মেয়রের আশ্বাসেও সড়ক ছাড়েনি শিক্ষার্থীরা

রাজধানীর প্রগতি সরনি সড়কে বাসচায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা।তারা ঘাতক বাসচালক ও চালকের সহকারীর ফাঁসিসহ ১২ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছে।ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এসব দাবির বেশিরভাগ পূরণের আশ্বাস দিলেও তারা সড়ক ছাড়েনি।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার কিছু পরে ঘটনাস্থলে যান মেয়র। তিনি বাসচালকের শাস্তি নিশ্চিত করা ও নিহত শিক্ষার্থী আবরার আহমদের নামে সেখানে একটি পদচারী-সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। তবে মেয়রের এই আশ্বাসে সাড়া দেননি অবরোধকারীরা।শিক্ষার্থীদের অনমনীয় অবস্থানের মুখে ফেরত যান মেয়র আতিকুল ইসলাম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা রামপুর-বাড্ডা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড তাদের হাতে রয়েছে।দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়েছে তারা।

রাজধানীর নর্দা-বসুন্ধরা এলাকায় দ্রুতগতিতে চালিয়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বাসের চাপায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবরার নিহত হন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালে (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিইউপির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তার বাবা আরিফ আহমেদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিইউপির একটি বাস সকালে বসুন্ধরা এলাকায় সড়কে দাঁড়িয়েছিল। সকাল সোয়া ৭টার দিকে আবরার বাসে উঠতে যাচ্ছিলেন। এ সময় পাশে থাকা গাজীপুরগামী সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একই পরিবহনের অপর একটি বাসকে ওভারটেক করার জন্য বেপরোয়া গতিতে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটি চালাচ্ছিলেন চালক। দুর্ঘটনার পর নিহত ছাত্রের সহপাঠীরা বাসটি আটক করেন। এ সময় চালক ও হেলপার পালানোর চেষ্টা করেন। পরে চালক সিরাজুল ইসলামকে ধরে ফেলেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বাসচাপায় সহপাঠীর মৃত্যুর প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে রামপুরা সড়কের নর্দা-বসুন্ধরা এলাকায় সড়ক আটকিয়ে অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিশ্বরোড এলাকার পর থেকে গণপরিবহনগুলো আর সামনে এগোচ্ছে না।

শিক্ষার্থীরা সড়ক বন্ধ করে রাখলে বেলা ১১টার দিকে সেখানে যান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। বিভিন্ন আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে সড়ক ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এসময় বিইউপি শিক্ষার্থী অনিক সবার পক্ষ থেকে দাবি তুলে ধরেন। ১২ দফা দাবিতে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসচালক ও চালকের সহকারীর মৃত্যুদণ্ড ১০ দিনের মধ্যে কার্যকর করতে হবে, সুপ্রভাত ও জাবালে নূরের রুট পারমিট বাতিল করতে হবে, সিটিং সার্ভিস বন্ধ করতে হবে, স্টপেজের ব্যবস্থা করতে হবে, চালকদের ছবি ও লাইসেন্স গাড়িতে ঝুলানো থাকতে হবে, বসুন্ধরা গেটে পথচারী সেতুর ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতিটি জেব্রা ক্রসিংয়ে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো শোনার পর মেয়র আতিকুল বলেন, মাত্র সাত দিন হলো আমি দায়িত্ব নিয়েছি। আমি মেয়র নই, ভাই হিসেবে বলছি, আমাকে সময় দিন। আমাদের সচেতন হতে হবে। আপনাদের সব দাবি যৌক্তিক। আপনারা আমার সঙ্গে থাকলে আমি সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করব।

নিহত শিক্ষার্থীর নামে পথচারী সেতু করার আশ্বাস দিয়ে মেয়র বলেন, বসুন্ধরা গেটে যে ফুটওভার ব্রিজ হবে, সেটা আবরারের নামে হবে। দুই-তিন মাসের মধ্যে আমি এটি করে দেব। এসব প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস দিয়ে মেয়র শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ ছেড়ে দিতে বললে শিক্ষার্থীরা রাজি হননি।

তাঁরা প্রশ্ন রাখেন, জাবালে নূর পরিবহন এখনো চলছে। এখনো প্রতিদিন সড়কে প্রাণহানি ঘটছে। অবরোধকারীদের এমন মন্তব্যের পর মেয়র ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

মেয়র ও তার সঙ্গে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা এসময় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। শিক্ষার্থীরাও সড়কে অবস্থান অব্যাহত রেখে বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর