আবারও আলোচনায় ‘সুলতান মনসুর’

গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ডাসকুর সাবেক ভিপি, কেন্দ্রীয় আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। জয় বাংলার সাথে জয় ধানের শীষ ও সবার আগে শপথ এমন সব আলোচনার পর গণফোরামের সেই বহিষ্কারাদেশ ঘিরে দেখা দিয়েছে নতুন করে রহস্য।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মনসুর যোগ দেন গণফোরামে। এরপর নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। নির্বাচনের পর বিএনপি, গণফোরামসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শপথ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গত ৭ মার্চ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন গণফোরামের টিকিটে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। এরপরই তাকে গণফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়।

গণফোরামের সেই বহিষ্কারাদেশ এখনও বহাল রয়েছে। এর পরেই গত ২ এপ্রিল দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ গ্রহণ করেন গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সিলেট-২ আসন হতে নির্বাচিত মোকাব্বির খান। গত ২০ এপ্রিল গণফোরামের বৈঠকের পর তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত তাকে বহিষ্কার করা হয়নি। আর রোববার (৫ মে) গণফোরামের নতুন যে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে ঠাঁই হয়নি সুলতান মনসুরের। আর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী মোকাব্বিরকে করা হয়েছে সভাপতি পরিষদের সদস্য।

তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শপথ গ্রহণ না করার সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। শপথ গ্রহণ করেছেন বিএনপির পাঁচ সাংসদও। এরকম অবস্থায় যে শপথের জন্য সুলতান মনসুরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার হয় কিনা, এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা। অবশ্য গণফোরামের নতুন সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, সুলতান মনসুর যদি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন করেন, তবে তা বিবেচনা করা হবে।

একটি সূত্রে জানিয়েছে, গণফোরাম থেকে বহিষ্কৃৃত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর দলে ফিরতে যাচ্ছেন। শিগগিরই এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে। গণফোরামের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। এছাড়া শোকজ দেওয়া মোকাব্বির খানের বিষয়েও দলটি ইতিবাচক বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ২০০৯ সালের সম্মেলনে বাদ পড়েন দলীয় পদ থেকে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর অনেকেই মনে করেছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখানেই শেষ। তাই অনেক নেতাই সে সময় ভিন্ন পথ ধরেছিলেন। কিন্তু সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এ কারণে জীবনের বড় একটা সময় কাটাতে হয়েছে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ে আত্মগোপনে।

৭৫-এর পর প্রথম ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে ডাকসুর ভিপি হয়ে তিনি পাদপ্রদীপে এসেছিলেন। ১৯৬৮ সাল থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে যে রাজনীতি শুরু করেছিলেন তা আজও আছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী ঐক্যফ্রন্ট যোগ দিলেও লাখো সরকারবিরোধী কর্মীর সামনে আঙুল উঁচিয়ে বলেছেন-‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। বারবার জনসভায় উচ্চারণ করেছেন – ‘আজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে নিয়েই চলব।

সৎ, পরিচ্ছন্ন ও সুনীতির ব্যক্তি সুলতান মনসুর মেধাবী, আদর্শবান ও পরীক্ষিত ছাত্রনেতা হিসেবে আশির দশকে সারা বাংলাদেশ কাঁপিয়েছিলেন। নেতৃত্বগুণে শেখ হাসিনার কাছের মানুষ হতেও তার সময় লাগেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন। এর প্রমাণও দিয়েছিলেন সে সময়। দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনে তার সক্রিয় রাজনীতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

কিন্তু নেত্রীর আস্থাভাজন হয়েও ১/১১-এর পর সংস্কারপন্থী হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করা হয়। সে সময় সংস্কারপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ অনেকেই দলে ফিরে আসেন। কিন্তু ফিরে আসতে পারেননি ‘৭৫ পরবর্তী পরিস্থিতিতে অস্ত্রহাতে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধের ডাক দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং আশির দশকের কঠিন সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিকে সক্রিয় ও সুসংগঠিত করার কারিগর সুলতান মনসুর।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর