ঝিনাইদহের নলডাঙ্গায় পুলিশের সাথে এলাকাবাসির মতবিনিময়

ঝিনাইদহের নলডাঙ্গায় ইউনিয়নের পুলিশের সাথে এলাকাবাসির মতবিনিময়, হামলা ও চাঁদাবাজীর ভয়ে ঘরছাড়া মানুষের ঘরে ফেরার আকুতি জনগনের নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ঝিনাইদহ সদরের নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চত্তরে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সকাল ১১টায় শুরু হওয়া উম্মুক্ত আলোচনা সভায় জনসম্মুখে ইউনিয়নের আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময়ে ঝিনাইদহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া মনোযোগ দিয়ে ইউনিয়নের ভুক্তভোগীদের কথা শোনেন এবং আমলে নেন। উল্লেখ যে গত ১৬ মার্চ ঝিনাইদহের সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান কবির হোসেনের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। গড়িয়ালা গ্রামের ঝন্টুর নেতৃত্বে তাদের চারটি মোটরসাইকেল ভেঙ্গে দেয় তবে সেই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।

নলডাঙ্গা ইউনিয়নের এই জনপদটি সবসময়ে উত্তপ্ত থাকে রাজনৈতিক পরিমন্ডলের কারনে। বিভিন্ন সময়ের নির্বাচন বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে এই জনপদের মানুষগুলো ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠিতে বিভক্ত হওয়ার কারনে সামাজিক দ্বন্দ প্রকট রুপ ধারন করেছে। নির্বাচনের পর থেকে নলডাঙ্গা ইউনিয়নের বাগুটিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখনও পর্যন্ত বাড়ি ফিরতে পারেনি এমনটি অভিযোগ করা হয় পুলিশের নিকট।

বাগুটিয়া গ্রামের মুনসুর মন্ডলের ছেলে আলমগীর বলেন, এক বছর আমি বাড়ি ছাড়া আমার গ্রামের তুহিন, লিমন, চান্দা, রিংকু আমাকে বাড়িতে যেতে দিচ্ছেনা। কুবাদ আলীর ছেলে মিন্টু জানান, আমি মুরগী ব্যবসায়ী আমার জমিতে পানি দিতে পারিনি এমনকি আমাকে ধান কাটতে দেওয়া হচ্ছেনা, লিয়াকত দফাদারের ছেলে লতিফ জানান, চাদা না দিয়ে আমি গ্রামে যেতে পারব না। এ ছাড়া, কালু, মুক্তার বিশ্বাস, কুবাদ আলী মন্ডল, তাপু বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ছাড়া রিংকু, লিমন, চান্দা,ডলার,আরজু, রহমত, তুহিন এরা আমাদের বাড়িতে যেতে দিচ্ছেনা।

এসময় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ করে জানান, আমি এই ইউনিয়নে প্রায় তিন বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব খুব সুনামের সাথে পালন করে আসছি। কিন্তু একটি মহল এই ইউনিয়নের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড ও আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে ইউনিয়নের সহজ সরল মানুষেকে ভূল বুঝিয়ে দুটি গ্রুপে পরিনত করেছে। এরাই প্রতিনিয়ত আমার দলের লোক এবং আমার চাচা ইরফান বিশ্বাস বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে হেয় পতিপন্ন করার অপচেষ্ঠা চালিয়ে আসছেন। এটা এবার নির্বাচনের পরে প্রকট আকার ধারন করেছে ।

তারা বিভিন্ন সময় আমার লোকদের মারধরসহ চাঁদা দাবি করে আসছে। এদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় আমার এবং আমার চাচার নামে সাংবাদিক সম্মেলন করে সাংবাদিকদের নিকট ভূল তথ্য পরিবেশন করেছে । বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও ফেক আইডির ফেসবুক থেকে এমন এমন অপত্তিকর কথা লেখে যা আমার এবং আমার পরিবারের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম নষ্ট করার অপচেষ্টা করছে।

গুটি কয়েকজন লোক দলীয় পরিচয়ে সারা ইউনিয়নে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মারামারি সহ বিভিন্ন রকম অসামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। মোলা খানের নেতৃত্বে রিংকু, লিমন, চান্দা ও ঝন্টু, পিকুলসহ আরো অনেকে এদের এই গ্রুপ এমন কোন সন্ত্রাসী কাজ নেই যে তারা করে না। এরা কারও তোয়াক্কা করে না। এরা এলাকার অনেক সাধারন মানষুকে ভয় ভিতি দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে টাকা নিয়েছে এমন অভিযোগও করেন পুলিশ প্রশাসনের নিকট।

এদের অত্যাচারে বাড়ি ছাড়া বাগুটিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ, কুবাদ আলী মন্ডল, মিন্টু, আলমগীর, তাপুসহ অনেকে তারা বাড়ি ফিরে যাবার জন্য পুলিশ সুপারের সাহায্য কামনা করেন । চেয়ারম্যান কবির হোসেন পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ করেন কিছু দিন আগে ঝন্টুর নেতৃত্বে ৭/৮ জন হঠাৎ ইউনিয়ন পরিষদে এসে আমার ৪ টা মটরসাইকেল ভেঙে দেয়। এরা আওয়ামীলীগের কোন দলীয় লোক না বলে জানান নলডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইরফান বিশ্বাস। তিনি আরো জানান মোলা খাঁ এলাকায় আসার পর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেড়ে গিয়াছে । নির্যাতিতরা এদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

তিনি আরো বলেন গড়িয়ালা গ্রামের ঝন্টু নেতৃত্বে আমার পরিষদে হামলা করা হয়। অপরিচিত নাম্বার থেকে আড়মুখী গ্রামের মুলা খান আমাকে ফোন করে বলে তুই নলডাঙ্গা আই তোকে জবই করব এছাড়া বাগুটিয়া গ্রামের রিংকু, লিমন, তুহিন ছাড়া আরো অনেকে আমাকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। বেশ কয়েকটি গ্রামের নিরিহ মানুষদেরকে গ্রামে যেতে দিচ্ছে না। আমি সঠিক ভাবে ইউনিয়ন পরিষদে কাজ করতে পারছি না।এ ব্যাপারে থানা যুবলীগের সদস্য লিমন বিশ্বাস বলেন, আমরা কাউকে কোন বাধা প্রদান করছি না ইউনিয়নের মানুষ শান্তিতে আছে। চেয়ারম্যান কবির জনবিচ্ছিন্ন হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এসব নির্যাতিত মানুষের উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বলেন, আপনারা ঘরে ফিরে যেয়ে সংসারের কাজকাম করেন পরবর্তিতে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে পুলিশ আপনাদের আইনি সহায়তা অবশ্যই দিবে। আপনারা নির্ভয়ে বাড়ি যান। বর্তমান সরকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিপরিতে বিশাল অবস্থানে।
সন্ত্রাসীর কোন দল নেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে বাঁচার কোন সুযোগ নেই। আপনাদের উপর যদি কোন অন্যায় অত্যাচার হয় তাহলে পুলিশকে জানাবেন পুলিশ অবশ্যই আপনাদের পাশে থাকবে।

কেউ আইনের উধ্বে নয়, অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। আপনারা নিশ্চিন্তে বসবাস করুন প্রশাসন আপনাদের নিরাপত্তা দিবে। উন্মুক্ত আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, সদর সার্কেল কনক কুমার দাস, সদর থানা ওসি মিজানুর রহমান খান, এস আই রবি শংকন ,ক্যাম্পের আইসি আনোয়ার হোসেন, সদর থানা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক অহিদুজ্জামান খোকন, ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ইরফান বিশ্বাস, ইউনিয়ন আ’লীগের সাঃ সম্পাদক আবু জাফর ছাড়াও ইউনিয়ন আ’লীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ ও জনতার একাংশ।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর