‘বনলতা এক্সপ্রেস’ট্রেনে যা যা সুযোগ সুবিধা থাকছে

কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই রাজশাহী-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচলের ব্যাপারে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল রাজশাহীবাসীর। আজ বৃহস্পতিবার সেই প্রত্যাশা পূরণ হলো।

বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বনলতা এক্সপ্রেস নামের বিরতিহীন ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। আগামী পরশু (শনিবার) থেকে ট্রেনটি পুরোপুরিভাবে চলাচল শুরু করবে।

উদ্বোধনী দিনে ট্রেনটি ১১টা ১০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে আয়োজিত অনুষ্টানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, শামসুল হক টুকু এমপি, মুনসুর রহমান এমপি, শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এমপি, বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর রহমান, রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি হাফিজুর রহমান, পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির, জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের প্রমুখ।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার শরিফুল আলম ট্রেন চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করবে।

তিনি বলেন, দ্রুতগতির বিরতিহীন আধুনিক এ ট্রেন পরিচালনার ফলে রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণের নিরাপদ আসা-যাওয়া সহজতর, দ্রুততর ও আরামদায়ক হবে। সংগৃহীত কোচসমূহের অন্যতম নতুন বৈশিষ্ট্য হলো—বায়ো-টয়লেট সংযোজন। বায়ো-টয়লেট সংবলিত কোচ দ্বারা বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর মধ্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব রেলব্যবস্থায় বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে গেল।

ট্রেনটিতে প্রতিবন্ধী যাত্রীদের হুইল চেয়ারসহ চলাচলের সুবিধার্থে থাকছে প্রশস্ত দরজা (মেইন ও টয়লেট দরজা) এবং নির্ধারিত আসনের সুবিধা। প্রতিটি কোচ স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এবং অত্যাধুনিক যাত্রীসুবিধা সংবলিত। প্রতিটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচে আধুনিক ও উন্নতমানের রুফ মাউন্টেড এয়ার কন্ডিশনার ইউনিট এবং এয়ার কার্টেইনের ব্যবস্থা রয়েছে।

নতুন আমাদানিকৃত কোচসমূহ স্টেইনলেস স্টিল বডির তৈরি। জার্মানির ডিজাইনে তৈরি উচ্চগতিসম্পন্ন বগি। জার্মানির তৈরি আধুনিক অটোমেটিক এয়ার ব্রেক সিস্টেম। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি লাইট। অজুখানাসহ নামাজ ঘর। সুইং ডোরের পরিবর্তে নিরাপদ স্লাইডিং ডোর। যাত্রী সাধারণের জন্য আধুনিক ও মানসম্মত চেয়ার, বার্থ, স্টেয়ার, পার্সেল রেক, টিভি মনিটর হ্যাঙ্গার, ওয়াই-ফাই রাউটার হ্যাঙ্গার, মোবাইল চার্জারের ব্যবস্থা রয়েছে। রুফ রাইডার কর্তৃক পথিমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ট্রেন থামানো রোধে বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত অ্যালার্ম চেইন পুলিং সিস্টেম। খাবার গাড়ির অত্যাধুনিক ডাইনিং সুবিধাদি রয়েছে গাড়িটিতে।

১২টি কোচ দ্বারা ট্রেনটি চলবে। এর মোট আসন সংখ্যা ৯২৮। এর মধ্যে এসি চেয়ার ১৬০টি, শোভন চেয়ার ৬৪৪, খাবার গাড়িতে আসন ১০৮ এবং পাওয়ার কারে ১৬টি। এটি শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন চলবে। ট্রেনটি রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছবে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকা থেকে ছাড়বে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে এবং রাজশাহী পৌঁছবে সন্ধ্যা ৬টায়।

ট্রেনের ভাড়া একই রুটে চলমান ট্রেনের ভাড়ার তুলনায় নন-স্টপ সার্ভিস চার্জ ১০ শতাংশ বেশি আরোপিত হবে। এ ছাড়া এই ট্রেনটিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রথম নিজস্ব ক্যাটারিং এন্ড ট্যুরিজম সার্ভিসেস (বিআরসিটিএস) দ্বারা খাবার সরবরাহ করা হবে। খাবার মূল্য ১৫০টাকাসহ শোভন চেয়ারের টিকিট মূল্য ৫২৫ টাকা এবং এসি চেয়ারের মূল্য ৮৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বনলতার সর্বাধুনিক হাইস্পিড কোচের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার। এতে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত গতিবেগ উঠবে না রাজশাহী-ঢাকা রুটের প্রথম ও একমাত্র বিরতিহীন এই ট্রেনের। নতুন ইঞ্জিন ও মজবুত ট্র্যাক পেলে এটি প্রতি মিনিটে আড়াই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হতো। ৩৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ট্রেনটি ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টায় পৌঁছাত গন্তব্যে।

রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ট্রেনটি পশ্চিমাঞ্চলবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার।

পুরোনো ইঞ্জিনের বিষয়ে তিনি বলেন, পুরোনো ইঞ্জিনেই ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ উদ্বোধন করা হচ্ছে। এর গতিবেগ শুরুতে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার না হলেও নতুন ইঞ্জিন যুক্ত করার পর ট্রেনটির গতিবেগ যথাযথ ওঠানো সম্ভব হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর