সৌদি আরবে নিহত নরসিংদীর তিনজনের বাড়িতে শোকের মাতম

সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় (বৃহস্পতিবার ২ মে) সকালে নিহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে ৩ জনের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায়। তাদের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দরিদ্র পরিবারগুলো।

নিহতরা হলেন- মনোহরদী উপজেলার তাঁরাকান্দি গ্রামের মান্নান মাঝির ছেলে জামাল উদ্দিন মাঝি, তাঁতারদি শেখেরগাঁও এলাকার রশিদুল হকের ছেলে ইমদাদুল হক ও ডোমনমারা খিদিরপুর এলাকার আব্দুল মান্নান শেখের ছেলে মো: আল আমিন।

নিহতদের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই তিন প্রবাসীর এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। শান্তনা জানাতে এগিয়ে এসেছেন আত্মীয় স্বজনসহ এলাকাবাসী। উপার্জনক্ষম প্রবাসী স্বজনের এমন মৃত্যুতে শোকে নির্বাক হয়ে আছেন স্বজনদের কেউ কেউ। শেষবারের মতো দেখার ইচ্ছায় সরকারের মাধ্যমে দ্রুত মৃতদেহ ফিরে পাওয়ার দাবি পরিবার ও স্বজনদের। পাশাপাশি সরকারের প্রতি দরিদ্র এই পরিবারগুলোর পাশে দাড়ানোর দাবী এলাকাবাসীর।

তাঁরাকান্দি গ্রামের নিহত জামাল উদ্দিন মাঝির শোকার্ত মা নূরজাহান বেগম বলেন, ১ শতাংশ ভিটেবাড়ী ছাড়া আর কোন সম্পদ না থাকায় পরিবারের সুখের আশায় ৫ লাখ টাকা ধার দেনা করে ২৯ দিন আগে ছেলেকে সৌদী আরবে পাঠিয়েছিলাম। প্রথম দিন কাজে যোগ দিতে যাওয়ার পথেই সড়ক দুর্ঘটনায় পরপারে চলে গেলো আমার ছেলে।

স্ত্রী দিলরুবা বেগম বলেন, ৪ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে আমি এখন অসহায় হয়ে পড়লাম। কে সংসারের হাল ধরবে? আমার স্বামীকে শেষবারের মতো দেখতে চাই, সরকার যেন দ্রুত আমার স্বামীর লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও নিহত জামালের চাচাতো ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, জামাল তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। ভাইয়েরা পৃথক পৃথক সংসার করছেন। পরিবারটি খুবই দরিদ্র হওয়ায় সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।

একইভাবে শোকের মাতম চলছে নিহত অপর দুইজন একই উপজেলার ইমদাদুল হক ও আল আমিনের পরিবারেও। অকালেই প্রাণ হারানোকে মেনে নিতে পারছেন না তারা। পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করতে সৌদী আরব যেতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হওয়া পরিবারগুলো পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়। সন্তান হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্বজনেরা। একদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারানো অপরদিকে ঋণের বোঝা যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থায় ফেলেছে তাদের।

বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে রিয়াদ থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে শাকরায় ১৭ জন বাংলাদেশিকে বহনকারী একটি মিনিবাস চাকা ফেটে উল্টে যায়। এতে নরসিংদী, নওগাঁ, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার ১০ প্রবাসী নিহত হন। তারা সবাই আল হাবিব কোম্পানি ফর ট্রেডিং কর্মাশিয়াল কন্ট্রাক্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর