রোজার আগে দাম বাড়ল চিনি-লবণ-ডালের

মেয়রের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ীরা রোজায় নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও গেল সপ্তাহেই চিনি, লবণ ও ডালসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে বলে মুদি দোকানিরা জানিয়েছেন।

এর সপ্তাহ দুয়েক আগেই পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম একধাপ বেড়েছিল, যদিও দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের আহ্বান জানিয়ে আসছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব।

মিরপুর বড়বাগে সুমন স্টোর নামের একটি মুদি দোকানের কর্মী আনোয়ার হোসেন শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত সপ্তাহে এসিআই, মোল্লা সল্টসহ কয়েকটি লবণের দাম বস্তায় (২৫ কেজি) অন্তত ১০০ টাকা বেড়েছে। আগে যেটা ৬০০ টাকায় পাওয়া যেত এখন তার জন্য দাম রাখা হচ্ছে ৭০০ টাকা।

অর্থাৎ ব্র্যান্ডের প্যাকেট লবণের পাইকারি মূল্য ২৪ টাকা থেকে বেড়ে ২৮ টাকা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এক কেজি প্যাকেট লবণের গায়ে দাম লেখা আছে ৩৫ টাকা।

একই চিত্র পাওয়া গেছে মহাখালী কাঁচাবাজারের মুদি দোকানগুলোতে। ব্যবসায়ীদের আশ্বাসে মেয়র বললেন, দাম বাড়বে না এদিকে টিসিবির বাজার মনিটরিংয়ের মূল্য তালিকায় আয়োডিনযুক্ত প্যাকেট লবণের দাম দেখানো হচ্ছে ২৫ টাকা থেকে ৩৮ টাকা।

বাংলাদেশ সল্ট মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন, বাজারে খোলা লবণ ৮ টাকা এবং প্যাকেট লবণ ১৫ টাকার মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব। কিন্তু গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর একক আধিপত্যের কারণে লবণের বাজার একেবারেই বিশৃঙ্খল।

“এখানে কৃষকের কোনো বাড়তি লাভ হয় না; মিল মালিকদের বাড়তি লাভ হয় না। লাভ করেন বিসিকের কিছু কর্মকর্তা আর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী,” লবণের বাজারে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন তিনি।

রোজায় দ্রব্যমূল্য যাতে না বাড়ে সেজন্য গত রোববার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। নগর ভবনের ওই বৈঠকে সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হাসেম, বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা ছিলেন।
ভোক্তারা রোজায় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ করার আগে তাদের পণ্যের মানের দিকটা খেয়াল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান।

তিনি বলেছিলেন, “বাজারে বিভিন্ন প্রকারের ছোলা বিক্রি হয়। যেগুলো দেখতে একেবারেই পরিষ্কার সেগুলো কেজি ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু যেসব ছোলা নরমাল বা দেখতে একটু কালচে সেগুলো পাইকারি ও খুচরাভেদে ৫৫-৬২ টাকায় বিক্রি হয়। একইভাবে তেল ও মসুর ডালের ক্ষেত্রেও তা বিদ্যমান।”

রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম কেমন থাকবে, তারও একটি তালিকা দিয়েছিলেন সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, রোজায় ছোলার পাইকারি মূল্য থাকবে কেজি প্রতি ৭০-৭৬ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৭৪-৮০ টাকা। চিনির পাইকারি মূল্য ৪৯ টাকা থেকে ৪৯ টাকা ৬০ পয়সা এবং খুচরা মূল্য ৫২ টাকা। মসুর ডাল পাইকারিতে ৮৫-৮৮ টাকা এবং খুচরায় ৮৯-৯২ টাকা।

তবে মুদি দোকানিরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে চিনি ও মসুর ডালের দাম বেড়েছে। দেশি মসুর ডাল ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকার জায়গায় এখন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর চিনির দাম বেড়েছে বস্তায় (৫০ কেজি) প্রায় ১০০ টাকা। ২৪৫০ টাকার জায়গায় এখন ২৫৫০ টাকায় চিনির বস্তা বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় প্রতিকেজি চিনির দাম এখন ৫৫ টাকা।

বাজারে এখন আমদানি করা রসুন প্রতিকেজি ১১০ টাকা, পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৩০ টাকা, বিভিন্ন ধরনের ছোলা প্রতিকেজি ৭৫ টাকা থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফার্মের মুরগির ডিম এখন প্রতি ডজন ৯০ টাকা, যা একমাস আগেও ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।

বড়বাগে ধুন্দুল কেজিপ্রতি ৫০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, জালি কুমড়া ৫০ টাকা, লতি ৫০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, পটল ও ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, দেশি শসা ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর