ট্যারিফ পদ্ধতি ও প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখার পক্ষে এফবিসিসিআই

আগামী জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও এখনো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। অনেক বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিতে পারছেন না। বিশেষত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, ট্যারিফ পদ্ধতির ভ্যাট রাখা হবে কিনা, অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যবসায়ীদের প্যাকেজ পদ্ধতির ভ্যাট থাকবে কিনা, কেন্দ ীয়ভাবে নাকি এলাকাভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন হবে, একাধিক হারে ভ্যাটের ক্ষেত্রে রেয়াত ব্যবস্থা থাকবে কিনা কিংবা সেবা খাতের মূল্যভিত্তির পরিবর্তে কী হারে ভ্যাট নির্ধারিত হবে – এমন অনেক প্রশ্নের এখনো উত্তর নেই। অথচ আর দুই মাস পরেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বড় আকারের বাজেটপূর্ব সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পরামর্শক কমিটির ৪০তম ওই সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

এফবিসিসিআই সূত্র জানিয়েছে, আজকের আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে নতুন ভ্যাট আইন। ইতোমধ্যে এফবিসিসিআই একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। ওই প্রস্তাবেও ভ্যাটের অনেকগুলো ইস্যুতে এখনো সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হয়নি বলে উল্লেখ করেছে। এতে বলা হয়, ট্যারিফ ভ্যালুর পরিবর্তে ভ্যাটের হার নির্ধারণ, সেবা খাতে মূল্যভিত্তির পরিবর্তে কী হারে ভ্যাট নির্ধারিত হবে এবং সম্পূরক শুল্কসহ অব্যাহতির বিষয়ে সরকারের অবস্থান এখনো পরিষ্কার হয়নি। অন্যদিকে একাধিক হারে ভ্যাট নির্ধারণ করা হলে রেয়াত নেওয়ার বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। কেননা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করলে রেয়াত পাবে কিন্তু ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করলে রেয়াত দেওয়া না হলে তা ভ্যাটের বদলে আবগারি শুল্ক হিসেবে বিবেচিত হবে।

২০১২ সালে ভ্যাট আইন পাস করা হলেও আইনের বেশকিছু মৌলিক ইস্যুতে ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার কারণে তা এতদিনেও বাস্তবায়ন করা যায়নি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে আইনটি দুই বছরের জন্য স্থগিত করার পর এটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সংশোধন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ব্যবসায়ীরাও আইনটি বাস্তবায়ন করা হলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা পর্যায়ে কী ধরনের প্রভাব পড়বে- তা নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে গত দুই বছরেও এ ধরনের প্রভাব বিশ্লেষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সূত্র জানিয়েছে, আজকের আলোচনায় এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়টিও তুলে ধরা হবে। এফবিসিসিআইয়ের তৈরি করা প্রস্তাবে বলা হয়, বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও প্রভাব বিশ্লেষণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রভাব বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে কার্যকর ও যথার্থ পথনক্শা প্রণয়ন করা জরুরি। ভ্যাটের একাধিক হার বাস্তবায়ন করা হলে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতিসহ সার্বিক অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা বিশ্লেষণ করা জাতীয় স্বার্থে অত্যন্ত প্রয়োজন।

এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, আমদানি, উত্পাদন, সেবা ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট, ট্যারিফ ভ্যালু, প্যাকেজ ভ্যাট, সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্য (হ্রাসকৃত হারে) সম্পূরক শুল্ক, ট্যার্নওভার ট্যাক্স, অব্যাহতির তালিকা ব্যবস্থা আগামীতে অব্যাহত রেখে অনলাইনে নিবন্ধন, রিটার্ন দাখিল, ভ্যাট ফেরতসহ নিরীক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে রাজস্ব আদায় ও আইনের পরিপালন গতিশীল হবে। এতে ভ্যাট প্রদানকারীর সংখ্যাও বাড়বে।

অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে ভ্যাটের হার পাঁচ শতাংশ, সাড়ে সাত ও ১০ শতাংশ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী জুনের শুরুতে অর্থমন্ত্রী নতুন বাজেট ঘোষণা দেবেন।

ভ্যাট ছাড়াও ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমান আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা, কর্পোরেট করহার কমানোসহ আয়কর সংক্রান্ত বেশকিছু প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে এফবিসিসিআই।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর