টাঙ্গাইলে চাঁদাবাজীর অভিযোগে এস আই ক্লোজ

টাঙ্গাইলে পুলিশের এসআই ও সোর্সের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে গত রাতে সদর থানা ঘেরাও করে গ্রামের সাধারণ জনতা। আজ রোববার সকালে এ ঘটনায় এসআই জেসমিন আক্তারকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে সোর্স বক্কর হোসেনকে আটক করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার রাতে রক্ষিত বেলতা গ্রামের লোকজন প্রথমে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার প্রধান ফটকের সামনে এসআই জেসমিন আক্তার ও সোর্স বক্কর হোসেনের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভের পর থানায় ঢুকে অভিযোগ দেয়। এ ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, চলতি বছরের গত ২৮ মার্চ রক্ষিত বেলতা এলাকায় ছেলের সামনে রেজিয়া বেগম নামের এক প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা করে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে যায়। ওই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি থাকায় পুলিশ বিভিন্ন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরই ধারাবাহিকতায় এসআই জেসমিন আক্তার ও তার সোর্স বক্কর হোসেন কয়েকজনকে আটক করে মোটা অংকের টাকা নেয়ার অভিযোগ করে এলাকাবাসী।

শনিবার পুলিশের সোর্স বক্কর হোসেন রক্ষিত বেলতা এলাকায় হাজী আয়নাল হকের বাসায় গিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে কয়েকজনে মিলে বক্কর হোসেনকে আটক করা হয়।

খবর পেয়ে টাঙ্গাইল থানার এসআই জেসমিন আক্তার গিয়ে বক্কর হোসেনকে উদ্ধার করে ও সাধারণ মানুষকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসে। এরপরই ওই গ্রামের নারী-পুরুষরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তার চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শনিবার রাতে সদর থানা ঘেরাও করে।

রক্ষিত বেলতা গ্রামের বাসিন্দা হারেজ আলী বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষ। গত সপ্তাহে আমাকে ধরে থানায় নিয়ে আসে। পরে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে ছেড়ে দেয়।’

একই গ্রামের সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে এসআই জেসমিন আক্তার আটক করে। পরে আমরা ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়েছি। পুলিশ মূল আসামিকে আটক করে শাস্তি প্রদান করুন। তারা কেন সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে। আমি এসআই জেসমিন আক্তারের বদলি দাবি করছি।’

হাজী আয়নাল হক বলেন, শনিবার আসরের নামাজ পড়ে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় এসআই জেসমিনের সাথে দেখা হয়। তিনি গাড়ি থামিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমার নাম কি হাজী আয়নাল? আমি হ্যাঁ বলায় আমার নাম ঠিকানা তিনি খাতায় লিখে চলে যান। অপরদিকে আমার বাড়িতে পুলিশের সোর্স বক্কর হোসেন গিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করলে কয়েকজন মিলে বক্করকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করি। পরে জেসমিন আমাকেসহ এলাকাবাসীকে হুমকি-ধমকি দেয়। জেসমিন বলেন, বক্করের কিছু হলে এলাকার কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

আয়নাল হকের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কে বা কারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সেটি আমার জানা নেই। তবে পুলিশ অপরাধীদের না ধরে সাধারণ মানুষকে আটক করে টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়েও দেয়। এছাড়াও বক্কর হোসেন আমার বাড়িতে এসে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের টাকা দাবি করে। না দিলে বিভিন্ন হুমকি-ধমকিও দেয়। এর আগেও আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। আমরা এসব হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।’

তবে এসআই জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আমি দায়িত্ব পালন করেছি। আমার নামে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।’

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ‘ঘটনায় একটি ৩ সসদ্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ওই সোর্সকে আটক করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউর রহমান বলেন, রক্ষিত বেলতা ও পাইনা পানতা গ্রামের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত ঝগড়া চলে আসছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় রক্ষিত বেলতা এলাকায় গত মাসের ২৮ তারিখ এক নারীকে হত্যা করা হয়। সেই হত্যার কোনো ক্লু না পাওয়ায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইতিপূর্বে বেল্লাল মিয়া নামে একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

তিনি বলেন, শনিবার পুলিশের সোর্স বক্করকে ওই গ্রামের লোকজন আটক করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। সন্ধ্যার পর রক্ষিত বেলতা গ্রামের ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করতে আসলে তাদের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। তবে কেউ থানা ঘেরাও করেনি। সবাই মিলে অভিযোগ দিতে এসেছিলো।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর