পরীক্ষায় ফেল, ১৯ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা!

ভারতে অদ্ভুত কাজ কারবার ঘটতে থাকে প্রতিনিয়ত। এমন কোন দিন নেই যেখানে মারামারি, আহাজারি, হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনা ঘটে না। যতটা কাণ্ডবজ্ঞানহীন সে দেশের লোকজন, ততটা নির্লজ্জও তারা। মাঝে মাঝে মনে হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ সম্পন্ন হয় ভারতে। কখনো বাবার দ্বারা মেয়েকে নির্যাতন, কখনো ভাই দ্বারা বোনের ধর্ষণ আবার কখনো নিজের মায়ের সঙ্গে আত্নহননের খবর

প্রতিনিয়ত শোনা যায় সে দেশের সংবাদ মাধ্যমে। এতটা নীচে কীভাবে একটি জাতি নামতে পারে, তা কারোর হয়ত ধারণা নেই।
এইতো গেলো ভারতের কিছু অপ্রীতিকর গল্পকাহিনী। এর চেয়ে অনেক অন্যায় ঘটনা ঘটে ভারতে। কখনো কোন মেয়েকে গণধর্ষণ। আবার কখনো কোন নারীকে উলঙ্গ করে প্রকাশ্যে ঘুরানো, আবার কখনো জোটবদ্ধ হয়ে গলায় ফাঁস লাগানো এইসব ঘটনা এই দেশের নিত্যদিনের গল্প। এবার ঘটেছে এর চেয়ে নির্দয় একটি ঘটনা। হয়ত ঘটনাটি শুনলে আপনিও চমকে যাবেন। তাহলে শুনুন সে ঘটনাটি।

ঘটনাটি হল, ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সেখানে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরে রেজাল্ট প্রকাশিত হবার পর অনেক শিক্ষার্থী সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে অক্ষম হয়। এরপর তারা যে সিদ্ধান্তটি নেয়, তা শুনলে আপনিও অবাক হয়ে যাবেন। পরে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটিয়ে চলছে শিক্ষার্থীরা। গোটা রাজ্যজুড়ে এই আত্মহত্যায় তুমুল হইচই শুরু হয়েছে। জানা গেছে, গত ১৮ এপ্রিল তেলেঙ্গানায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সে পরীক্ষার ফলাফল বেশ খারাপ আসে। পরে পরীক্ষায় ফল প্রকাশের পর থেকে একের পর এক আত্মহত্যা করছেন শিক্ষার্থীরা। এই পর্যন্ত প্রায় ১৯ জনের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে সেখানে।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, মানসিক চাপ সহ্য না করতে পেরে এই ধরনের সিদ্ধান্ত বেছে নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আর রাজ্যের মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, পরীক্ষার তাড়াহুড়ো করে ফল প্রকাশের কারণে সঠিকভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ণ করতে পারেননি শিক্ষকরা। যার মাশুল গুণতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে এর মাশুল শিক্ষকরা কীভাবে নিবেন?

এর কোন পুনঃ উত্তর দেননি শিক্ষকরা। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণে হয়তো তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে, নয়তো মানসিক অবসাদে ভোগার কারণে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আবার অনেকেই বলছেন, শিক্ষকদের উপর রাগের বশবর্তী হয়ে তারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

শুধু এবার নয় এর আগেও এমন কাণ্ড ঘটেছে সেই রাজ্যে। এর আগে তেলেঙ্গানায় ২০১৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আত্মহত্যা করে ছয় শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেয়। এছাড়াও ঘরে বসে ফাঁস দেয় আরো দুই শিক্ষার্থী। তবে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে আত্মহত্যার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখন প্রশ্ন হলো, আত্নহত্যা কী এতই সহজ?

আগেই বলেছি, পৃথিবীর সব আকাম সম্ভব ভারতীয়দের। তারা যকোন কর্ম ঘটাতে পারে। বাস্তবে সেই দেশটিতে নৈতিকতার কোন ছোঁয়া নেই। তাই নৈতিকতা কী? সেটাই তারা বুঝে না। এদিকে, এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হওয়ার পর প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলছে এই আত্মহত্যার ঘটনা। এই প্রসঙ্গে তেলেঙ্গানা সরকারি জুনিয়র লেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মধুসুদন রেড্ডি জানিয়েছেন, কলেজ ও অভিভাবকদের থেকে মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপই শিক্ষার্থীদের এই ধরনের পথ বেছে নেওয়ার প্রধান কারণ।

তবে এত এত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কিছু ভুলের কারণে ওপারে চলে গেলো, তাদের কী কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে? এমন প্রশ্নের কোন উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি কলেজটির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। হয়ত কোন অবিভাবক থানায় লিখিত অভিযোগ করলে এর যথাযথ ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন, আর যদি কেউ অভিযোগ না করে তাহলে এইভাবে চলবে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে, সুইসাইড যে কোন সহজ ঘটনা নয়, সেটিও শিক্ষার্থীদেরকে বুঝা উচিত বলে মনে করছেন তেলেঙ্গানা সরকারি জুনিয়র লেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মধুসুদন রেড্ডি।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর