নোয়াখালীর উপকূলে ২ সহস্রধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, নিহত দুই

সুপার সাইক্লোন “ফণীর” ঝড়ো ও ঘূর্ণি বাতাসে নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সূবর্ণটর, হাতিয়া, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সদর উপজেলার উপকূল সংলগ্ন দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে বিভিন্ন এলাকায় সহস্রধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

এ সময় নিহত হয়েছে দুই শিশু। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক লোক। ঝড়ে বিধস্ত হয়েছে শতাধিক বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মাঠের ফসল। ভোর রাতের দিকে চর ওয়াপদা ও চর জব্বর ইউনিয়নে প্রচন্ড ঝড়ে গাছপালা ও শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় ঘর চাপা পড়ে চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমিনুল হক চর আমিনুল হক গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে মো. ইসমাইল (২) নিহত হয়।

একই সময় চর জব্বর ইউনিয়নে অন্তত ৩০ জন আহত হয়। আহতদেরকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নোয়াখালী জেলা প্রসাশনের পক্ষে থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, সকাল ৯টার দিকে গাছের ঢাল পড়ে চর কাঁকড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবু হানিফের মেয়ে নাজমুন নাহার (১২) নিহত হয়। সে একটি বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্রী।

এতে ওইসব অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। এখনো স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি বলে ক্ষতিগ্রস্থরা জানিয়েছে।

শনিবার (০৪ মে) ভোর রাতে জেলার উপকূলীয় উপজেলার সমূহের মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকায় প্রবল ঝড়ো বাতাস নিয়ে ফণী টানা দুই ঘন্টাব্যাপী এ তান্ডব চালায়।

নিহত ইসমাইল সূবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমানউল্লা পুর গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে। আহতদের নামপরিচয় জানা যায়নি। তবে আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরীতে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে ।

স্থানীয় লোকজন ও বিভিন্ন সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। শনিবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করে জেলার সূবর্ণচর, কবিরহাট ও সদর উপজেলার কয়েকটি স্থানে ঝড়ে সাথে টর্নেডো আঘাত করে। এসময় সূবর্ণচর উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর আমানউল্লাপুর গ্রামে একটি ঘর ভেঙে পড়লে মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় চাপা পড়ে শিশু ইসমাইল নিহত হয়। এসময় ওই এলাকায় আরো ৩০ জন আহত হয় এবং শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।

এছাড়াও জেলার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ, জাহাজমারা, সোনাদিয়া, চরকিং, চর ঈশ্বর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ও উপকূল সংলগ্ন কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর, চর এলাহী, কবিরহাটে ধানসিঁড়ি, ধান শালিক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা, সূবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর, চর আমানউল্লাপুর, চর জব্বার, চর জুবলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এবং সদর উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম অ লের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় সহস্রধিক কাঁচা ও টিনশেডে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।

জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস জানান, ঝড় শুরুর আগ থেকেই জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দূর্যোগ মোকাবেলা সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হয়েছে। এখন দূর্যোগ পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্থদের দ্রুত সহায়তা প্রদান করা হবে। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, আহতদের চিকিৎসায় মেডিকেল টিম কাজ করছে। আজকের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে শুকনো খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর