মত খরচ হয় যেতে আসতে।

তারা জানান, যারা নতুন পাসপোর্ট করবে এমন আছে ৩০০ জনের অধিক। যাদের ১৫ বছর ধরে পাসপোর্টের দরকার কিন্তু পাসপোর্ট করতে যেতে পারছে না। বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ মিলছে না, কিন্তু এই ব্যাপারে আমাদের কেউ কোনো সহযোগিতা করছে না। আমাদের এটা দাবি থাকবে মাল্টায় অতি দ্রুত দূতাবাসের সেবা চাই। এই ব্যাপারে অতি দ্রুত সমাধান চাই আমরা। আর যেন কোনো ইমরান খানকে মর্গে পড়ে থাকতে না হয়।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর