ব্যাপক সমালোচনার মুখে শমী কায়সার

সাংবাদিকদের ‘চোর’ সম্বোধন করায় অভিনেত্রী শমী কায়সারকে ঘিরে ফেসবুকে সৃষ্টি হয়েছে নানান আলোচনা ও সমালোচনা। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে দুটি স্মার্টফোন হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের চোর সম্বোধন করার পাশাপাশি প্রায় আধাঘণ্টা আটকে রাখেন শমী কায়সার।

পরে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে কেক নিয়ে আসা লাইটিংয়ের এক কর্মী শমী কায়সারের স্মার্টফোন দুটি নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ হওয়ার পর থেকেই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন এই অভিনেত্রী।

কেউ কেউ শমী কায়সারকে ক্ষমা চাইতে বলেন, ক্ষমা না চাইলে বয়কটের ঘোষণা দেন। কেউবা বলেন, এ ভুল ক্ষমার অযোগ্য। কেউবা আবার লিখেন, টাকা ও ক্ষমতার জোরে শমী কায়সার সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন।

সিনিয়র সাংবাদিক শংকর মৈত্র তার ফেসবুস পোস্টে লিখেছেন ‘প্রেসক্লাবে অভিনেত্রী শমী কায়সার যা করেছেন তা টাকা ও ক্ষমতার গরমে।’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক ও কলামিষ্ট পীর হাবীব লিখেছেন, ‘শমী কায়সারকে সাংবাদিক সমাজের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতেই হবে, নয় তাকে বয়কট করতে হবে। অভিনেত্রী ও ব্যবসায়ী শমী কায়সার জাতীয় প্রেসক্লাবে বসে পেশাগত দায়িত্বপালনরত সংবাদকর্মীদের আটকিয়ে নিজের দুটি স্মার্টফোন চুরির অভিযোগে নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে দেহ তল্লাশিই করাননি, তারা সংবাদকর্মীদের চোরও বলেন! পরে প্রকৃত চোর ধরা পরলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।’

‘শমী কায়সার ও তার নিরাপত্তাকর্মীদের ঔদ্ধত্য দম্ভ ও মিথ্যা অপবাদ অপমান দুঃখ প্রকাশেই শেষ হতে পারে না। তাকে গোটা সাংবাদিক সমাজের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, এবং তার নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাংবাদিক সমাজও এই অপমান সয়ে চুপ থাকতে পারে না। সাংবাদিকদের সংগঠন সমূহের নেতাদের বিবৃতি চাই। আজ কি কারো মানহানি হয়নি? গোটা সাংবাদিক সমাজের মানহানি হয় না??

আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি উম্মুল ওয়ারা লিখেছেন, ‘শমী কায়সারকে প্রকাশ্যে প্রেসক্লাবে এসে ক্ষমা চাইতে হবে। শমী কায়সারকে সাংবাদিকরা কেউ নায়িকা মনে করেন না। আমরা মনে করি শমী কায়সার আমাদের ঘরের মেয়ে। শহীদ সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে। শহীদুল্লাহ কায়সার গণমাধ্যমের পথিকৃৎ। আর আজ আমাদের প্রাণপ্রিয় ভাস্তি ঘরের মানুষগুলোকে চোর বানিয়ে ফেলেছেন।’

দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধ শেখ মামুনুর রশিদ লিখেছেন, ‘একজন সাংবা‌দিক অভাবী হতেই পা‌রে । বেতন নিয়‌মিত না পাওয়ায় কিংবা বেকার‌ত্বের কারণে সে ক‌ষ্টে থা‌কে। বাসা ভাড়া, বাচ্চার স্কু‌লের বেতন, বউয়ের বায়না মেটানো, বাবা-মা‌-ভাই-বোনের আবদার পূর‌ণে তার সক্ষমতা কম থাকতেই পা‌রে। হয়তো কেউ কেউ উপায় না পেয়ে দুই চার আনা আয়ের বিকল্প ধান্দাও করে । তাই বলে সে ‘চোর’ আ‌মি অন্তত বিশ্বাস ক‌রি না। চোর কারা, চ‌রিত্রহীন কারা, ধান্দাবাজ, দলবাজ, সুযোগসন্ধানী কারা- সমাজের মানুষ জা‌নে।’

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সিনিয়র রিপোর্টার ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী তার ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন ‘ছি, ছি! শমী কায়সার, আপনার ধৃষ্টতা দেখে লজ্জিত!’

একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মিল্টন আনোয়ার লিখেছেন ‘আসুন আমরা সাবেক অভিনেত্রী শমী কায়সারকে বয়কট করি।’

ঢাকাস্থ বরিশাল বিভাগীয় জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি ও ডিআরইউ-এর সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জামাল লিখেছেন ‘ছি ছি ছি শমী কায়সার।’

সিনিয়র সাংবাদিক ও ডিআরইউ-এর সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মইন উদ্দিন খান লিখেছেন, শমী কায়সারের মোবাইলে ধারণকৃত ‘গোপন’ এমন কী ছিল?

গতকালের ঘটনায় শমী কায়সার বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তার ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘গতকাল (২৪/০৪/১৯) এর ঘটনা এবং প্রিয় সাংবাদিক ভাইদের উদ্দেশ্য আমার কিছু কথা: ই-কমার্সভিত্তিক পর্যটন বিষয়ক সাইট ‘বিন্দু৩৬৫’র উদ্বোধনকালে বক্তব্য দিতে যাই আমি। বক্তব্য শেষ করে কেক কাটার সময়ই হঠাৎ দেখি- আমার স্মার্টফোন দু’টি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ফোন দু’টিতে কল দিয়ে তখনো সচল পাচ্ছিলাম। আসলে মুঠোফোন আমাদের সবার জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে সেখানে।

আমার এমন মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই মিলনায়তনের মূল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে আমার নিরাপত্তাকর্মী সবার দেহ তল্লাশি করতে চাইলে তাতে সম্মতি জানান উপস্থিত প্রিয় সংবাদকর্মী ভাইয়েরা। তখন কেউ কেউ তল্লাশিসাপেক্ষে বের হতে চাইলে, ‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী’ তাদের লাইনে সিরিয়ালি দরজার দিকে আসতে বলেন। এক সময় তার সাথে সাংবাদিক ভাইদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়, সে হয়তো কিছু বলে ওঠে।

এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে আসা সাংবাদিক ভাইয়েরা। এসময় অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও হয় সাংবাদিক ভাইদের। আমি স্বাভাবিক ভাবেই খুব আপসেট ছিলাম, কিন্তু আমি এমন কোনো অসম্মানজনক বক্তব্য দেইনি।

পরে কিছু সাংবাদিক ভাইদের ক্যামেরায় কিছু চলমান ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে কেক নিয়ে আসা লাইটিংয়ের এক কর্মী স্মার্টফোন দুটি নিয়ে গেছে।

এরপর আমি উপস্থিত সাংবাদিক ভাইদের প্রতি ‘দুঃখ প্রকাশ’ করি সাথে সাথে এবং প্রিয় সাংবাদিক ভাইদের সঙ্গে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে, যা আমার অনিচ্ছাকৃত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি নিজেও একজন প্রথিতযশা দেশবরেণ্য সাংবাদিকের সন্তান। অন্য কোনো উদ্দেশ্য আমার কখনো নেই এবং ছিল না… ধন্যবাদ। শমী কায়সার। ২৫/০৪/১৯’

গতকাল ২৪ এপ্রিল, প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে প্রায় অর্ধশত ফটো ও ভিডিও ক্যামেরা এবং শতাধিক মানুষের সামনে চুরি হয় শমী কায়সারের স্মার্টফোন দুটি। সে সময় ই-কমার্সভিত্তিক পর্যটনবিষয়ক সাইট ‘বিন্দু৩৬৫’-এর উদ্বোধনকালে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি। বক্তব্য শেষ করে কেক কাটার সময় হঠাৎ করেই তিনি জানান, তার স্মার্টফোন দুটি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ফোন দুটিতে কল দিয়ে তখনো সচল পাচ্ছিলেন তিনি।

ফোন দুটি চুরি যাওয়ায় প্রায় অর্ধশত সংবাদকর্মীকে আধ ঘণ্টারও বেশি আটকে রেখেছিলেন শমী কায়সার সে সময় তার নিরাপত্তাকর্মী সংবাদকর্মীদের দেহ তল্লাশিও করেন! এদিকে তল্লাশির পর কেউ কেউ বের হতে চাইলে ‘চোর’ও বলে ওঠেন সেই নিরাপত্তাকর্মী। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সংবাদকর্মীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানস্থলে।

এরপর সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে কেক নিয়ে আসা লাইটিংয়ের এক কর্মী স্মার্টফোন দুটি নিয়ে গেছেন। তারপর সাংবাদিকদের প্রতি ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেন শমী কায়সার। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। মুঠোফোনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে।’ এই পরিস্থিতিতে প্রধান অতিথি আসার আগেই অনুষ্ঠান সমাপ্ত করেন আয়োজকরা।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর