কে এই মাসুদ আজহার?

জাতিসংঘ অবশেষে জইশ-ই-মোহাম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে তার নাম কালো তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই পুলওয়ামা হানার দায়ে তাকে জাতিসংঘের কালো তালিকায় ঢোকানোর প্রবল চেষ্টা করছিল ভারত। দীর্ঘ দুই দশক পর তাদের সে চেষ্টা সফল হয়েছে।

জইশ প্রধান মাসুদ আজহার এক সময় ওসামা বিন লাদেনের অতি ঘনিষ্ঠ সহকারী ছিলেন। বহু আফ্রিকান দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলায় মদত দিয়েছেন।

এই ৫০ বছর বয়সী জঙ্গি নেতার প্রভাব এতটাই বেশি যে, ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর আইসি-৮১৪ নামের বিমানটিকে হাইজ্যাক করে কান্দাহার বিমানবন্দরে দাঁড় করিয়ে রেখে দিয়েছিল। তার বিনিময়ে তৎকালীন ভারত সরকার মাসুদ আজহারকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সেই রাতে ওসামা বিন লাদেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে একটি ব্যাঙ্কোয়েট পার্টির আয়োজন করেছিলেন মাসুদ আজহারের ‘সম্মান’-এ।

১৯৯৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে জিহাদি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য মাসুদ আজহারকে গ্রেপ্তার করেছিলো ভারত সরকার। ওই সময় তার অন্যতম ডানহাত, ব্রিটিশ নাগরিক ওমর শেখ, তৎকালীন অতি কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-আনসারের সদস্য, ভারত থেকে পণবন্দি করেছিল চারজন পশ্চিমা পর্যটককে। তাদের দাবি ছিল, মাসুদ আজহারকে ছাড়ার পর তবেই ওই বিদেশি বন্দিদের ছাড়া হবে। যদিও, তাতে তখন তারা সফল হয়নি। গোয়েন্দারা ওই চার পণবন্দিকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে ওমর শেখের জিম্মা থেকে এবং গ্রেপ্তার করে ওই কুখ্যাত জঙ্গিকেও।

১৯৯৫ সালে ফের ৫ জন বিদেশি পর্যটকদের পণবন্দি করে হরকত উল আনসার মাসুদ আজহারকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি নিয়ে। পরে তাদের পাঁচজনকেই হত্যা করা হয়।

১৯৯৯ সালে কান্দাহারে বিমান হাইজ্যাক করার পর মাসুদ আজহারকে ছাড়তে বাধ্য হয় ভারত সরকার। তার কয়েকদিনের মধ্যেই ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ। ২০০০ সালের এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের বাদামি বাগ ক্যান্টনমেন্টে প্রথম আত্মঘাতী হামলা চালায় এই দলের সদস্যরা।

ওই হামলায় মানববোমা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল ২৪ বছর বয়সী আসিফ সাদিককে। মাসুদ আজহারের একদম প্রথম দিকে বাছাই করে তোলা পরে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা ভয়ঙ্কর জঙ্গি। সেও ছিল ব্রিটিশ নাগরিক। ওই সময় আল কায়দার বহু জঙ্গিকেও নিজেদের সংগঠনের কাজে ব্যবহার করতেন মাসুদ আজহার।

সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের পর যখন মাসুদ আজহার জখম হয়ে যায়, তারপর থেকেই তার মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায় হরকত-উল-আনসারে নতুন আসা ছেলেদের ‘উদ্বুদ্ধ’ করা। গত শতাব্দীর নয়ের দশকের শুরুতেই মাসুদ আজহার হরকত-উল-আনসারের মহাসচিব পদে বসেন। তারপর তার কাজ হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে জঙ্গি সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। ওই দেশগুলির মধ্যে ছিল- জাম্বিয়া, আবু ধাবি, সৌদি আরব, মঙ্গেলিয়া, গ্রেট ব্রিটেন এবং আলবেনিয়া।

১৯৯৩ সালে আল-কায়দা জঙ্গি অধ্যুষিত কেনিয়াতেও প্রবেশ করেন মাসুদ। সোমালিয়ায় দায়িত্বরত এক আল-কায়দা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গির সঙ্গে দেখা করার জন্য। ১৯৯৩ সালের আগস্ট মাসে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যে যান মাসুদ আজহার। তারপরই শুরু হয় সে দেশের সেই সব মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা, যারা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতে বিশেষভাবে দক্ষ। ১৯৯৩ সালে মাসুদ আজহার সাজ্জাদ আফগানির সঙ্গে আসেন বাংলাদেশে। ১৯৯৪ সালে ভারত থেকে যখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, সেই সময় তিনি ছিলেন হরকত উল মুজাহিদিন বা হরকত উল আনসারের সদস্য।

তার হামলাগুলোর মধ্যে আলোচিত হচ্ছে, ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সংসদ ভবনে হামলা; ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি পাঠানকোটে বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা এবং ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর উরিতে সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে হামলা। উরি হামলায় ভারতের ১৭ জওয়ান নিহত এবং আহত হয় আরো ৩০ জন।

এছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু কাশ্মীরের পুলওয়ামা হামলার পিছনেও মাসুদের দল এই জইশ-ই-মোহাম্মদের হাত রয়েছে বলে দাবি করে আসছে ভারত। ওই হামলায় ৪০ ভারতীয় জওয়ান নিহত হয়।

সূত্র: এনডিটিভি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর