হোটেলে মিলল স্কুলছাত্রীর লাশ, প্রেমিকসহ আটক ৩

মাদারীপুরের শিবচরে একটি আবাসিক হোটেল থেকে ইন্নি আক্তার নামে নবম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রেমিক রুবেল খান ও আবাসিক হোটেলের দুই কর্মচারীকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত রুবেল নিজেকে মেয়েটির প্রেমিক পরিচয় দিয়ে ওষুধ সেবনের পর দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে পালিয়ে যায় বলে দাবি করে।

পুলিশসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, রবিবার দুপুরে জেলার শিবচর পৌর বাজারের ৭১ উৎসব আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রুবেল খান ও ৯ম শ্রেণীর স্কুলছাত্রী ইন্নি আক্তার নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রেখে তৃতীয় তলার ৩০৫ নম্বর আবাসিক রুমটি ভাড়া নেয়। সন্ধ্যায় হোটেলের কর্মচারীরা ওই রুমের সামনে গেলে রুমের দরজা খোলা দেখতে পায়।

এ সময় রুমের ভেতর উঁকি দিলে স্কুলছাত্রীকে একা রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় তারা। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাতে লাশটি উদ্ধার করে। পরে পুলিশ হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে, স্কুলছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ও তার ব্যাগে থাকা ডায়েরি পড়ে নিশ্চিত হয় রুবেল খান নামক এক যুবকের সঙ্গেই মেয়েটি আবাসিক হোটেলে আসে। পরে পুলিশের একাধিক টিম রুবেলকে গ্রেপ্তারে মাঠে নামে।

পরিদর্শক (অপারেশন) আমির হোসেন, এসআই খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে শিবচর থানা পুলিশের একটি দল কাঠালবাড়ি লঞ্চঘাট এলাকা থেকে লঞ্চ মালিক সমিতির সহায়তায় রুবেলকে আটক করে। রুবেল লঞ্চ ঘাটে সুপারভাইজার পদে চাকরি করতো। রুবেল শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাংলাবাজারের তোতা খানের ছেলে। আর ইন্নি আক্তার শিবচর উপজেলা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী। সে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পশ্চিম নাওডোবা মুন্সীকান্দি গ্রামের মৃত ইলিয়াস মুন্সীর মেয়ে। তার মা শিবচর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের কর্মচারী। তারা শিবচর পৌরসভার স্বাস্থ্য কলোনীতে ভাড়া বাসায় বসবাস করে।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হোটেল ম্যানেজার খায়রুল, হোটেল বয় রোনাল্ডকে আটক করেছে পুলিশ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন, ওসি জাকির হোসেন, পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

স্কুলছাত্রীর এক সহপাঠী ঘটনার সূত্র জানিয়ে ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেন, ও রুবেলের সঙ্গেই এখানে এসেছে। এর আগেও ও এখানে এসেছিল।

স্কুলছাত্রীর মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার মেয়েকে রুবেল মাইরা ফেলছে। আমি ওর ফাঁসি চাই।

অভিযুক্ত রুবেল খান জানায়, ইন্নির সঙ্গে আমার প্রেম ছিল। আমরা মিথ্যা পরিচয় দিয়ে হোটেলে উঠছি। সম্পর্কের একপর্যায়ে অনেক রক্তপাত দেইখা আমি ওরে থুইয়া পালাইছি।

থানায় উপস্থিত কাদিরপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিএম জাহাঙ্গীর বেপারি বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তির ফাঁসি চাই।

শিবচর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আমির হোসেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল ইন্নির সঙ্গে প্রেমঘটিত ও দৈহিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছে। আজও ওদের মধ্যে সম্পর্ক হয় এক পর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে পালিয়ে যায় বলে আমাদের জানিয়েছে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।

শিবচর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত রুবেল ও হোটেলের দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুরতহাল সম্পন্ন হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর